ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের দাম কমলো ১০০ টাকা |

ইন্টারনেট মূল্য হ্রাস

বাংলাদেশে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের দাম কমে গেছে ১০০ টাকা। নতুন সিদ্ধান্তে দেশের লাখো গ্রাহক পাচ্ছেন অধিক সাশ্রয়ী ও উন্নত মানের ইন্টারনেট সংযোগ। জেনে নিন বিস্তারিত। ছবিঃ ডেইলি ষ্টার

ইন্টারনেট সেবায় বড় সুখবর: দাম কমেছে ১০০ টাকা

বাংলাদেশের কোটি কোটি ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর জন্য এসেছে এক বড় সুখবর। সরকার এবং দেশের বিভিন্ন ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান (ISP) যৌথভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের মাসিক খরচ কমিয়ে সর্বনিম্ন ১০০ টাকা পর্যন্ত হ্রাস করা হবে। এই সিদ্ধান্তটি দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। যেখানে একসময় উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা অনেকের জন্য ব্যয়বহুল ছিল, এখন তা অধিকতর সাশ্রয়ী হয়ে উঠছে। এই পদক্ষেপ সাধারণ গ্রাহক, ফ্রিল্যান্সার, শিক্ষার্থীসহ সকলের জন্য স্বস্তি এনে দিচ্ছে।

কোন প্যাকেজে কত ছাড় দেওয়া হয়েছে?

এই মূল্য হ্রাসের সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হচ্ছেন সাধারণ ঘরোয়া ও ছোট ব্যবসায়িক গ্রাহকরা। পূর্বে যারা ৫ এমবিপিএস ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য মাসে ৫০০ টাকা পরিশোধ করতেন, তারা এখন সেই একই সেবাটি পাচ্ছেন মাত্র ৪০০ টাকায়। ১০ এমবিপিএস কিংবা তার চেয়ে বেশি গতির সংযোগেও একইভাবে ১০০ টাকা করে ছাড় প্রযোজ্য হয়েছে। বিভিন্ন ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান তাদের নিজ নিজ ওয়েবসাইটে ও বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে নতুন দামের তালিকা প্রকাশ করেছে। ফলে গ্রাহকরা এখন চাহিদা অনুযায়ী সাশ্রয়ী ও মানসম্মত সংযোগ পছন্দ করতে পারছেন সহজেই।

গ্রাহকদের প্রতিক্রিয়া ও আশার বাণী

দেশব্যাপী গ্রাহকদের মধ্যে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে দেখা গেছে উৎসাহ ও সন্তুষ্টি। অনেকেই মনে করছেন, দীর্ঘদিন পর একটি কার্যকর ও বাস্তবমুখী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একজন ফ্রিল্যান্সার বলেন, “প্রতি মাসে ১০০ টাকা সাশ্রয় আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই অর্থ আমি এখন বাড়তি ক্লাউড স্টোরেজ কিংবা উন্নত সফটওয়্যারে ব্যয় করতে পারব।” একইভাবে শিক্ষার্থীরাও জানিয়েছেন, তারা এখন বাড়িতেই কম খরচে অনলাইন ক্লাস ও রিসোর্স উপভোগ করতে পারবেন। এমনকি নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোও এই পরিবর্তনের ফলে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে আরও সক্রিয়ভাবে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে।

সরকারের ডিজিটাল লক্ষ্য ও নীতিমালা

সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রকল্পের অংশ হিসেবেই নেওয়া হয়েছে এই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (BTRC) পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রতিটি মানুষকে ডিজিটাল সেবার আওতায় আনাই সরকারের অন্যতম অঙ্গীকার। এই কারণে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট মূল্য হ্রাস শুধুমাত্র শহর নয়, গ্রামীণ জনগণের জন্যও একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সরকার আশা করছে, এই সিদ্ধান্ত দেশের অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও উদ্যোক্তা খাতে দীর্ঘমেয়াদি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

ব্রডব্যান্ড দাম কমলো

ছবিঃ ডেইলি ষ্টার

প্রতিযোগিতামূলক বাজারে গ্রাহক পাচ্ছে বাড়তি সুবিধা

বর্তমান বাজারে ইন্টারনেট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা চলছে। গ্রাহক ধরে রাখতে প্রতিষ্ঠানগুলো একে অপরকে টেক্কা দিতে নতুন নতুন অফার দিচ্ছে। এই অবস্থায় সরকারের পক্ষ থেকে দাম হ্রাসের ঘোষণাটি যেন গ্রাহকদের জন্য ‘অতিরিক্ত সুবিধা’ হিসেবে এসেছে। অনেক প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যেই হ্রাসকৃত মূল্যের সঙ্গে অতিরিক্ত ডেটা, উন্নত রাউটার কিংবা ইনস্টলেশন ছাড়ের ঘোষণা দিয়েছে। ফলে গ্রাহকরা পাচ্ছেন উন্নত সেবা, কম খরচে।

ব্যবসায়িক দিক থেকে সম্ভাবনার আলো

বিশেষজ্ঞদের মতে, যদিও ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর তৎক্ষণাৎ আয়ে কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে, তবে দীর্ঘমেয়াদে এই মূল্য হ্রাস তাদের জন্যও লাভজনক হতে পারে। কারণ, সাশ্রয়ী মূল্য গ্রাহক সংখ্যা বাড়াতে সহায়ক হবে। বেশি সংখ্যক সংযোগ মানে বৃহৎ আকারের রাজস্ব সম্ভাবনা। তাছাড়া, সেবার মান বজায় রেখে প্রতিষ্ঠানগুলো যদি নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট প্রদান করতে পারে, তাহলে তারা সহজেই বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারবে।

শিক্ষা খাতে ইন্টারনেট একটি অপরিহার্য মাধ্যম হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে অনলাইন শিক্ষা, ডিজিটাল পাঠ্যবই, ভিডিও লেকচার এবং ভার্চুয়াল ক্লাসের ক্ষেত্রে উচ্চগতির ও স্থায়ী সংযোগ প্রয়োজন। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট মূল্য হ্রাসের ফলে এখন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা আরও সহজে এই সুবিধা উপভোগ করতে পারবে। অনলাইন বিশ্ববিদ্যালয় ও কোর্স প্ল্যাটফর্মগুলোর ব্যবহার বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই পরিবর্তন বাংলাদেশের ডিজিটাল শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী ও গণমুখী করবে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন

সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ইন্টারনেট অবকাঠামোতে আরও বিনিয়োগ এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ঘটানো হবে। আগামীতে ফাইবার অপটিক বিস্তারের মাধ্যমে গ্রামে গ্রামে উচ্চগতির ব্রডব্যান্ড পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে আরও কম দামে দ্রুতগতির ইন্টারনেট চালুর সম্ভাবনার কথাও উঠে এসেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের জন্য এটি একটি সময়োপযোগী ও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যা দীর্ঘমেয়াদে দেশের প্রযুক্তিনির্ভর উন্নয়নে সহায়ক হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *