বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বেআইনি পুশ-ইন বন্ধে বাংলাদেশের জোরালো দাবি

ভারতের সীমান্ত থেকে পুশ-ইন কার্যক্রম বন্ধে আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। সীমান্ত নিরাপত্তা, আন্তর্জাতিক আইন এবং কূটনৈতিক সম্পর্কের প্রেক্ষিতে বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে। ছবি: ডেইলি ষ্টার
সীমান্তে পুশ-ইন নিয়ে বাংলাদেশের উদ্বেগ
বাংলাদেশ সরকার সম্প্রতি ভারতের প্রতি সীমান্তবর্তী এলাকায় বেআইনি অনুপ্রবেশ বা ‘পুশ-ইন’ কার্যক্রম বন্ধ করার জোরালো আহ্বান জানিয়েছে। বাংলাদেশি সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিবি) ও সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (BSF) প্রায়শই বাংলাদেশে অবৈধভাবে লোকজনকে পাঠিয়ে দিচ্ছে। এই প্রক্রিয়ায় অনুপ্রবেশকারীদের অধিকাংশই ভারতেরই নাগরিক, যাদের পরিচয় যাচাই না করেই বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। ফলে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোর শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে এবং স্থানীয় জনগণের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে।
সরকারি সূত্র জানায়, এসব অনুপ্রবেশের ফলে স্থানীয় প্রশাসনকে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে, যা আর্থিক ও মানবসম্পদ উভয় দিক থেকেই দেশের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বাংলাদেশ স্পষ্ট করে বলেছে, এই ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধ না হলে সীমান্তে স্থায়ী অস্থিরতা তৈরি হবে এবং দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে কূটনৈতিক সম্পর্ক বিদ্যমান, তবে সীমান্ত সমস্যা বরাবরই দুই দেশের সম্পর্কের একটি সংবেদনশীল দিক। বিশেষ করে পুশ-ইন ইস্যুটি দুই দেশের মধ্যে বারবার আলোচনার কেন্দ্রে এসেছে। সর্বশেষ বৈঠকে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্পষ্ট ভাষায় ভারতীয় দূতাবাসের কর্মকর্তাদের জানিয়েছে যে, পুশ-ইন বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে এটি একটি বড় কূটনৈতিক সমস্যায় পরিণত হতে পারে।
বাংলাদেশ সরকার বলছে, সীমান্তে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান রক্ষা করার জন্য এই ইস্যুটিকে অবহেলা করা চলবে না। এর আগেও সীমান্তে এমন ঘটনা ঘটেছে যেখানে বাংলাদেশি বাহিনী অনুপ্রবেশকারীদের আটকে দিয়েছে এবং পরে তাদের পরিচয় যাচাই করে ফেরত পাঠানো হয়েছে। কিন্তু একতরফাভাবে এভাবে মানুষ পাঠিয়ে দেওয়া আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক প্রটোকলের পরিপন্থী। বাংলাদেশ সরকারের পরামর্শ, এই সমস্যার সমাধান হতে পারে যৌথ পর্যবেক্ষণ এবং নিয়মিত সীমান্ত বৈঠকের মাধ্যমে।
সীমান্তে নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি
সীমান্ত এলাকায় বেড়ে চলা অনুপ্রবেশ দেশের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিজিবি বলছে, অনেক অনুপ্রবেশকারী বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত, যেমন চোরাচালান, মানবপাচার, মাদক পরিবহন এবং অস্ত্র পাচার। এসব কার্যক্রম সীমান্ত এলাকার সামাজিক স্থিতিশীলতা এবং আইন-শৃঙ্খলার জন্য গুরুতর হুমকি।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই ধরনের অপরাধ রোধে শুধুমাত্র বাহিনী মোতায়েন করলেই হবে না, বরং ভারত-বাংলাদেশ উভয় দেশের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদানের একটি শক্তিশালী ব্যবস্থাও গড়ে তুলতে হবে। সীমান্তের দুই পাশে বসবাসরত জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য এই ধরনের সমন্বিত প্রচেষ্টা অপরিহার্য। বাংলাদেশ মনে করে, ভারত যদি এই ইস্যুতে আন্তরিকভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ না করে, তাহলে ভবিষ্যতে উভয় দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় বড় ধরণের প্রভাব পড়তে পারে।

ছবিঃ ডেইলি ষ্টার
মানবিক এবং আইনগত দিক বিবেচনার আহ্বান
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সীমান্তে এভাবে লোক ঠেলে দেওয়া আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ও অভিবাসন নীতির লঙ্ঘন। যারা এভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে, তাদের কোনো যাচাই-বাছাই হচ্ছে না এবং এতে মানবিক সঙ্কটও সৃষ্টি হচ্ছে। অনুপ্রবেশকারীদের মধ্যে অনেকেই খাদ্য, বাসস্থান ও চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত, ফলে বাংলাদেশকেই তাদের দায়িত্ব নিতে হচ্ছে।
এছাড়া বাংলাদেশে পাঠানো এসব ব্যক্তির মধ্যে কেউ কেউ ভারতে অপরাধমূলক কার্যক্রমে জড়িত ছিল বলেও তথ্য রয়েছে, যাদের আইনি বিচারের আওতায় না এনে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে চাপে পড়ছে এবং এই চাপ আরও বাড়তে পারে যদি অবিলম্বে পুশ-ইন বন্ধ না করা হয়। বাংলাদেশ সরকার ভারতকে এই বিষয়ে দায়িত্বশীল ও নৈতিক আচরণ প্রদর্শনের অনুরোধ করেছে এবং আন্তর্জাতিক নিয়মনীতি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে।
ভবিষ্যত কূটনৈতিক সমাধানের পথে অগ্রসর
বাংলাদেশ এই সংকটের সমাধানে শান্তিপূর্ণ কূটনৈতিক পথ বেছে নিয়েছে এবং ইতোমধ্যে ভারতের সাথে একাধিক পর্যায়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র অনুযায়ী, উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি যৌথ কমিটি গঠনের প্রস্তাব বাংলাদেশ দিয়েছে, যেখানে প্রতিটি অনুপ্রবেশের ঘটনা পর্যবেক্ষণ এবং প্রতিরোধে যৌথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
বাংলাদেশ চায়, প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক যেন বন্ধুত্বপূর্ণ ও টেকসই হয়। তাই ভবিষ্যতে সীমান্ত ইস্যুতে আরও স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং কার্যকর কৌশল অবলম্বনের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে যৌথ নিরাপত্তা কাঠামো গড়ে তুলতে পারলে এমন পুশ-ইন ইস্যু পুনরাবৃত্তি রোধ করা সম্ভব হবে বলে মনে করে বাংলাদেশ সরকার।