বিসিবি সভাপতি হিসেবে আমিনুলের নিয়োগ নিয়ে হাইকোর্টের প্রশ্ন

হাইকোর্ট

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি হিসেবে আমিনুল হকের নিয়োগের বৈধতা নিয়ে হাইকোর্টে উঠেছে প্রশ্ন। নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে আইনগত অনিয়মের অভিযোগে দায়ের হয়েছে রিট। বিস্তারিত জানুন এই প্রতিবেদন থেকে। ছবিঃ প্রথম আলো ইংলিশ

হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ আমিনুল হকের নিয়োগ

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)-এর নতুন সভাপতি হিসেবে আমিনুল হকের সাম্প্রতিক নিয়োগ নিয়ে আইনগত বিতর্ক শুরু হয়েছে। হাইকোর্টে এই নিয়োগ চ্যালেঞ্জ করে একটি রিট আবেদন দায়ের করা হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়মবহির্ভূত এবং স্বচ্ছতার অভাব ছিল। দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ ক্রীড়া সংস্থা বিসিবি—যার নেতৃত্ব সরাসরি দেশের ক্রিকেট নীতিমালার ওপর প্রভাব ফেলে—তার সভাপতির নিয়োগ যদি প্রশ্নবিদ্ধ হয়, তাহলে তা পুরো সংগঠনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি করে। এই কারণে হাইকোর্টের এই হস্তক্ষেপ ক্রিকেট অনুরাগী ও প্রশাসনিক মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আইনি অনিয়মের অভিযোগ

রিট আবেদনকারীরা দাবি করেছেন, বিসিবির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সভাপতি পদে নিয়োগ পেতে হলে নির্দিষ্ট একটি নির্বাচন প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়, যার মধ্যে আছে বোর্ড সভার সম্মতি, নির্বাচনী প্রক্রিয়া এবং গঠনতান্ত্রিক শর্ত পূরণ। তবে আমিনুল হকের ক্ষেত্রে এসব ধাপ যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয়েছে কিনা, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, অভ্যন্তরীণ কিছু প্রভাব ও রাজনৈতিক চাপে নিয়ম না মেনে তড়িঘড়ি করে এই পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে, যা দেশের ক্রীড়া প্রশাসনের প্রতি অব্যবস্থাপনার ইঙ্গিত বহন করে। এই অনিয়ম যদি প্রমাণিত হয়, তবে তা ভবিষ্যতে দেশের ক্রীড়া নীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

বিসিবির পক্ষ থেকে অবস্থান ব্যাখ্যা

অভিযোগের বিপরীতে বিসিবির একটি অংশ দাবি করেছে, আমিনুল হকের নিয়োগ প্রক্রিয়া ছিল সম্পূর্ণ আইনি এবং গঠনতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যেই সম্পন্ন। বিসিবির একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানান, বোর্ড মিটিংয়ে আমিনুল হকের নিয়োগের প্রস্তাব অনুমোদিত হয় এবং এটি রেজুলেশনের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আদালতে দাখিল করা হবে এবং প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা প্রমাণ করা হবে। তবে অভ্যন্তরীণ নানা মতবিরোধ ও বোর্ড সদস্যদের ভিন্নমত এই দাবির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে সংশয় তৈরি করছে।

আদালতের নির্দেশনা ও শুনানির অগ্রগতি

রিট গ্রহণ করে হাইকোর্ট বিসিবির সভাপতি নিয়োগ সংক্রান্ত সকল নথিপত্র ৭ দিনের মধ্যে আদালতে উপস্থাপনের নির্দেশ দিয়েছে। পাশাপাশি, আদালত আমিনুল হক, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং বিসিবিকে এই রিটের বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য নোটিশ পাঠিয়েছে। মামলার পরবর্তী শুনানি নির্ধারিত হয়েছে আগামী সপ্তাহে, যেখানে আদালত উভয় পক্ষের যুক্তি শুনে প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ দেবে। এই মামলার রায় বিসিবির প্রশাসনিক কাঠামো ও ভবিষ্যৎ নেতৃত্বে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে, যা দেশের ক্রীড়াঙ্গনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হতে পারে।

BCB President

ছবিঃ প্রথমআলো ইংলিশ

রাজনৈতিক প্রভাবের অভিযোগ ঘিরে বিতর্ক

নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে আরেকটি বিতর্কের জন্ম দিয়েছে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা। অনেকেই অভিযোগ করছেন, আমিনুল হক ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক গোষ্ঠীর ঘনিষ্ঠ হওয়ায় তার নিয়োগে প্রভাব খাটানো হয়েছে। এই অভিযোগ একদিকে বিসিবির স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে, অন্যদিকে দেশের ক্রীড়া প্রশাসনের ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা নিয়েও সংশয় সৃষ্টি করে। যদিও এই অভিযোগের কোনো সরাসরি প্রমাণ এখনও আদালতে উপস্থাপন করা হয়নি, তবে জনমনে এর প্রভাব স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।

ক্রিকেটারদের প্রতিক্রিয়া ও বিশ্লেষণ

বিসিবি সভাপতির পদে একজন ব্যক্তির নিয়োগ দেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যতের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এই কারণেই প্রাক্তন ও বর্তমান ক্রিকেটাররা বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। কেউ কেউ মনে করছেন, আমিনুল হক দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনিক দায়িত্বে যুক্ত থাকায় তিনি এই পদে অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নির্বাচিত হয়েছেন। অন্যদিকে অনেক বিশ্লেষক বলেছেন, নিয়ম না মেনে যদি তাকে সভাপতি করা হয়ে থাকে, তাহলে তা ভবিষ্যতে ক্রিকেট পরিচালনায় জবাবদিহিতার অভাব তৈরি করবে এবং বোর্ডের নৈতিকতা প্রশ্নবিদ্ধ করবে। ফলে, তাদের দাবি, যোগ্যতা থাকলেও নিয়মের বাইরে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা অনুচিত।

বিসিবির স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার দাবি জোরালো হচ্ছে

এই বিতর্ক বিসিবির সার্বিক পরিচালন ব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিয়ে নতুন করে ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছে। একজন সভাপতি কেবল একজন কর্মকর্তা নন; তিনি দেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও রূপরেখা নির্ধারণে প্রধান ভূমিকা পালন করেন। এমন অবস্থানে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যদি অনিয়ম থাকে, তাহলে দেশের ক্রিকেট উন্নয়নের গতি ব্যাহত হতে পারে। তাই ক্রীড়াঙ্গনের সংশ্লিষ্টরা চাইছেন, ভবিষ্যতে যেন গঠনতন্ত্র ও আইনি কাঠামোর বাইরে গিয়ে আর কোনো নিয়োগ না হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *