ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর ভূমিকা স্পষ্ট করার আহ্বান সারজিসের

রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর স্পষ্ট অবস্থান ও কার্যক্রম দাবি করলেন সারজিস। জেনে নিন তার বক্তব্য ও এর প্রেক্ষাপট। ছবিঃ প্রথম এল ইংলিশ
বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও ফ্যাসিবাদের পুনরুত্থান
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা ও মানবাধিকারের ওপর চাপ বাড়ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিরোধী দল ও নাগরিক সমাজ বারবার ফ্যাসিবাদী শাসনের ইঙ্গিত দিয়ে আসছে, যার কারণে জনমনে অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে, রাজনৈতিক নেতা সারজিস সামরিক বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন—তারা যেন ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর ভূমিকা স্পষ্টভাবে প্রকাশ করে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে। তিনি মনে করেন, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সেনাবাহিনী কেবল সীমান্ত রক্ষাকারী নয়, বরং অভ্যন্তরীণ ন্যায়বিচার ও সাংবিধানিক আদর্শ রক্ষার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
সারজিসের বক্তব্যের মূল নির্যাস
সারজিস তার সাম্প্রতিক এক বক্তৃতায় বলেন, “এই সময়ে সেনাবাহিনী যদি নিরপেক্ষ না থেকে ন্যায়বিচারের পক্ষে অবস্থান না নেয়, তাহলে ফ্যাসিবাদ আরও বিস্তার লাভ করবে।” তিনি সরাসরি সেনাবাহিনীর কাছে জানতে চান, তারা বর্তমান সংকটকে কীভাবে দেখছে এবং জনগণের পক্ষে কার্যকর কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে কিনা। তার মতে, নীরবতা কখনোই নিরপেক্ষতা নয়—বরং এটি অন্যায়ের প্রশ্রয় দিতে পারে। এজন্য তিনি জনগণের নিরাপত্তা ও গণতন্ত্র রক্ষায় সেনাবাহিনীর সচেতন এবং স্পষ্ট ভূমিকাকে অত্যাবশ্যক মনে করেন।
ফ্যাসিবাদ মূলত একটি স্বৈরতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা যেখানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, মানবাধিকার ও ভিন্নমতকে দমন করা হয়। ইতিহাসের বিভিন্ন পর্বে দেখা গেছে, ফ্যাসিবাদ মানুষের জীবনকে অবর্ণনীয় দুর্দশার মধ্যে ফেলেছে। সারজিস আশঙ্কা প্রকাশ করেন, বর্তমানে বাংলাদেশে যেভাবে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব হচ্ছে, সংবাদপত্র ও নাগরিক আন্দোলনগুলো দমন করা হচ্ছে—তা এই শাসনব্যবস্থার প্রতি প্রবল ইঙ্গিত দেয়। তিনি বলেন, এর বিপরীতে দাঁড়ানোর সময় এখনই, এবং এজন্য ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সেনাবাহিনীর সাংবিধানিক দায়িত্ব
বাংলাদেশের সংবিধান সেনাবাহিনীকে একটি নিরপেক্ষ বাহিনী হিসেবে চিহ্নিত করেছে, যারা জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কিন্তু যখন রাজনৈতিক অস্থিরতা কিংবা মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ প্রবল হয়, তখন জনগণ আশা করে সেনাবাহিনী একটি নৈতিক অবস্থান গ্রহণ করবে। সারজিস এই বিষয়ে বলেন, দেশের স্বার্থে সেনাবাহিনীকে অবশ্যই বুঝতে হবে যে তাদের নিরপেক্ষতা যেন অন্যায়ের সাথে সমর্থনে পরিণত না হয়। তার মতে, সেনাবাহিনী জনগণের, কোনো একক দলের নয়।সারজিসের বক্তব্যের পরপরই নাগরিক সমাজে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। মানবাধিকার কর্মী, শিক্ষাবিদ এবং তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি এই আহ্বানকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তাদের মতে, এই সময়ে সেনাবাহিনী যদি সক্রিয়ভাবে মানবাধিকার ও ন্যায়বিচারের পক্ষে অবস্থান নেয়, তবে তা দেশের জন্য আশার আলো হয়ে উঠবে। তারা আরও বলেন, সারজিসের মতো নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের এমন স্পষ্ট বক্তব্য আরও সাহস যোগাবে জনগণকে।
আন্তর্জাতিক মহলের পর্যবেক্ষণ
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলও উদ্বিগ্ন। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা, জাতিসংঘ এবং পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো ইতোমধ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এই প্রেক্ষিতে সেনাবাহিনীর ভূমিকা আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সারজিসের বক্তব্যের পর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও বিষয়টি উঠে এসেছে। এতে বোঝা যায় যে, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর ভূমিকা কেবল অভ্যন্তরীণ নয়, বৈশ্বিক প্রভাব ফেলতে পারে।