বাংলাদেশ সরকার এনবিআর বিলুপ্ত করে নতুন রাজস্ব কর্তৃপক্ষ গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে

বাংলাদেশ সরকার একটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR) বিলুপ্ত করেছে। নতুন রাজস্ব কাঠামোর মাধ্যমে কর ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও ডিজিটাল রূপান্তরের প্রত্যাশা করা হচ্ছে। ছবিঃ নিউ এইজ
এনবিআর বিলুপ্তির ঘোষণা: এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ
বাংলাদেশ সরকার সম্প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে—জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR) বিলুপ্ত করে একটি নতুন কাঠামো গঠনের লক্ষ্যে একটি অধ্যাদেশ জারি করেছে। এই সিদ্ধান্তটি দেশের রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
এনবিআর দীর্ঘদিন যাবৎ দেশের আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমস ব্যবস্থাপনার প্রধান সংস্থা হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিল। তবে সময়ের সঙ্গে সংগঠনের কার্যকারিতা ও কাঠামো নিয়ে নানা সমালোচনার মুখে সরকার এই সংস্কারের পথে এগিয়েছে।
নতুন কাঠামো: কোন মডেল অনুসরণ করা হবে?
সরকারের এই উদ্যোগের পেছনে মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে রাজস্ব আহরণ প্রক্রিয়াকে আরও আধুনিক, স্বচ্ছ ও প্রযুক্তিনির্ভর করে গড়ে তোলা। জানা গেছে, নতুন গঠিত রাজস্ব কর্তৃপক্ষ হবে একটি স্বতন্ত্র ও আধা-স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, যা আন্তর্জাতিক মানের মডেল অনুসরণ করে কাজ করবে।
এই নতুন কাঠামোতে স্বয়ংক্রিয় কর হিসাব, অনলাইন ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন, ই-ফাইলিং ও কাস্টমস অপারেশন ডিজিটাইজেশনের ওপর জোর দেওয়া হবে। এতে রাজস্ব আহরণে গতি আসবে এবং করপোরেট ও ব্যক্তিগত করদাতাদের জন্য প্রক্রিয়াটি সহজতর হবে।
এনবিআরের সীমাবদ্ধতা ও সংস্কারের পেছনের কারণ
বিগত কয়েক বছর ধরে এনবিআরকে ঘিরে নানা ধরনের দুর্নীতি, কর ফাঁকি, সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠছিল। কর আদায়ে লক্ষ্যপূরণে ব্যর্থতা, দীর্ঘসূত্রতা, এবং জবাবদিহিতার অভাব সরকারের অর্থনৈতিক নীতিমালার অন্যতম প্রতিবন্ধক হয়ে উঠছিল।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এনবিআরের আমলাতান্ত্রিক কাঠামো ও প্রযুক্তি ঘাটতি নতুন বিশ্ব অর্থনৈতিক বাস্তবতায় পিছিয়ে পড়ার অন্যতম কারণ ছিল। তাই এমন একটি আধুনিক, দক্ষ ও স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনা গঠনের প্রয়োজনীয়তা দীর্ঘদিন ধরেই অনুভব করা হচ্ছিল।
এই সিদ্ধান্তকে কেউ কেউ যুগান্তকারী ও সময়োচিত বলে স্বাগত জানালেও, অনেক অর্থনীতিবিদ এবং ব্যবসায়ী সংগঠন এই হঠাৎ পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, এনবিআর বিলুপ্তির পর নতুন কাঠামো কেমন হবে এবং তার বাস্তবায়নে কতটা দক্ষতা থাকবে, সেটাই হবে মূল চ্যালেঞ্জ।
বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো আশাবাদী হলেও, তারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্দেশিকা এবং পরিচালন কাঠামো জানতে আগ্রহী। অনেকে এই পরিবর্তনের মাধ্যমে কর ব্যবস্থায় সহজীকরণ এবং হয়রানিমুক্ত কর প্রদান নিশ্চিত হবে বলে আশা করছেন।

ছবিঃ নিউ এইজ
করদাতাদের জন্য কী পরিবর্তন আসতে পারে
এই সংস্কারের ফলে সাধারণ করদাতাদের অভিজ্ঞতায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে। অনলাইন ভিত্তিক কর পরিশোধ, স্বয়ংক্রিয় যাচাই ব্যবস্থা, এবং হেল্পডেস্ক সুবিধা করদাতাদের জন্য প্রক্রিয়াকে সহজ ও স্বচ্ছ করে তুলবে।
এছাড়া, কর সনদ সংগ্রহ, আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া এবং ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ায় ডিজিটাল রূপান্তর সময় ও খরচ বাঁচাবে। কর নেটওয়ার্ক বাড়ানোর লক্ষ্যে সরকার নতুন এই কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারবে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও রূপকল্প
নতুন রাজস্ব কর্তৃপক্ষ কবে নাগাদ কার্যক্রম শুরু করবে, তার বিস্তারিত পরিকল্পনা এখনও প্রকাশিত হয়নি। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, এটি ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে এবং এনবিআরের বিদ্যমান কর্মীদের একটি অংশ নতুন সংস্থায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
সরকার এই রূপান্তরের মাধ্যমে করজাল সম্প্রসারণ, রাজস্ব আদায়ে স্বচ্ছতা, এবং বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরির লক্ষ্য পূরণে অঙ্গীকারবদ্ধ। এই কাঠামো সফল হলে দেশের জিডিপি অনুপাতে রাজস্ব আদায়ের হার উল্লেখযোগ্য হারে বাড়তে পারে।
এনবিআর বিলুপ্ত করে নতুন রাজস্ব কাঠামো গঠনের সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে একটি সাহসী পদক্ষেপ। এটি কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশে কর ব্যবস্থায় একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে। তবে এর সঠিক বাস্তবায়ন, স্বচ্ছতা এবং দক্ষতা নিশ্চিত করাই হবে মূল চাবিকাঠি।