বাংলাদেশের ৫৪টি বাজেট: তাজউদ্দিন থেকে সালেহউদ্দিন পর্যন্ত ইতিহাসের ধারাবাহিকতা

জাতীয় বাজেট

তাজউদ্দিন আহমদ থেকে শুরু করে সালেহউদ্দিন পর্যন্ত ৫৪টি বাজেটের বিশ্লেষণ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায়। এই ধারাবাহিকতায় উঠে এসেছে পরিবর্তন, চ্যালেঞ্জ ও উন্নয়নের গল্প। ছবিঃ প্রথম আলো রংলিশ

বাজেট ইতিহাসের সূচনা

বাংলাদেশের বাজেট ইতিহাস শুরু হয়েছিল ১৯৭২ সালে, দেশ স্বাধীন হওয়ার ঠিক পরপরই। দেশের প্রথম অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ সেই সময় যুদ্ধবিধ্বস্ত রাষ্ট্রের জন্য বাজেট পেশ করেছিলেন। তিনি মূলত খাদ্য নিরাপত্তা, পুনর্গঠন, ও মানবিক সহায়তায় জোর দেন। স্বাধীন বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ভিত্তি গড়ে তুলতে এই বাজেট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশ বাজেট ইতিহাস এই বাজেট থেকেই নিজের যাত্রা শুরু করে।

প্রাথমিক বাজেটের বৈশিষ্ট্য

শুরুর দিকে বাজেটের আকার ছিল ছোট, তবে নীতিগত দিক দিয়ে ছিল সুসংগঠিত। তাজউদ্দিন আহমদের বাজেটে ছিল দেশীয় উৎপাদন উৎসাহ দেওয়া, আমদানিনির্ভরতা কমানো এবং প্রাথমিক শিক্ষায় গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও বৈদেশিক সাহায্যের ওপর নির্ভরশীলতা থাকলেও, তাজউদ্দিনের বাজেট দেশকে আত্মনির্ভরশীলতার পথে হাঁটার দিশা দেয়।

সত্তরের দশকের শেষ ভাগ থেকে নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত সময়ে বারবার রাজনৈতিক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বাজেটের দৃষ্টিভঙ্গিতেও পরিবর্তন আসে। সামরিক শাসনের অধীনে যেসব বাজেট পেশ হয়, সেখানে অবকাঠামো উন্নয়নের ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। এ সময় কিছু বাজেটে জনকল্যাণের চেয়ে সামরিক খাতকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হয়, যা এক ধরনের ভারসাম্যহীনতা তৈরি করে।

গণতন্ত্রের প্রত্যাবর্তন ও জনমুখী বাজেট

১৯৯১ সালে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পর বাজেটগুলোতে জনকল্যাণ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ও সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর ওপর জোর দেওয়া শুরু হয়। অর্থমন্ত্রী হিসেবে সাইফুর রহমান দীর্ঘ সময় দায়িত্ব পালন করেন এবং তিনি কর ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও বাজেট প্রণয়নে পেশাদারিত্ব আনেন। বাংলাদেশ বাজেট ইতিহাস এই সময় থেকে একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভিত্তির দিকে ধাবিত হতে থাকে।

২০০৯ সালের পর বাজেটগুলোতে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ধারণা যুক্ত হয়। প্রযুক্তি, স্টার্টআপ, শিক্ষা এবং উদ্ভাবনের ওপর বরাদ্দ বাড়ে। বাজেট শুধু রাজস্ব আহরণ বা ব্যয় পরিকল্পনা নয়, একটি উন্নয়ন পরিকল্পনায় পরিণত হয়। মোবাইল ব্যাংকিং, ডিজিটাল ট্যাক্স সিস্টেম এবং অনলাইন রিটার্নের সুবিধা বাজেট প্রক্রিয়াকে আধুনিক ও স্বচ্ছ করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *