বিশ্ব প্রেস স্বাধীনতা সূচকে বাংলাদেশের ১৬ ধাপ অগ্রগতি

২০২৫ সালের বিশ্ব প্রেস স্বাধীনতা সূচকে বাংলাদেশ ১৬ ধাপ এগিয়ে ১৪৯তম স্থানে উঠে এসেছে। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূচকে উন্নতির ফলে এই অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। ছবি: প্রথম আলো
বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি
২০২৫ সালের বিশ্ব প্রেস স্বাধীনতা সূচকে বাংলাদেশ ১৬ ধাপ অগ্রগতি অর্জন করে ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৪৯তম স্থানে উঠে এসেছে। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (RSF) এই সূচক প্রকাশ করেছে, যা প্রতি বছর ৩ মে বিশ্ব প্রেস স্বাধীনতা দিবসে প্রকাশিত হয়।
গত বছর, ২০২৪ সালে, বাংলাদেশ ১৬৫তম স্থানে ছিল। ২০২১ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশের অবস্থান অবনতি হচ্ছিল, তবে এবার সেই ধারা পরিবর্তন হয়েছে। RSF-এর মতে, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, আইনি, সামাজিক ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা—এই পাঁচটি সূচকে বাংলাদেশের স্কোর উন্নত হয়েছে।
সূচকের পেছনের কারণসমূহ
RSF-এর বিশ্লেষণে দেখা যায়, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সূচকে স্কোর ১৯.৩৬ থেকে বেড়ে ২৯.০৩ হয়েছে। অর্থনৈতিক সূচকে ২৭.৮৩ থেকে ৩৩.৭৯, আইনি সূচকে ৩১.৩২ থেকে ৩৬.৭১, সামাজিক সূচকে ৩২.৬৫ থেকে ৩৯.৮৭ এবং নিরাপত্তা সূচকে ২৭.০৩ থেকে ২৯.১৭ হয়েছে।
এই উন্নতির পেছনে রয়েছে সরকারের পরিবর্তন, নতুন আইনের প্রণয়ন এবং সাংবাদিকদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টির প্রচেষ্টা। বিশেষ করে, ২০২৪ সালের আগস্টে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা
পূর্ববর্তী সরকারগুলোর সময় সাংবাদিকরা বিভিন্ন ধরনের হুমকি ও নির্যাতনের শিকার হতেন। সেন্সরশিপ, সাইবার হয়রানি, সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার চাপ, বিচারিক হয়রানি এবং কঠোর আইন সাংবাদিকদের কাজকে কঠিন করে তুলেছিল। তবে নতুন সরকারের অধীনে এই পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।
সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নতুন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে এবং পুরনো কঠোর আইনগুলো সংশোধন করা হয়েছে। এর ফলে সাংবাদিকরা এখন আরও স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছেন।
আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অবস্থান
বিশ্বব্যাপী প্রেস স্বাধীনতা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান উন্নত হলেও, এখনও অনেক দেশ বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। তবে, প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের অগ্রগতি উল্লেখযোগ্য।
উদাহরণস্বরূপ, ভারত ৮ ধাপ অগ্রগতি অর্জন করে ১৫১তম স্থানে রয়েছে, আর পাকিস্তান ৬ ধাপ পিছিয়ে ১৫৮তম স্থানে নেমে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্র ৫৭তম স্থানে রয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় ২ ধাপ নিচে।
ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা
যদিও বাংলাদেশের অবস্থান উন্নত হয়েছে, তবে এখনও অনেক চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে আরও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সাংবাদিকদের নিরাপত্তা, তথ্যের স্বাধীন প্রবাহ এবং আইনের শাসন নিশ্চিত করতে সরকারকে আরও সচেষ্ট হতে হবে।
তবে, বর্তমান সরকারের উদ্যোগ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থনে বাংলাদেশের গণমাধ্যম খাত আরও শক্তিশালী ও স্বাধীন হয়ে উঠবে বলে আশা করা যায়।
বাংলাদেশের জন্য ২০২৫ সালের বিশ্ব প্রেস স্বাধীনতা সূচকে ১৬ ধাপ অগ্রগতি একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন। এটি প্রমাণ করে যে, সঠিক নীতিমালা ও সরকারের সদিচ্ছা থাকলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা সম্ভব। ভবিষ্যতে এই অগ্রগতি বজায় রাখতে সরকার, সাংবাদিক সমাজ এবং সাধারণ জনগণকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।