ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে দুই ভাইবোনের মরদেহ উদ্ধার

ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে দুই ভাইবোনের মরদেহ। নিখোঁজ হওয়ার একদিন পর স্থানীয় ডুবুরিদের সহায়তায় তাদের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার পর পুরো এলাকায় শোকের আবহ বিরাজ করছে। ছবিঃ সংগ্রহ
হৃদয়বিদারক ঘটনা ব্রহ্মপুত্রে
বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের একটি এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদে ঘটে গেল একটি মর্মান্তিক ঘটনা। সেখানে দুই ভাইবোন নদীতে ডুবে প্রাণ হারিয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তারা বিকেলবেলা নদীর পাড়ে খেলতে গিয়ে পানিতে পড়ে যায়। পরে নিখোঁজ হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর থেকে উদ্ধার কাজ শুরু হলেও, তাদের জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
এই ঘটনা স্থানীয়দের মধ্যে গভীর শোকের ছায়া ফেলেছে। পরিবারের সদস্যরা কান্নায় ভেঙে পড়েছে এবং চারপাশে নেমে এসেছে এক নিস্তব্ধতা। পুরো গ্রামজুড়ে চলছে শোকাবহ পরিবেশ।
নিখোঁজ হওয়ার পর উদ্ধার তৎপরতা
দুই ভাইবোনের নাম যথাক্রমে মীম (৯) ও ফাহিম (৭)। পরিবার সূত্রে জানা যায়, তারা বাড়ির পাশেই ব্রহ্মপুত্র নদীর তীরে খেলছিল। কিছুক্ষণ পর তাদের খুঁজে না পেয়ে পরিবারের সদস্যরা আশেপাশে খোঁজ শুরু করে। নদীর ধারে তাদের স্যান্ডেল পড়ে থাকতে দেখে সন্দেহ আরও গাঢ় হয়।
পরে স্থানীয় ডুবুরিদের সহায়তায় উদ্ধার কাজ শুরু হয়। প্রাথমিকভাবে বেশ কিছু ঘন্টা চেষ্টা করে মরদেহ খুঁজে পাওয়া যায়নি। কিন্তু পরদিন সকাল ১০টার দিকে নদীর ভাটির দিকে এক কিলোমিটার দূরে প্রথমে মীমের এবং পরে ফাহিমের মরদেহ পাওয়া যায়।
ঘটনার পরপরই স্থানীয় প্রশাসন ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। থানা পুলিশের একটি টিম ঘটনাটি তদন্তের জন্য আসে এবং মরদেহ দুটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রাথমিকভাবে এটি একটি দুর্ঘটনা বলে মনে হচ্ছে। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে যদি কোনো অভিযোগ থাকে, তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পরিবারটির পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন এবং দাফনের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
শোকাহত পরিবার ও এলাকাবাসীর প্রতিক্রিয়া
ঘটনাটি দুই পরিবারের জন্য যেমন হৃদয়বিদারক, তেমনি পুরো গ্রামবাসীর জন্যও তা বেদনার। একই পরিবারের দুই শিশুকে একসঙ্গে হারিয়ে পরিবারের সদস্যরা ভেঙে পড়েছেন। এলাকাবাসী শোকসন্তপ্ত পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সহানুভূতি জানিয়েছে।
স্থানীয় মসজিদে তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়ার আয়োজন করা হয়। অনেকেই এই ঘটনাকে ‘অতিপ্রাকৃত দুর্ভাগ্য’ বলে অভিহিত করেছেন এবং নিরাপত্তার জন্য নদীর পাড়ে বেড়া দেওয়ার দাবিও তুলেছেন।
শিশুদের নদীর ধারে চলাফেরায় সতর্কতা
এই মর্মান্তিক ঘটনা আমাদের সকলের জন্য একটি শিক্ষা। নদীর পাড়ে খেলতে যাওয়া শিশুদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সচেতনতা প্রয়োজন। বিশেষ করে বর্ষাকালে বা নদীর পানি বাড়ার সময় শিশুদের একা নদীর ধারে পাঠানো একেবারেই অনুচিত।
স্থানীয় প্রশাসন এ বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কিছু কার্যক্রম চালানোর পরিকল্পনা করেছে। নদীঘেঁষা এলাকাগুলোতে সতর্কীকরণ চিহ্ন বসানো ও পাড়ের নিরাপত্তা জোরদারের ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান উপজেলা চেয়ারম্যান।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সহানুভূতির ঢল
ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ফেসবুক, টুইটারসহ নানা প্ল্যাটফর্মে মানুষ শোকবার্তা দিচ্ছে। অনেকেই লিখেছেন, “একসঙ্গে দুই ফুল ঝরে গেল”, আবার কেউ লিখেছেন “আল্লাহ যেন পরিবারটিকে এই শোক সহ্য করার শক্তি দেন”।
স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপাশি মানবিক সংগঠনগুলোও পরিবারটির পাশে দাঁড়াতে আহ্বান জানিয়েছে। অনেকেই সহায়তা দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন এবং শিশুদের নিরাপত্তা নিয়ে ভবিষ্যতে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছেন।