আগামী নির্বাচনের আগে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা অপেক্ষায়

বিদেশি বিনিয়োগ

বিএনপির নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ থেকে বিরত থাকবে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বিনিয়োগের পরিবেশকে প্রভাবিত করছে। পড়ুন বিস্তারিত। ছবিঃ ডেইলি ষ্টার

রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার প্রভাবে বিনিয়োগে স্থবিরতা

বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশে এক ধরণের অচলাবস্থা সৃষ্টি করেছে। দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে তীব্র দ্বন্দ্ব, সংসদীয় কার্যক্রমে অংশগ্রহণের ঘাটতি এবং নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে মতবিরোধের কারণে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বর্তমান সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয় বলেই বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আস্থা হারাচ্ছেন। তারা নিশ্চিত হতে চান যে, পরবর্তী নির্বাচন স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হবে। এই পরিস্থিতিতে তারা ধৈর্যের সঙ্গে অপেক্ষা করছেন, যেন বিনিয়োগের উপযুক্ত সময় নির্ণয় করতে পারেন।

বৈদেশিক বিনিয়োগ হ্রাস পাচ্ছে

সম্প্রতি বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য একটি সতর্ক সংকেত। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (BIDA) প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিগত এক বছরে অনুমোদিত বিদেশি প্রকল্পের সংখ্যা ও পরিমাণে বড় রকমের পতন দেখা গেছে। এই ধারা শুধু যে বিনিয়োগকারীদের অনাগ্রহকে প্রকাশ করে তা নয়, বরং দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার অভাবে প্রযুক্তি, অবকাঠামো, জ্বালানি ও উৎপাদন খাতে নতুন বিনিয়োগ থমকে গেছে। এমনকি পুরনো বিনিয়োগকারীরাও নিজেদের কার্যক্রম সীমিত করে ফেলেছেন। এসব তথ্য বর্তমান পরিস্থিতির গভীরতা বুঝতে সাহায্য করে।

বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট

আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা সাধারণত দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীল ও নিরাপদ বিনিয়োগ পরিবেশ প্রত্যাশা করেন। বাংলাদেশে বর্তমানে রাজনৈতিকভাবে একপাক্ষিক সরকার এবং নাগরিক অধিকার হরণের অভিযোগ বিনিয়োগকারীদের মনে শঙ্কা সৃষ্টি করেছে। আমীর খসরু বলেন, বিনিয়োগকারীরা চায় গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও ন্যায়ের ভিত্তিতে পরিচালিত একটি প্রশাসন, যাতে তাদের অর্থ সুরক্ষিত থাকে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে এসব শর্ত পূরণ হচ্ছে না বলেই তারা বিনিয়োগে পিছিয়ে আসছেন। পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী নানা অর্থনৈতিক চাপের মধ্যেও বাংলাদেশে বিনিয়োগ নিয়ে তারা দ্বিধায় আছেন।

 আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী

ছবিঃ ডেইলি সুন্

নির্বাচনকেন্দ্রিক উত্তেজনা ও অর্থনৈতিক প্রভাব

আগামী নির্বাচনকে ঘিরে দেশে যে রাজনৈতিক উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, তা বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি বড় অনিশ্চয়তা তৈরি করছে। নির্বাচনকালীন সরকারের কাঠামো, রাজনৈতিক দলগুলোর সংঘাতপূর্ণ বিবৃতি, বিক্ষোভ-ধর্মঘট ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি তাদেরকে আরও সতর্ক করে তুলেছে। এই উত্তেজনার ফলে শুধু বিদেশি নয়, দেশীয় ব্যবসায়ীরাও নতুন প্রকল্পে হাত দিচ্ছেন না। এর ফলে বড় বড় অবকাঠামো প্রকল্প, শিল্প প্রতিষ্ঠান ও প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ স্থবির হয়ে পড়েছে, যার সরাসরি প্রভাব পড়ছে কর্মসংস্থান ও জাতীয় প্রবৃদ্ধির ওপর।

আমীর খসরুর আন্তর্জাতিক বার্তা

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী তার বক্তব্যে স্পষ্টভাবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী সম্মানিত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং রাজনৈতিক সমাধান না হলে তারা এখানে বিনিয়োগ করবে না। এই মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি সরকারকে দায়ী করার পাশাপাশি বিদেশি অংশীদারদের সচেতন বার্তা দিয়েছেন যে, একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনী প্রক্রিয়া না থাকলে বাংলাদেশের বাজার আকর্ষণীয় থাকলেও বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ রয়ে যাবে। ফলে আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক বার্তা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও তৈরি হচ্ছে।

টেকসই অর্থনীতির জন্য রাজনৈতিক সমঝোতা জরুরি

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে টেকসই করতে হলে রাজনৈতিক সমঝোতা ও গণতান্ত্রিক চর্চা নিশ্চিত করতে হবে—এমনটাই মনে করছেন দেশের অর্থনীতিবিদ ও বিনিয়োগ বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগের জন্য প্রয়োজন আইনের শাসন, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা। দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা এ সকল বিষয়কে দুর্বল করে দিয়েছে। রাজনৈতিক পক্ষগুলো যদি একটি গ্রহণযোগ্য ফর্মুলায় পৌঁছাতে পারে, তবে বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরায় ফিরে আসবে এবং দেশ আবার অর্থনৈতিক অগ্রগতির পথে এগোবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *