বাংলাদেশ জাতীয় দলের নতুন পেস বোলিং কোচ শ্যান টেইট

অস্ট্রেলিয়ার সাবেক গতিতারকা শ্যান টেইটকে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের নতুন পেস বোলিং কোচ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে বিসিবি। তার অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের তরুণ পেসারদের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। ছবিঃ শাওন টেন
শ্যান টেইটের নিয়োগ নিশ্চিত করল বিসিবি
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছে যে অস্ট্রেলিয়ার সাবেক গতিতারকা শ্যান টেইটকে জাতীয় দলের নতুন পেস বোলিং কোচ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ক্রিকেটবিশ্বে “The Wild Thing” নামে পরিচিত টেইট তার সময়ে বিশ্বের অন্যতম দ্রুততম বোলার ছিলেন। তার বলের গতি প্রায়ই ১৫৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা অতিক্রম করত, যা তাকে এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দেয়। বিসিবি মনে করছে, টেইটের বাস্তব অভিজ্ঞতা ও আধুনিক প্রশিক্ষণ কৌশল বাংলাদেশের তরুণ পেসারদের জন্য দারুণ উপকারী হবে।
টেইটের খেলার অভিজ্ঞতা ও কোচিং দক্ষতা
টেইট তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ৩৫টি ওয়ানডে, ৩টি টেস্ট ও ২১টি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন এবং মোট ৯৫টি আন্তর্জাতিক উইকেট নিয়েছেন। খেলার মাঠে তার আগ্রাসী মানসিকতা এবং আউট-অফ-দ্য-বক্স বোলিং কৌশল অনেক সময় ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিত। খেলা থেকে অবসর নেওয়ার পর তিনি আফগানিস্তান, পাকিস্তান এবং কিছু ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে কোচ হিসেবে কাজ করেন। তাঁর কোচিং স্টাইল গতি, ফিটনেস এবং সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যভিত্তিক ট্রেনিংয়ের ওপর ভিত্তি করে, যা বাংলাদেশ দলের পেসারদের খেলায় নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে।
বাংলাদেশের পেস আক্রমণ এবং টেইটের সম্ভাব্য প্রভাব
বর্তমান বাংলাদেশ দলে বেশ কিছু প্রতিভাবান পেসার রয়েছেন, যেমন—তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলাম, এবাদত হোসেন, হাসান মাহমুদ ও মুক্তার আলি। তবে অনেক সময় দেখা যায়, তারা ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ব্যর্থ হন বা ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে কার্যকর হতে পারেন না। টেইটের দায়িত্ব হবে এই বোলারদের শরীরী ভাষা, আত্মবিশ্বাস, ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী লাইন-লেন্থ নির্বাচন এবং মানসিক প্রস্তুতির ওপর কাজ করা। তিনি যদি এই পেসারদের স্কিল ও মাইন্ডসেট ঠিকভাবে গড়ে তুলতে পারেন, তাহলে বাংলাদেশ দলের বোলিং বিভাগ আরও ধারালো হয়ে উঠবে।
বিসিবির দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও টেইটকে ঘিরে প্রত্যাশা
বিসিবি কয়েক বছর ধরেই পেস বোলিং বিভাগে নতুন জোয়ার আনার চেষ্টা করছে। এ লক্ষ্যে দেশব্যাপী স্পেশালাইজড ক্যাম্প, একাডেমিক ট্রেনিং ও হাই-টেক বিশ্লেষণ প্রয়োগ করা হচ্ছে। টেইটের মতো একজন আন্তর্জাতিক মানের কোচের মাধ্যমে তারা এই প্রক্রিয়াকে আরও শক্তিশালী করতে চায়। বিসিবির সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বলেন, “আমরা এমন একজন কোচ চেয়েছিলাম, যিনি আমাদের তরুণ পেসারদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি করতে পারেন। টেইট সেই জায়গাটিতেই পারদর্শী।

ছবিঃ ক্রিসিফেন্সর
উপমহাদেশের কন্ডিশনে টেইটের চ্যালেঞ্জ
বাংলাদেশের কন্ডিশন, বিশেষ করে ঘরের মাঠে, পেস বোলারদের জন্য খুব একটা সহায়ক নয়। শুকনো উইকেট, কম বাউন্স ও হিউমিড আবহাওয়ায় পেসারদের সফলতা অর্জন বেশ চ্যালেঞ্জিং। কিন্তু টেইট এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য ইতিমধ্যে পরিকল্পনা শুরু করে দিয়েছেন। তিনি পেসারদের সঙ্গে কাজ করে কন্ডিশন অনুযায়ী বোলিং স্কিল যেমন—রিভার্স সুইং, সিম পজিশন, ইয়র্কার ও বাউন্সার ব্যবহারের দক্ষতা বাড়াতে চান। তার মতে, সঠিক ট্রেনিং ও মানসিক প্রস্তুতি থাকলে এই প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠা সম্ভব।
টেইটের প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট ও ভবিষ্যৎ প্রস্তুতি
শ্যান টেইট তার দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই বাংলাদেশ দলের পরবর্তী সিরিজের জন্য প্রস্তুত হবেন, যেখানে দলটি মুখোমুখি হবে শক্তিশালী আন্তর্জাতিক প্রতিপক্ষের। এই সিরিজে তার কাজ হবে বোলারদের পর্যবেক্ষণ করা, দুর্বলতা চিহ্নিত করা এবং সেই অনুযায়ী প্রশিক্ষণ প্রদান। বিশেষ করে ২০২৫ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে সামনে রেখে তিনি একটি আক্রমণাত্মক ও পরিপক্ব পেস ইউনিট গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করবেন। তার কোচিং স্টাইল দলকে নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রস্তুত করতে পারে।
শ্যান টেইটের নিয়োগে ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ ও উৎসাহ দেখা গেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে প্রশংসা করে লিখেছেন যে এমন একজন গতি তারকা তরুণদের প্রেরণা হয়ে উঠবেন। অন্যদিকে, কেউ কেউ বলছেন যে বাস্তবিক ফল পেতে সময় লাগতে পারে, কারণ কোচ ও খেলোয়াড়দের মধ্যে বোঝাপড়া গড়ে তুলতে সময় লাগে। তবে সবাই একমত যে, পেস আক্রমণকে আরও কার্যকর করতে টেইটের মতো একজন বিশেষজ্ঞের বিকল্প নেই।