প্রবাসীদের অবদান বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অপরিসীম:

প্রবাসী কল্যাণ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রবাসীদের ভূমিকা অতুলনীয়। তিনি রেমিট্যান্স, বিনিয়োগ ও ভাবমূর্তি গঠনে তাদের অবদানকে সরকারিভাবে স্বীকৃতি দেন। ছবিঃ ডেইলি অবসাবের

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য: প্রবাসীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও স্বীকৃতি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক আন্তর্জাতিক প্রবাসী সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে প্রবাসী নাগরিকদের অবদানকে “অপরিসীম” ও “গর্বের বিষয়” হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, “প্রবাসীরা শুধু রেমিট্যান্স পাঠিয়েই নন, বরং তারা বিদেশে বসবাস করেও দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছেন।” শেখ হাসিনা এ সময় দেশপ্রেম, পরিশ্রম এবং দায়িত্ববোধের জন্য প্রবাসীদের প্রশংসা করেন এবং তাদের এই ভূমিকার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানান।

রেমিট্যান্স: দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর প্রবাসীরা দেশে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠান, যা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গঠনে ও সামষ্টিক অর্থনীতির ভারসাম্য রক্ষায় বড় ভূমিকা রাখে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর নির্ভর করেই আমরা অনেক ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পারছি। এটি দেশের বাজেটে অবদান রাখার পাশাপাশি গ্রামের অর্থনৈতিক চক্রেও প্রভাব ফেলে।”

প্রবাসী কল্যাণে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ

প্রবাসীদের সুবিধার্থে সরকার প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছে, যা সহজ শর্তে ঋণ দেয় এবং তাদের বিনিয়োগে উৎসাহিত করে। এ ছাড়াও বিভিন্ন দেশে শ্রম অফিস, দূতাবাসে প্রবাসী ডেস্ক, অনলাইন ভিসা ও কাজের নথি যাচাই সুবিধা চালু করা হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা চাই প্রবাসীরা যেন বিদেশে না শুধুমাত্র কাজ করেন, বরং সম্মানের সঙ্গে বাঁচেন এবং যেকোনো সমস্যায় সঙ্গে সঙ্গে দূতাবাস থেকে সহায়তা পান।

প্রবাসী শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ কার্যক্রম

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সন্তানদের শিক্ষা-সুবিধার কথাও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “যারা বিদেশে বসবাস করছেন, তাদের সন্তানেরা যেন বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে, সে জন্য আমরা বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি কমিউনিটি স্কুল ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করছি।” শেখ হাসিনা জানান, সরকারের এই উদ্যোগ প্রবাসী নতুন প্রজন্মকে দেশের শেকড়ের সঙ্গে যুক্ত রাখতে সাহায্য করছে।

প্রবাসী বাংলাদেশি

ছবি: রেসিং বিডি

বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি গঠনে প্রবাসীদের ভূমিকা

তিনি উল্লেখ করেন, প্রবাসী বাংলাদেশিরা বিভিন্ন দেশে দক্ষতা, সৎ পরিশ্রম ও নৈতিকতার মাধ্যমে ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি করছেন। তাদের কারণেই আজ বাংলাদেশ একটি শ্রমনির্ভর দেশ থেকে রপ্তানিমুখী ও প্রযুক্তিনির্ভর অর্থনীতিতে রূপান্তরিত হচ্ছে। “আপনারা বিদেশে বাংলাদেশকে সম্মানিত করেছেন,”—প্রধানমন্ত্রীর এই উক্তি তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রকাশ করে।

প্রবাসীদের বিনিয়োগে উৎসাহ

সরকার প্রবাসীদের দেশে বিনিয়োগে আগ্রহী করে তুলতে একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে। বিভিন্ন ইকোনমিক জোন, হাইটেক পার্ক ও রিয়েল এস্টেট খাতে প্রবাসীরা বিনিয়োগ করলে কর ছাড়, দ্রুত নিবন্ধন ও অন্যান্য প্রশাসনিক সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “আপনারা এখন শুধু রেমিট্যান্স পাঠান না, বরং উদ্যোক্তা হিসেবে দেশে ফিরে এসে কর্মসংস্থানের সুযোগও তৈরি করছেন।

প্রবাসী নারী কর্মীদের সুরক্ষা

নারী প্রবাসীদের নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে সরকার কূটনৈতিক ও প্রশাসনিক পর্যায়ে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত নারী শ্রমিকদের জন্য বিশেষ হেল্পলাইন, রেসকিউ টিম এবং সাইকো-সোশ্যাল সাপোর্ট সিস্টেম চালু রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জানান, “নারী প্রবাসীদের প্রতি সহিংসতা বা নির্যাতনের শিকার হলে সরকার তা কঠোরভাবে মোকাবিলা করছে এবং দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে বারবার উঠে এসেছে একটিই বার্তা—প্রবাসীরা বাংলাদেশের উন্নয়নের সঙ্গী, তাদের অবদান কখনোই অস্বীকার করার নয়। তিনি বলেন, “আমরা একটি উন্নত বাংলাদেশ গড়তে চাই, আর সেই পথচলায় প্রবাসীদের সহযোগিতা আমাদের প্রেরণা।” তিনি সকল প্রবাসীকে আরও শক্তভাবে দেশের সঙ্গে যুক্ত থাকার আহ্বান জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *