বাংলাদেশ বনাম জিম্বাবুয়ে টেস্টে মিরাজের শতক, বড় লিডে টাইগাররা এগিয়ে

ক্রিকেট বিশ্লেষণ

চট্টগ্রাম টেস্টে ব্যাট হাতে ঝলসে উঠলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তাঁর দারুণ শতকে ভর করে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে সংগ্রহ করল ৪৪৪ রান। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২১৭ রানের লিড পেয়ে স্পিনে চেপে ধরেছে সফরকারীদের। ম্যাচ বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা পড়ুন। ছবি: ডেইলি নিউস

মিরাজের শতকে রাঙানো টাইগারদের ইনিংস

চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত টেস্ট ম্যাচের তৃতীয় দিনটি ছিল একান্তই বাংলাদেশের। দিনের বড় নায়ক ছিলেন অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ। তিনি ১০৪ রানের এক দৃষ্টিনন্দন ইনিংস উপহার দেন, যা ছিল তার ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট শতক। ১৬টি চারের মাধ্যমে সাজানো এই ইনিংসটি শুধু ব্যক্তিগত কৃতিত্ব নয়, দলের জন্যও ছিল মহামূল্যবান। মিরাজের ইনিংস এমন সময়ে এসেছিল যখন বাংলাদেশ কিছুটা চাপে ছিল, এবং তার ব্যাটই বাংলাদেশকে ৪৪৪ রানের শক্ত ভিত গড়ে দেয়।

এক নজরে টাইগারদের ইনিংসের গুরুত্বপূর্ণ মোড়

মিরাজ ছাড়াও বাংলাদেশ ইনিংসে অবদান রেখেছেন ওপেনার জাকির হাসান ও মুমিনুল হক। জাকির শুরুতে ধীরস্থির ব্যাটিং করে দলের ভিত গড়ে দেন, আর মুমিনুল ছিলেন মাঝের দিকে নির্ভরযোগ্য এক ভরসা। তবে মিডল অর্ডারে কিছুটা ব্যর্থতা থাকলেও, মিরাজের কার্যকরী ইনিংস সেই ঘাটতি পুষিয়ে দেয়। ৮ নম্বরে নেমে তিনি যেভাবে একা হাতে ইনিংস টেনে নিয়ে গেলেন, তা তার মানসিক দৃঢ়তা এবং টেস্টে পরিণত ব্যাটসম্যান হিসেবে আত্মপ্রকাশের পরিচয় বহন করে।

ছবি: ক্রোকেট আড্ডিক্টের

স্পিনারদের আগুন ঝরানো শুরু

বাংলাদেশের ইনিংস শেষে যখন জিম্বাবুয়ে ব্যাট করতে নামে, তখন থেকেই শুরু হয় স্পিনারদের দাপট। তাইজুল ইসলাম নিজের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে শুরুতেই উইকেট তুলে নেন। তার ঘূর্ণি বলের সামনে বারবার বিভ্রান্ত হয়েছে জিম্বাবুয়ের ব্যাটাররা। নাঈম হাসানও যোগ দেন তাণ্ডবে। একপর্যায়ে মাত্র ১৭ রানেই তারা ৩ উইকেট হারায়। বাংলাদেশের বোলারদের এমন দাপট দেখে বোঝাই যাচ্ছে যে তারা দ্বিতীয় ইনিংসে প্রতিপক্ষকে একেবারে চাপে ফেলতে চাচ্ছে।

ম্যাচ পরিস্থিতি বিশ্লেষণ

এই মুহূর্তে ম্যাচের চিত্র বাংলাদেশের দিকেই একতরফাভাবে ঝুঁকে পড়েছে। প্রথম ইনিংসে ২১৭ রানের বিশাল লিড এবং এরপর জিম্বাবুয়ের টপ অর্ডারের ভেঙে পড়া—সব মিলিয়ে বলা যায় ম্যাচটি বাংলাদেশের দখলে চলে এসেছে। বাংলাদেশের কোচিং স্টাফ ও অধিনায়ক নিশ্চয়ই এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ইনিংস ও ১০০ রানের জয় নিশ্চিত করতে চাইবেন।

বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টিভঙ্গি

ক্রিকেট বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশের এই দাপুটে পারফরম্যান্স দলের আত্মবিশ্বাস আরও বাড়াবে। বিশেষ করে মিরাজের মতো একজন অলরাউন্ডার যখন এমন পরিস্থিতিতে শতক করেন, তখন তা দলের বাকি খেলোয়াড়দের জন্যও অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে। তাছাড়া স্পিন আক্রমণের ধারাবাহিকতা রক্ষায় তাইজুল, নাঈম ও মিরাজের ভূমিকা ভবিষ্যতের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।

যে গতিতে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে ম্যাচ জেতা এখন কেবল সময়ের ব্যাপার। জিম্বাবুয়ে যদি দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট হাতে অলৌকিক কিছু না করে, তবে বাংলাদেশ সহজেই ইনিংস জয়ে পৌঁছাবে। তবে এই ম্যাচটি মিরাজের ক্যারিয়ারে এক উজ্জ্বল অধ্যায় হয়ে থাকবে, আর বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসেও তা একটি স্মরণীয় ইনিংস হিসেবে চিহ্নিত হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *