প্রফেসর ইউনূসের জাপান সফর: ঢাকা-টোকিও সম্পর্কের নতুন উচ্চতা

নোবেলজয়ী প্রফেসর ইউনূসের জাপান সফর বাংলাদেশ-জাপান সম্পর্ককে নতুন মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছে। পড়ুন বিস্তারিত বিশ্লেষণ, কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব। ছবিঃ সংগ্রহ
সফরের প্রেক্ষাপট ও তাৎপর্য
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি একটি বিশেষ আমন্ত্রণে জাপান সফর করেছেন, যা বাংলাদেশ ও জাপানের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। এই সফরটি ছিল মূলত সামাজিক ব্যবসা ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা কেন্দ্রিক, তবে এর কূটনৈতিক গুরুত্ব ছিল অনস্বীকার্য। প্রফেসর ইউনূসের মতো আন্তর্জাতিকভাবে সুপরিচিত একজন ব্যক্তিত্বের সফর জাপানের রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। এই সফরের মাধ্যমে ঢাকা-টোকিও সম্পর্ক নতুন মাত্রা পেয়েছে।
টোকিওতে প্রফেসর ইউনূসের বিভিন্ন কর্মসূচি
জাপানে অবস্থানকালে প্রফেসর ইউনূস একাধিক উচ্চপর্যায়ের সভা, সম্মেলন ও সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন। তিনি জাপানের অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এবং সামাজিক ব্যবসার ভবিষ্যৎ নিয়ে বক্তব্য রাখেন। বিশেষ করে টোকিও ইউনিভার্সিটিতে তার বক্তব্য তরুণ উদ্যোক্তা ও শিক্ষার্থীদের মাঝে সামাজিক উদ্যোক্তা হওয়ার প্রেরণা জাগায়। ইউনূস সেন্টার ও জাপানের বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার মধ্যে সহযোগিতার সম্ভাবনা নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়।
প্রফেসর ইউনূসের এই সফর শুধুমাত্র একাডেমিক বা সামাজিক পর্যায়ে সীমাবদ্ধ ছিল না; বরং এটি বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগ বৃদ্ধির সম্ভাবনা উন্মোচন করেছে। বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতি, কৃষিভিত্তিক ব্যবসা এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য জাপান এখন আগ্রহী হয়ে উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ইউনূসের সফর বাংলাদেশকে একটি উদীয়মান সামাজিক ব্যবসা প্ল্যাটফর্ম হিসেবে তুলে ধরতে সাহায্য করেছে, যা ভবিষ্যতে বড় আকারে বিনিয়োগের পথ খুলে দিতে পারে।
কূটনৈতিক সম্পর্ক ও উচ্চপর্যায়ের বৈঠক
সফরের সময় প্রফেসর ইউনূস জাপানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন, যেখানে তিনি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি, সামাজিক উদ্যোক্তাবাদের গুরুত্ব এবং ভবিষ্যৎ সহযোগিতার দিকগুলো তুলে ধরেন। এসব বৈঠকে দুই দেশের সম্পর্ক আরও গভীর করতে একাধিক উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা হয়। বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তন, শিক্ষাক্ষেত্রে বিনিময় কার্যক্রম এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা বিষয়ে দুই দেশের মধ্যকার আগ্রহ বৃদ্ধির বিষয়টি স্পষ্ট হয়।
মিডিয়া ও জনমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া
প্রফেসর ইউনূসের সফরকে ঘিরে জাপানি সংবাদমাধ্যমে ব্যাপক কভারেজ পাওয়া গেছে। তার ভাষণ ও বক্তব্য বিভিন্ন জাতীয় টেলিভিশন ও পত্রিকায় প্রকাশ পায়। ইউনূসের সামাজিক ব্যবসার দর্শন জাপানিদের মধ্যে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করে এবং বাংলাদেশ সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়। জাপানের সামাজিক উন্নয়ন সংগঠনগুলো এই সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করার নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে।এই সফরের সবচেয়ে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে তরুণ প্রজন্মের উপর। জাপানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা প্রফেসর ইউনূসের সঙ্গে সরাসরি মতবিনিময়ের সুযোগ পায় এবং তার ‘সামাজিক ব্যবসা’ ধারণা থেকে অনুপ্রাণিত হয়। তিনি বলেন, “তরুণদের হাতেই ভবিষ্যতের দুনিয়া”, যা জাপানি তরুণদের মধ্যে বাংলাদেশ ও ইউনূসের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও আগ্রহ তৈরি করে। এই সফর ভবিষ্যতে দুই দেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনিময় ও সহযোগিতার ক্ষেত্র তৈরি করতে পারে।