মাগুরা শিশু ধর্ষণ মামলায় হিতু শেখের মৃত্যুদণ্ড, বেকসুর খালাস ৩ জন

মাগুরা শিশু ধর্ষণ মামলা

মাগুরা জেলায় সংঘটিত নৃশংস শিশু ধর্ষণ মামলার রায়ে হিতু শেখকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। অপরদিকে অপরাধে যুক্ত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত আরও তিনজন খালাস পেয়েছেন। বিস্তারিত জানুন। ছবিঃ ডেইলি ষ্টার

ভয়াবহ ঘটনার সূচনা

মাগুরা জেলার একটি প্রত্যন্ত গ্রামে ঘটে যাওয়া একটি ভয়াবহ ঘটনা গোটা সমাজকে নাড়িয়ে দেয়। আট বছর বয়সী এক শিশু তার পারিবারিক পরিবেশে খেলাধুলা করছিল, তখনই হিতু শেখ নামে একজন স্থানীয় ব্যক্তি তাকে ফুঁসলিয়ে একটি নির্জন স্থানে নিয়ে যায়। সেখানেই শিশুটির উপর চালানো হয় পাশবিক নির্যাতন। শিশুটিকে গুরুতর অবস্থায় স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং তার শারীরিক পরীক্ষায় ধর্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত হয়। এই ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায় এবং জনমনে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি করে।

ঘটনার পরপরই শিশুটির পরিবার স্থানীয় থানায় একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করে। মামলার এজাহারে হিতু শেখসহ চারজনের নাম উল্লেখ করা হয়। পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে দ্রুত অভিযুক্তদের আটক করে এবং ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ে শিশুটির জবানবন্দি নেয়। তদন্ত কর্মকর্তারা ভিকটিমের পরিবারের সদস্য, প্রতিবেশী এবং হাসপাতালের চিকিৎসকদের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। ফরেনসিক রিপোর্ট এবং শিশুটির মেডিকেল রিপোর্ট মামলার গতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

আদালতে চার্জশিট জমা ও বিচার শুরু

তদন্ত শেষে পুলিশ অভিযুক্ত চারজনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে চার্জশিট জমা দেয়। মামলা গৃহীত হওয়ার পর মাগুরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল বিচার কার্যক্রম শুরু করে। রাষ্ট্রপক্ষ ১৫ জন সাক্ষী উপস্থাপন করে, যাদের মধ্যে ছিল চিকিৎসক, ভিকটিমের পরিবার, প্রতিবেশী ও তদন্তকারী কর্মকর্তা। মামলার শুনানি দীর্ঘ সময় ধরে চলে এবং সকল পক্ষের যুক্তি-বিতর্ক শেষে আদালত রায়ের দিন ধার্য করে।

রায়ে আদালত বলেন, “ধর্ষণ একটি জঘন্য অপরাধ, বিশেষ করে যখন ভুক্তভোগী শিশু হয়। হিতু শেখের বিরুদ্ধে উপস্থাপিত সাক্ষ্য ও প্রমাণ আদালতকে সন্তুষ্ট করেছে।” বিচারক আরও বলেন, “এই অপরাধ শুধু একটি শিশুকে নয়, পুরো সমাজকে আঘাত করেছে।” এসব বিবেচনায় হিতু শেখকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। এই রায় সমাজে একটি শক্ত বার্তা দেবে বলে মন্তব্য করেন বিচারক।

বাকি তিনজন আসামির বিরুদ্ধে কোনো প্রত্যক্ষ সাক্ষ্য বা সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় আদালত তাদের বেকসুর খালাস দেন। আদালত বলেন, “ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হলে সন্দেহভাজন নয়, নিশ্চিত অপরাধীকেই শাস্তি দিতে হবে।” তবে রাষ্ট্রপক্ষ ইঙ্গিত দিয়েছে, তারা খালাসপ্রাপ্তদের বিষয়ে উচ্চ আদালতে আপিল বিবেচনা করবে।

ভুক্তভোগী পরিবারের প্রতিক্রিয়া

রায় ঘোষণার পর ভুক্তভোগী শিশুর পরিবার আদালতের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। তারা বলেন, “আমাদের সন্তান যা সহ্য করেছে, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। কিন্তু আজকের রায়ে অন্তত আমরা ন্যায়বিচার পেয়েছি বলে মনে হচ্ছে।” তারা আরও জানান, তিনজন খালাস পাওয়ায় কিছুটা হতাশ হলেও প্রধান অপরাধীর শাস্তি তাদের কিছুটা হলেও সান্ত্বনা দিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *