বাংলাদেশের অর্থনীতি রক্ষায় দ্রুত সংস্কারের আহ্বান আইসিসিবির

আন্তর্জাতিক চেম্বার অব কমার্স, বাংলাদেশ (আইসিসিবি) দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় দ্রুত ও কার্যকর সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছে। ছবি: নিউ আগে
অর্থনীতির বর্তমান চ্যালেঞ্জ
বাংলাদেশের অর্থনীতি বর্তমানে বহুমুখী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাস, মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি, রপ্তানি ও রেমিট্যান্স প্রবাহে স্থবিরতা এবং ব্যাংকিং খাতে দুর্বলতা অর্থনীতিকে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে এসেছে। এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক চেম্বার অব কমার্স, বাংলাদেশ (আইসিসিবি) দ্রুত ও কার্যকর সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছে।
ব্যাংকিং খাতের দুর্বলতা
আইসিসিবি জানিয়েছে, ব্যাংকিং খাতে অব্যবস্থাপনা ও দুর্বল নিয়ন্ত্রণের কারণে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। এতে করে বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমেছে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে। ব্যাংকিং খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সংস্কার জরুরি।
আইসিসিবি সভাপতি মাহবুবুর রহমান জানান, দেশের ব্যাংকিং খাতে অপ্রদর্শিত ঋণের (NPL) পরিমাণ বেড়ে প্রায় ২.৯ ট্রিলিয়ন টাকা হয়েছে, যার প্রায় অর্ধেকই নয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে কেন্দ্রীভূত। এই পরিস্থিতি ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতা ও আমানতকারীদের আস্থার জন্য হুমকি স্বরূপ। তিনি ব্যাংকিং খাতে পূর্ণ সংস্কার, বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিতকরণ, এবং ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান।
রপ্তানি ও রেমিট্যান্স প্রবাহে স্থবিরতা
রপ্তানি আয় ও প্রবাসী আয় দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এই দুই খাতে প্রবৃদ্ধি কমে গেছে। আইসিসিবি মনে করে, রপ্তানি খাতের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং প্রবাসী আয় বাড়াতে নীতিগত সহায়তা প্রয়োজন।

ছবি: খবরের কাগছ
মুদ্রাস্ফীতি ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ
মুদ্রাস্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে। অন্যদিকে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাস পাচ্ছে, যা আমদানি ব্যয় মেটাতে সমস্যা সৃষ্টি করছে। এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় অর্থনৈতিক নীতিমালায় দ্রুত পরিবর্তন আনা জরুরি।
সংস্কারের প্রস্তাবনা
আইসিসিবি অর্থনীতির স্থিতিশীলতা রক্ষায় নিম্নলিখিত সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছে:
- ব্যাংকিং খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা
- রপ্তানি খাতের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বৃদ্ধি
- প্রবাসী আয় বাড়াতে নীতিগত সহায়তা প্রদান
- মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ
- বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি ও ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা আনা
জ্বালানি খাতের উন্নয়ন
আইসিসিবি শিল্প খাতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে জোর দিয়েছে। তারা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানির (বাপেক্স) সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে নতুন গ্যাস মজুদের অনুসন্ধান এবং ব্যয়বহুল এলএনজি ও এলপিজি আমদানির প্রয়োজনীয়তা কমানোর পরামর্শ দিয়েছে।
আইসিসিবি মনে করে, সঠিক নীতিমালা ও সংস্কারের মাধ্যমে বাংলাদেশ এশিয়ার একটি উজ্জ্বল অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হতে পারে। তবে, এর জন্য প্রয়োজন আর্থিক খাতের স্বচ্ছতা, আইনি পূর্বানুমানযোগ্যতা, এবং একটি স্থিতিশীল আইনগত পরিবেশ। তারা আরও উল্লেখ করেছে যে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা এবং ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা বাংলাদেশের জন্য অতিরিক্ত চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করছে, যা মোকাবিলায় সুসংহত কূটনৈতিক কৌশল প্রয়োজন।