FY25-এ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৩.৯৭% | বাংলাদেশের অর্থনীতি মহামারির পর ধীর গতিতে

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশ

বাংলাদেশের FY25 অর্থবছরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩.৯৭ শতাংশে, যা কোভিড-পরবর্তী সময়ের মধ্যে সর্বনিম্ন। বিশ্লেষকদের মতে, বৈদেশিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগে ধীর গতি এর প্রধান কারণ। ছবিঃ প্রবীণ দাস

প্রথম প্যারাগ্রাফ: FY25 অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সারসংক্ষেপ

২০২৫ অর্থবছরে (FY25) বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩.৯৭ শতাংশে। এটি মহামারিকালীন অর্থবছর FY21-এর পর দেশের সর্বনিম্ন প্রবৃদ্ধি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। জাতীয় হিসাব ব্যুরো (BBS)-এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে প্রকাশিত এই পরিসংখ্যান অর্থনীতিবিদ ও নীতিনির্ধারকদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।বিশেষজ্ঞদের মতে, FY25-এ প্রবৃদ্ধির এই ধীর গতির পেছনে মূলত বৈদেশিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগে স্থবিরতা দায়ী। বৈশ্বিক বাজারে চাহিদা কমে যাওয়ার ফলে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি খাত—তৈরি পোশাক শিল্প—চাপে পড়ে। পাশাপাশি সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ (FDI)-এর হারও উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে।

মুদ্রাস্ফীতি ও নীতিগত চ্যালেঞ্জ

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হ্রাসে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল দেশের অভ্যন্তরীণ মুদ্রাস্ফীতি। FY25 জুড়ে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করেছে এবং চাহিদা কমিয়ে দিয়েছে। এছাড়া ব্যাংক খাতে ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা কমে যাওয়াও বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।FY25-এ কৃষি খাতে কিছুটা স্থিতিশীলতা দেখা গেলেও শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি ছিল চরমভাবে হতাশাজনক। কারখানা উৎপাদন কমে যাওয়া, বিদ্যুৎ সংকট এবং কাঁচামাল আমদানিতে দেরি শিল্প খাতকে বিপর্যস্ত করেছে। এসব সমস্যার সমাধান না হলে ভবিষ্যতে প্রবৃদ্ধির গতি আরও ধীর হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

সরকারী ব্যয় ও রাজস্ব সংগ্রহ

সরকার FY25-এ অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ অব্যাহত রাখলেও রাজস্ব সংগ্রহ কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় পৌঁছায়নি। কর আদায়ের হার কম এবং ভর্তুকি ও ঋণ পরিশোধে ব্যয়ের চাপ বাড়ায় রাজস্ব ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এতে করে উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নেও ধীরতা এসেছে।বিশ্ব অর্থনীতিতে চলমান মন্দা, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতি, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি এবং সরবরাহ চেইনের বিঘ্ন বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলেছে। এই বৈশ্বিক অস্থিরতা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারকে আরও কঠিন করে তুলেছে বলে অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা মত প্রকাশ করেছে।

ভবিষ্যতের জন্য করণীয়

অর্থনীতির গতি বাড়াতে সরকারকে দীর্ঘমেয়াদী নীতিগত সংস্কার ও রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণের ওপর জোর দিতে হবে। একইসঙ্গে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরির জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও ব্যাংকিং খাতের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক। আইসিটি, কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াকরণ, এবং পরিবেশবান্ধব উৎপাদনে বিনিয়োগ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *