বিউরোক্র্যাটিক দুর্নীতি কেন প্রকাশ পাচ্ছে না:

বিউরোক্র্যাটিক দুর্নীতি

ফারহাদ মাজার বিশ্লেষণ করেছেন কেন আমাদের দেশে সরকারি ব্যুরোক্র্যাটিক দুর্নীতি দীর্ঘদিন ধরে গোপন থাকছে। এই আর্টিকেলে বুঝতে পারবেন দুর্নীতির নানা কারণে কেন তা প্রকাশ পাচ্ছে না এবং কীভাবে পরিবর্তন আনা সম্ভব। ছবিঃ উএনবি

বিউরোক্র্যাটিক দুর্নীতি কেন প্রকাশ পাচ্ছে না: ফারহাদ মাজারের বিশ্লেষণ

বাংলাদেশের সরকারি প্রশাসন তথা বিউরোক্র্যাটিক সিস্টেমে দুর্নীতি একটি দীর্ঘমেয়াদী ও জটিল সমস্যা হিসেবে বিরাজমান। এটি শুধু একটি ব্যক্তির ভুল নয়, বরং এটি একটি কাঠামোগত সমস্যা যেখানে অনেক সময় দুর্নীতিবাজ কর্মকাণ্ড গোপন রাখার জন্য সামাজিক ও প্রশাসনিক নানা স্তরের সমর্থন বা নীরবতা কাজ করে। বিশিষ্ট লেখক ও চিন্তাবিদ ফারহাদ মাজার বলেন, দুর্নীতি প্রকাশের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিদের বিচার করা যথেষ্ট নয়; বরং পুরো প্রশাসনিক সংস্কৃতির পরিবর্তন জরুরি। তিনি সতর্ক করেন যে, যতোদিন না আমরা সরকারি সংস্থাগুলোর স্বচ্ছতা, দায়বদ্ধতা এবং জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবো, ততোদিন দুর্নীতি গোপন থাকার প্রবণতা থাকবে এবং সমাজে এর ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে না।

বিউরোক্র্যাটিক দুর্নীতি গোপন থাকার অন্যতম প্রধান কারণ হলো সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রচলিত অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা ও অবকাঠামোগত সমস্যা। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা তাদের ক্ষমতা ও প্রভাবের মাধ্যমে তথ্য লুকিয়ে রাখতে সক্ষম হন। অনেক সময় সরকারি দপ্তরে দুর্নীতি সংক্রান্ত তদন্তকারীদের ওপর সরাসরি বা পরোক্ষ চাপ প্রয়োগ করা হয়, যার ফলে সত্যের আবহাওয়া তৈরি হয় না। উপরন্তু, দুর্নীতি অনুসন্ধানকারী সংস্থাগুলোর স্বাধীনতা সীমাবদ্ধ, যার কারণে তারা যথাযথ তদন্ত করতে পারে না। এই দুর্বলতা দুর্নীতির সত্য উদ্ঘাটনে প্রধান প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করে, ফলে দুর্নীতির খবর সঠিক সময়ে জনগণের কাছে পৌঁছায় না এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয় না।

বিশেষ করে বড় ধরনের দুর্নীতির ঘটনা প্রকাশের সময়

ফারহাদ মাজারের মতে, গণমাধ্যমের ভূমিকা দুর্নীতি উন্মোচনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও, সেখানে নানা প্রতিবন্ধকতা বিদ্যমান। গণমাধ্যম স্বাধীনতা থাকলেও অনেক সময় ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যক্তিদের চাপের কারণে সাংবাদিকেরা দুর্নীতির ঘটনা প্রকাশ করতে সাহস পান না। বিশেষ করে বড় ধরনের দুর্নীতির ঘটনা প্রকাশের সময় সাংবাদিকদের নিরাপত্তা আশঙ্কা থাকে। এ কারণে অনেক দুর্নীতি সংবাদ প্রকাশ না হয়ে থাকে, যা দুর্নীতিবাজদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়। তিনি বলছেন, গণমাধ্যমকে স্বাধীন ও নিরাপদ পরিবেশ প্রদান করা দরকার যাতে তারা জনগণের সামনে সত্যি ঘটনা তুলে ধরতে পারে এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টি হয়।

আইন ও বিচার ব্যবস্থার দুর্বলতাও দুর্নীতি প্রকাশে বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করে। ফারহাদ মাজারের বক্তব্য অনুযায়ী, অনেক সময় দুর্নীতির বিরুদ্ধে মামলা হয় কিন্তু সেগুলো দীর্ঘ সময় বিচার ব্যবস্থায় আটকে থাকে, অথবা দমনমূলক প্রক্রিয়া চলে। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণে দেরি হলে জনগণের মধ্যে হতাশা ও অবিশ্বাস তৈরি হয়, যা দুর্নীতি প্রতিরোধে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এছাড়া বিচার বিভাগের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা না থাকায় দুর্নীতি মোকাবেলায় কাঙ্ক্ষিত ফলাফল আসছে না। তাই দ্রুত, স্বচ্ছ ও ন্যায়পরায়ণ বিচার ব্যবস্থা গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি।

দুর্নীতি প্রকাশে সাধারণ জনগণের সচেতনতা এবং ভূমিকা অপরিহার্য।

দুর্নীতি প্রকাশে সাধারণ জনগণের সচেতনতা এবং ভূমিকা অপরিহার্য। ফারহাদ মাজার বলেন, অনেক সময় সাধারণ মানুষ দুর্নীতির খবর পেয়ে থাকলেও সামাজিক প্রভাব, ভয় বা স্বার্থান্বেষী কারণে সেই তথ্য প্রকাশে অনাগ্রহী হয়। এর ফলে দুর্নীতির ঘটনা সমাজের নিচুতলায় থেকে যায় এবং সংশ্লিষ্টরা তাদের অপরাধ চালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। জনসাধারণের এই নীরবতা দুর্নীতি বিস্তারকে উৎসাহিত করে। মাজার আরও বলেন, সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষকে দুর্নীতি মোকাবেলায় সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে এবং দুর্নীতি সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশে সাহসী হতে হবে, যাতে প্রশাসনিক দুর্নীতি সঠিকভাবে চিহ্নিত ও সমাধান করা যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *