মিয়ানমারে বিধ্বংসী ভূমিকম্প: প্রাণহানি ১,৭০০ ছাড়িয়েছে, উদ্ধার তৎপরতায় চ্যালেঞ্জ

শক্তিশালী ভূমিকম্পে মিয়ানমারে প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে অন্তত ১,৭০০-তে পৌঁছেছে, যা আগের day’s report অনুযায়ী ১,২০০ ছিল। এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া ব্যক্তিদের উদ্ধারে অভিযান চলছে। তবে উদ্ধার কার্যক্রমে ধীরগতি দেখা দিয়েছে, কারণ ভূমিকম্পের ফলে দেশটির অধিকাংশ অঞ্চলে যোগাযোগব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর অধিকাংশ স্থানে স্থানীয় বাসিন্দারাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে দলবেঁধে উদ্ধারকাজ পরিচালনা করছেন।
শুক্রবার (২৮ মার্চ) দুপুরে মিয়ানমার, থাইল্যান্ডসহ আটটি দেশে এই ভূমিকম্প আঘাত হানে। ভূমিকম্পটির কেন্দ্র ছিল মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়, যেখানে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ৭.৭ মাত্রার এই ভূমিকম্পে থাইল্যান্ডেও অন্তত ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। দুই দেশেই হাজারো ভবন ধসে পড়েছে, বহু সড়ক ও সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এবং বিদ্যুৎ সংযোগ বিপর্যস্ত হয়েছে।
রোববার (৩০ মার্চ) মিয়ানমারের জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইং জানান, ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত ১,৭০০ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং আহত হয়েছেন ৩,৫০০ জনের বেশি, যা জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সংস্থা (ওসিএইচএ) এবং রেড ক্রসের প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রকাশিত হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছেন ৩০০ জন। তিনি আশঙ্কা করছেন, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
উদ্ধার অভিযান ব্যাহত হচ্ছে
উদ্ধার কার্যক্রম ধীরগতির অন্যতম কারণ হিসেবে ধ্বংসস্তূপ সরানোর জন্য প্রয়োজনীয় ভারী যন্ত্রপাতির অভাবকে দায়ী করা হচ্ছে। অধিকাংশ উদ্ধারকর্মীকে খালি হাতে কাজ করতে হচ্ছে, যা উদ্ধার প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করছে। এছাড়াও, ভূমিকম্পে সড়ক ও সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে দ্রুত পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর উদ্ধারকারী দলও এই লজিস্টিক চ্যালেঞ্জের কারণে কার্যকরভাবে কাজ করতে পারছে না।
ভূমিকম্পের দুই দিন পার হলেও ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া জীবিত ব্যক্তিদের উদ্ধারে ব্যাপক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন উদ্ধারকর্মীরা। অধিকাংশ উদ্ধারকারীকে ভারী যন্ত্রপাতি ছাড়াই হাতের সাহায্যে ধ্বংসস্তূপ সরাতে হচ্ছে, যা উদ্ধার তৎপরতাকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছে। জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থা জানিয়েছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত মিয়ানমারের এই বিপর্যয় মোকাবিলার সামর্থ্য নেই।
ভূমিকম্পের পর অনেক দেশ মিয়ানমারের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং বিদেশি উদ্ধারকর্মীরা ত্রাণসহায়তা নিয়ে দেশটিতে পৌঁছেছেন। তবে যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় তাঁরা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে পৌঁছাতে পারছেন না।
নতুন ভূমিকম্প

ছবি: এএফপি
উদ্ধার কাজ চলাকালীন মাঝেই গতকাল (৩১ মার্চ) দুপুরে মিয়ানমারে ৫.১ মাত্রার আরেকটি ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। এর আগে শনিবার সন্ধ্যায়ও মাঝারি মাত্রার আরেকটি ভূমিকম্প হয়েছিল। তবে এগুলোতে বড় ধরনের কোনো ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
উদ্ধারকাজে স্থানীয়দের তৎপরতা
ভূমিকম্পে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত মান্দালয় শহরের ২৫ বছর বয়সী হতেত মিন রয়টার্সকে বলেন, “চারপাশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে, কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোনো উদ্ধারকারী দল আমাদের এলাকায় আসেনি।” তাঁর স্বজনেরা ধসে পড়া ভবনের নিচে আটকা পড়েছেন, যাঁদের উদ্ধারের চেষ্টা তিনি নিজেই চালিয়ে যাচ্ছেন।
মান্দালয়ের শহরতলি আমারাপুরার একজন উদ্ধারকর্মী জানিয়েছেন, তিনি একটি ভবনের ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে ১৪০ জন বৌদ্ধভিক্ষুর কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন। “আমাদের হাতে পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি নেই, তাই উদ্ধারকাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, কিন্তু আমরা আশা ছাড়ছি না,” বলেন তিনি।
একজন স্থানীয় চা বিক্রেতা বলেন, “আমি ধসে পড়া একটি রেস্তোরাঁর ইট সরিয়ে দেখার চেষ্টা করছি ভেতরে কেউ বেঁচে আছেন কি না। এখানে অন্তত সাতজনের মৃত্যু হয়েছে, তবে নিশ্চিত নয়, আরও কেউ জীবিত আছেন কি না।”
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সংস্থা (ওসিএইচএ) জানিয়েছে, ভূমিকম্পে যোগাযোগব্যবস্থা বিপর্যস্ত হওয়ায় দুর্গত এলাকাগুলোতে সাহায্য পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে। হাসপাতালগুলোতে জায়গার সংকট দেখা দিয়েছে, আহতদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
ভূমিকম্পের পর দ্রুততম সময়ে উদ্ধার কার্যক্রম চালানোর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে জাতিসংঘ, রেড ক্রস, এবং আন্তর্জাতিক উদ্ধার সংস্থাগুলো। তবে অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতির কারণে এই প্রচেষ্টা উল্লেখযোগ্য বাধার সম্মুখীন হচ্ছে।