পেনাল্টিতে ভারতের কাছে হেরে রানার্সআপ বাংলাদেশ

ফাইনালে শ্বাসরুদ্ধকর লড়াইয়ের পর পেনাল্টি শুটআউটে ভারতের কাছে হেরে রানার্সআপ হলো বাংলাদেশ। টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দিয়েও শেষ হাসি হাসতে পারলো না লাল-সবুজের দল। ছবিঃ উএনবি
রুদ্ধশ্বাস ফাইনালের সমাপ্তি পেনাল্টিতে
বাংলাদেশ বনাম ভারত ফাইনাল ম্যাচটি ছিল উপমহাদেশীয় ফুটবলের এক অনন্য লড়াই। নির্ধারিত ৯০ মিনিট এবং অতিরিক্ত সময়েও কোনো দল জয়ের দেখা না পেয়ে ম্যাচ গড়ায় পেনাল্টি শুটআউটে। সেখানে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই শেষে বাংলাদেশ ভারতের বিপক্ষে পেনাল্টিতে পরাজিত হয়ে টুর্নামেন্টের রানার্সআপ হয়। ম্যাচটি শুধু ফলাফলের দিক থেকেই নয়, আবেগ, কৌশল এবং সাহসিকতার এক নিখুঁত মিশেল ছিল।
খেলার প্রথম মিনিট থেকেই দুই দলই রক্ষণ ও আক্রমণের ভারসাম্য রেখে খেলতে শুরু করে। বাংলাদেশ দল পজিশন ধরে রেখে বল কন্ট্রোলে রাখার চেষ্টা করলেও ভারতের রক্ষণভাগ ছিল শক্তিশালী। প্রথমার্ধে বেশ কয়েকটি গোলের সুযোগ তৈরি করলেও গোলপোস্টের সামান্য বাইরে চলে যাওয়ায় বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে পারেনি। ভারতের পক্ষ থেকেও পাল্টা আক্রমণ দেখা যায়, কিন্তু গোলরক্ষক ও ডিফেন্ডারদের চমৎকার সমন্বয়ে বাংলাদেশ গোল বাঁচাতে সক্ষম হয়।
দ্বিতীয়ার্ধে বদলে যাওয়া গতি ও রণনীতি
দ্বিতীয়ার্ধে কোচ পরিবর্তন আনেন খেলোয়াড়দের অবস্থানে, এবং বাংলাদেশ দল আরও বেশি আক্রমণাত্মক খেলা শুরু করে। মিডফিল্ড থেকে বল নিয়ন্ত্রণ করে দ্রুত উইং দিয়ে আক্রমণ তৈরি করা হয়। তবে ভারতের রক্ষণে ছিল রক্ষণাত্মক ব্লক যা বাংলাদেশের ফরোয়ার্ডদের ঠেকিয়ে দেয় বারবার। দুই দলই একাধিকবার গোলের কাছাকাছি গিয়ে ব্যর্থ হয়, ফলে নির্ধারিত সময় শেষে স্কোর থাকে ০-০।
অতিরিক্ত সময়েও দু’দল জয়ের জন্য মরিয়া হয়ে উঠে। খেলোয়াড়দের ক্লান্তি সত্ত্বেও তারা একের পর এক আক্রমণ চালাতে থাকে। বিশেষ করে বাংলাদেশ দলের ফরোয়ার্ড জিয়াউল এবং মিডফিল্ডার মঈনুল বেশ কয়েকটি চমৎকার মুভমেন্ট তৈরি করেন। একবার তো গোলরক্ষককে পরাজিত করেও বল পোস্টে লেগে ফিরে আসে। ভারতের পক্ষ থেকেও সুযোগ ছিল, তবে দু’পক্ষই গোলবঞ্চিত থাকে।
পেনাল্টিতে পরাজয়, কিন্তু গর্বের পারফরম্যান্স
শেষ পর্যন্ত খেলা গড়ায় পেনাল্টি শুটআউটে, যেখানে ভাগ্য মুখ ফিরিয়ে নেয় বাংলাদেশের দিক থেকে। প্রথম দুই শটে গোল করলেও, তৃতীয় ও চতুর্থ শটে ব্যর্থ হয় বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা। ভারতের গোলরক্ষকের অসাধারণ প্রতিরোধও ছিল এই পরাজয়ের অন্যতম কারণ। পেনাল্টি শুটআউটে ৪-২ ব্যবধানে জয় পায় ভারত। তবে সবার চোখে বাংলাদেশ দলের পারফরম্যান্স ছিল অনবদ্য ও সাহসী।
যদিও বাংলাদেশ ভারতের বিপক্ষে পেনাল্টিতে হার মানতে হয়েছে, তবুও পুরো টুর্নামেন্টে দলের পারফরম্যান্স ছিল অত্যন্ত প্রশংসনীয়। তরুণদের নিয়ে গঠিত এই দলটি ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভালো কিছু করার বার্তা দিয়েছে। ফুটবল বিশ্লেষক ও সমর্থকরা মনে করছেন, এই দলটি উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে এশীয় ফুটবলে একটি শক্তিশালী নাম হয়ে উঠতে পারে। বিশেষ করে রক্ষণভাগ ও গোলকিপিংয়ে যে দৃঢ়তা দেখা গেছে, তা দলের আত্মবিশ্বাস আরও বাড়াবে।
সমর্থকদের আবেগ ও প্রতিক্রিয়া
বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীরা গোটা ম্যাচজুড়ে দলের পাশে ছিলেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় হাজারো পোস্টে সমর্থন, ভালোবাসা ও গর্ব প্রকাশ পেয়েছে। অনেকে বলছেন, জয়ের চেয়ে বড় ছিল এই ম্যাচে লড়াই করার মানসিকতা। দেশের ক্রীড়াঙ্গনের অনেকেই এ দলকে ভবিষ্যতের শক্তি বলে উল্লেখ করেছেন এবং সরকারের পক্ষ থেকেও এই সাফল্যকে উৎসাহিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে।