প্রাথমিক শিক্ষার বাজেট হ্রাস, মাদ্রাসা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি: আসন্ন বাজেটে বড় পরিবর্তন

প্রাথমিক শিক্ষা বাজেট

২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে প্রাথমিক শিক্ষার জন্য বরাদ্দ কমানো হচ্ছে। অন্যদিকে, মাদ্রাসা শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে। নতুন এই প্রবণতা শিক্ষানীতি ও কাঠামোতে পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। ছবিঃ সংগ্রহ

বাজেটের প্রাক্কালে শিক্ষায় পরিবর্তনের ইঙ্গিত

বাংলাদেশ সরকারের আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবনায় সবচেয়ে আলোচিত দিকগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো শিক্ষাখাতের বরাদ্দে দৃষ্টিগ্রাহ্য পরিবর্তন। প্রাথমিক শিক্ষায় বরাদ্দ হ্রাস এবং মাদ্রাসা শিক্ষায় বরাদ্দ বৃদ্ধি সরকারের নীতিগত অগ্রাধিকার বদলের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এমন একটি সময় যখন শিক্ষা খাতে বৈষম্য হ্রাস ও মানোন্নয়নের জন্য অর্থায়নের প্রয়োজনীয়তা সবচেয়ে বেশি, তখন এই পরিবর্তন নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।

সরকারি সূত্র অনুযায়ী, প্রাথমিক শিক্ষার খাতে ব্যয় হ্রাসের পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে বাজেট পুনর্বিন্যাস ও খরচ নিয়ন্ত্রণ। কিছু প্রকল্পে দেরি, শিক্ষক নিয়োগে স্থবিরতা এবং অবকাঠামো উন্নয়নে ধীরগতিকে কারণ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের জন্য প্রাথমিক শিক্ষাই ভিত্তি তৈরি করে। বাজেট কমলে মানসম্মত শিক্ষা, উপকরণ সরবরাহ এবং শিশুদের বিদ্যালয়ে ধরে রাখার প্রক্রিয়ায় নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

মাদ্রাসা শিক্ষায় বাজেট বৃদ্ধির কারণ ও প্রভাব

অন্যদিকে, মাদ্রাসা শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর বিষয়টি সরকারের ধর্মীয় শিক্ষায় অধিক গুরুত্ব দেওয়ার অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। সম্প্রসারণ প্রকল্প, শিক্ষক প্রশিক্ষণ, এবং নতুন কারিকুলামে তথ্যপ্রযুক্তি অন্তর্ভুক্তির জন্য অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এই খাতে অর্থায়ন বৃদ্ধি মাদ্রাসাগুলোর আধুনিকায়ন ও শিক্ষার্থীদের কর্মজীবনমুখী দক্ষতা অর্জনের দিকে এগিয়ে নিতে সহায়ক হতে পারে, তবে এটি প্রাথমিক শিক্ষার খরচে ভারসাম্যহীনতা তৈরি করতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের মত।

বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় দীর্ঘদিন ধরেই শহর ও গ্রাম, সাধারণ ও ধর্মীয় শিক্ষার মধ্যে বৈষম্য রয়েছে। এমন অবস্থায় প্রাথমিক শিক্ষার মতো একটি মৌলিক স্তরের বরাদ্দ কমিয়ে মাদ্রাসায় বরাদ্দ বাড়ানো হলে শিক্ষা সমতায় বিঘ্ন ঘটতে পারে। শিশুদের মৌলিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হওয়ার ঝুঁকি বাড়বে, বিশেষ করে দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে। তাই বাজেট প্রণয়নে সমতা ও ন্যায্যতার নীতি কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন হওয়া প্রয়োজন।

শিক্ষানীতি ও বাজেটের মধ্যে অসামঞ্জস্য

জাতীয় শিক্ষানীতিতে বলা আছে, সরকার প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক ও সর্বজনীন করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। কিন্তু বাস্তবে বাজেট কমিয়ে দিলে সেই অঙ্গীকার বাস্তবায়নের পথ কঠিন হয়ে পড়ে। একইসঙ্গে, কারিকুলাম সংস্কার, শিক্ষকের বেতন বৃদ্ধি ও ডিজিটাল শিক্ষা চালুর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো বাজেট সংকোচনের কারণে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়তে পারে। বাজেটের এই বৈসাদৃশ্য শিক্ষা ব্যবস্থার সামগ্রিক অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।সরকার মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে আধুনিক ও কর্মমুখী করার যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। তথ্যপ্রযুক্তি, বিজ্ঞান ও ইংরেজি বিষয়ের ওপর জোর দেওয়া হলে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরাও আধুনিক সমাজে কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে। তবে বাজেট বৃদ্ধির পাশাপাশি এর যথাযথ ব্যবহার, স্বচ্ছতা ও মূল্যায়ন পদ্ধতি নিশ্চিত করতে না পারলে কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যাবে না। মাদ্রাসা ব্যবস্থায় গুণগত উন্নয়নের সঙ্গে বাজেট খরচের সামঞ্জস্য জরুরি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *