ফরিদপুরে বাস-মাহিন্দ্রা সংঘর্ষে ৫ নিহত, ৪ জন আহত: ঘটনাস্থলে শোকের ছায়া

ফরিদপুরের ভাঙ্গায় বাস ও মাহিন্দ্রা ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন ৫ জন, আহত হয়েছেন ৪ জন। জানুন দুর্ঘটনার বিবরণ, কারণ, প্রশাসনের পদক্ষেপ ও তদন্ত কার্যক্রম। ছবিঃ প্রথম আলো
ফরিদপুরে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনা: লাশে ভরে গেল মহাসড়ক
ফরিদপুরে এক হৃদয়বিদারক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত পাঁচজন, যাদের মধ্যে রয়েছেন নারী ও শিশুও। এছাড়াও আহত হয়েছেন আরও চারজন, যাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছে চিকিৎসকরা। আজ সকাল ৭টার দিকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ভাঙ্গা উপজেলার সৈয়দপুর নামক স্থানে একটি যাত্রীবাহী বাস এবং মাহিন্দ্রা পিকআপ ভ্যানের মধ্যে তীব্র গতির মুখোমুখি সংঘর্ষের মাধ্যমে এই দুর্ঘটনাটি ঘটে। দুর্ঘটনার পরপরই পুরো এলাকা স্তব্ধ হয়ে পড়ে, স্থানীয় বাসিন্দারা হতবিহ্বল হয়ে যান এবং দ্রুত প্রশাসনকে খবর দেন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় জানা যায়, মাহিন্দ্রা ভ্যানটিতে কয়েকজন যাত্রী স্থানীয় একটি হাটে যাওয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিল। বিপরীত দিক থেকে আসা বাসটি অত্যন্ত দ্রুতগতিতে আসছিল এবং নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সরাসরি মাহিন্দ্রার ওপর উঠে যায়। এত তীব্র সংঘর্ষে মাহিন্দ্রা ভ্যানটি একেবারে দুমড়ে-মুচড়ে যায়। অনেক যাত্রী গাড়ির ভেতরে আটকা পড়ে যান। দুর্ঘটনার ভয়াবহতা এতটাই ছিল যে, ঘটনাস্থলেই চারজন নিহত হন এবং আরও একজন হাসপাতালে নেওয়ার পর মৃত্যুবরণ করেন।
নিহত ও আহতদের পরিচয় প্রকাশ
নিহতদের মধ্যে একজন নারী, একজন শিশু ও তিনজন পুরুষ রয়েছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের নাম ও পরিচয় প্রকাশ করা হয়েছে, যদিও কিছু পরিবার এখনও হতাহতদের শনাক্ত করতে পারেনি। আহতদের মধ্যে একজন শিশু ও একজন প্রবীণ রয়েছেন, যাদের অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে। পরিবারগুলো বর্তমানে শোকসন্তপ্ত অবস্থায় রয়েছেন, এবং অনেকেই শোকে বাকরুদ্ধ।দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ভাঙ্গা হাইওয়ে থানা পুলিশ ও ফরিদপুর ফায়ার সার্ভিস দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। তারা প্রথমে যানজট নিয়ন্ত্রণ করে এবং আহতদের উদ্ধার করে চিকিৎসা কেন্দ্রে পাঠায়। দুর্ঘটনার কারণে প্রায় দুই ঘণ্টা মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে, যা পরে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়। পুলিশ বাস ও মাহিন্দ্রা উভয় গাড়ি জব্দ করেছে এবং দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
দুর্ঘটনার সম্ভাব্য কারণ: বেপরোয়া গতি ও চালকের অসাবধানতা
প্রাথমিক তদন্ত ও প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, দুর্ঘটনার মূল কারণ ছিল বাসটির বেপরোয়া গতি ও চালকের অসচেতনতা। এমনকি কিছু সূত্র জানিয়েছে যে, চালক মোবাইলে কথা বলছিলেন। এছাড়াও রাস্তার বক্রতা এবং নিয়ন্ত্রণহীনভাবে ওভারটেক করার প্রবণতাও দুর্ঘটনায় সহায়ক ভূমিকা রাখে। সড়কে পর্যাপ্ত ট্রাফিক মনিটরিং না থাকার ফলে এ ধরনের প্রাণঘাতী ঘটনা বারবার ঘটছে বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয়রা।
এই দুর্ঘটনা পুরো এলাকায় গভীর শোকের ছায়া ফেলেছে। নিহতদের পরিবার ও স্বজনরা বিলাপ করছেন এবং বহু মানুষ তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এবং নিহতদের পরিবারকে সান্ত্বনা দিয়েছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা এসেছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উদ্বেগ ও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।