ম্যামালে বার্ড ফ্লু সংক্রমণ দ্বিগুণ: মানুষের জন্য বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

H5N1 ভাইরাস

সাম্প্রতিক এক বৈশ্বিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে বার্ড ফ্লু সংক্রমণ পূর্বের তুলনায় দ্বিগুণ বেড়েছে, যা মানুষের মধ্যে মহামারির আশঙ্কা আরও গভীর করছে। ছবিঃ এএফপি

একটি উদীয়মান বৈশ্বিক হুমকি
বার্ড ফ্লু বা H5N1 ভাইরাস দীর্ঘদিন ধরে মূলত বন্য ও পোষা পাখিদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ভাইরাসটির আচরণ ও সংক্রমণের ধরনে এক বিপজ্জনক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের মধ্যে স্তন্যপায়ী প্রাণীদের (ম্যামাল) মধ্যে এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। এই সংক্রমণ বিস্তার এখন আর শুধু একটি পশুবিদ্যার বিষয় নয়—এটি হয়ে উঠেছে জনস্বাস্থ্যের জন্য এক গুরুতর হুমকি। ভাইরাসটির চরিত্র ক্রমেই এমনভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে যা ভবিষ্যতে মানুষের মধ্যেও সহজে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ম্যামালদের মধ্যে ভাইরাস ছড়ানোর বিস্ময়কর গতি
সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, সমুদ্রের তীরে পাওয়া সিল, নদীর ধারে থাকা ভোঁদড়, জঙ্গল এলাকার ভালুক এবং এমনকি শহুরে পরিবেশে বসবাসরত বিড়ালদের শরীরেও H5N1 ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এসব প্রাণী পাখিদের সাথে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে সংস্পর্শে এসে সংক্রমিত হচ্ছে। শুধু তাই নয়, ভাইরাসটি ম্যামালদের শরীরের কোষে নিজেকে অভিযোজিত করে এমন এক স্তরে পৌঁছে যাচ্ছে, যেখান থেকে এটি মানুষের শরীরে প্রবেশ করতে পারলে ভয়ানক রূপ নিতে পারে। এই গতিতে সংক্রমণ চলতে থাকলে ভবিষ্যতে ভাইরাসটির রূপ আরও আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টিকোণ: মানুষের জন্য অদৃশ্য বিপদ
ভাইরাস বিশেষজ্ঞ ও সংক্রামক রোগ বিজ্ঞানীরা বলছেন, বার্ড ফ্লু সংক্রমণ এখন আর শুধু পশুদের ব্যাপারে সীমাবদ্ধ নেই। ম্যামালদের শরীরে ভাইরাসের উপস্থিতি মানুষের জন্য বড় ধরনের হুমকি সৃষ্টি করছে, কারণ স্তন্যপায়ী প্রাণীদের জীববৈজ্ঞানিক গঠন মানুষের অনেকটাই অনুরূপ। ভাইরাস যদি ম্যামালদের মধ্যেই শক্তিশালীভাবে অভিযোজিত হয়, তাহলে তা মানুষের মধ্যে আরও দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। এই প্রক্রিয়ায় ভাইরাসটি এমন জিনগত রূপান্তর ঘটাতে পারে যা মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণের সম্ভাবনাকে বাস্তব করে তুলবে।

অতীত অভিজ্ঞতা: মহামারির পূর্বাভাস
২০০৩ সালের সার্স এবং ২০১৯ সালের কোভিড-১৯ মহামারি দেখিয়েছে, কীভাবে পশু থেকে মানুষের দেহে ভাইরাস প্রবেশ করে বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সংকট তৈরি করতে পারে। এই ধরনের ঘটনা থেকেই শিক্ষা নিয়ে এখনই বার্ড ফ্লু সংক্রমণের ওপর নজর দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। যদি সময়মতো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে আমরা হয়ত আবারও একটি নতুন মহামারির সম্মুখীন হতে পারি, যা অর্থনীতি, শিক্ষা, চিকিৎসা ব্যবস্থা ও দৈনন্দিন জীবনযাপনকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *