অন্তর্বর্তী সরকার ব্যবসায়ী স্বার্থে শ্রমিকদের উপেক্ষা করছে:

সিপিবি সভাপতি মে দিবসে আয়োজিত সমাবেশে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত না করে কেবলমাত্র মালিকদের সুবিধা দিচ্ছে। গার্মেন্টস খাতে ব্যাপক ছাঁটাই ও মজুরি বৈষম্যের অভিযোগ তুলে জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ৩০,০০০ টাকা করার দাবি জানান তিনি। ছবি: প্রথম আলো ইংলিশ
শ্রমিকদের জন্য মে দিবসে সিপিবির দাবি তুলে ধরা
আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস উপলক্ষে ১ মে ঢাকায় পুরানা পল্টনের মুক্তি ভবনের সামনে এক বিশাল সমাবেশের আয়োজন করে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন দলের সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম। তিনি বলেন, “শ্রমিকদের রক্ত ও ঘামে এই দেশ চলছে, অথচ তাদেরই অধিকার আজ সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত।” বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার মালিকপক্ষের ইশারায় চলছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
‘গণঅভ্যুত্থান’ থেকেও বদল আসেনি বাস্তবতা
মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, “২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান থেকে আমরা যে পরিবর্তনের আশা করেছিলাম, বাস্তবে তা আসেনি। বরং শ্রমিকদের জীবন আরও কঠিন হয়ে পড়েছে।” তিনি অভিযোগ করেন, গার্মেন্টস সেক্টরে ছাঁটাই বেড়েছে, অনেক শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন, এমনকি বকেয়া বেতন পাওয়ার জন্য তাদের রাস্তায় নামতে হচ্ছে। মালিকরা যেমন ইচ্ছা তেমনভাবে শ্রমিকদের চাকরি থেকে বাদ দিচ্ছেন, কোনো আইন-কানুনের তোয়াক্কা করছেন না।
গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটে বন্ধ হচ্ছে কারখানা
তিনি আরও বলেন, “শুধু শ্রম আইনই নয়, শিল্পনীতি ও জ্বালানী ব্যবস্থাপনাও শ্রমিকদের স্বার্থে নয়। গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটের কারণে বহু কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। মালিকরা এটি অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে শ্রমিক ছাঁটাই করছে। এতে কর্মসংস্থান কমে যাচ্ছে, অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, আর দোষ চাপানো হচ্ছে শ্রমিকদের ওপর।”

ছবি: কমিউনিস্ট পার্টি অফ বাংলাদেশ
আউটসোর্সিংয়ে শ্রমিক শোষণ
সিপিবি সভাপতির ভাষ্যমতে, বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৬ লক্ষ আউটসোর্সড শ্রমিক রয়েছেন। তাদের কোনো চাকরির স্থায়িত্ব নেই, নেই শ্রমিক সংগঠনের অধিকার। এই শ্রমিকরা মূলত নিয়োগকর্তাদের করুণার ওপর নির্ভরশীল। তিনি বলেন, “এই অবস্থা চলতে থাকলে শ্রমিকদের আর বলার কিছু থাকবে না। এটি একটি সাংবিধানিক অবমাননা।”
জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ও অন্যান্য দাবির পুনরাবৃত্তি
শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ৩০,০০০ টাকা নির্ধারণ, রেশনিং ব্যবস্থা চালু, শ্রমিক আবাসন নির্মাণ এবং স্বাস্থ্যসেবার সহজলভ্যতা নিশ্চিত করার দাবি জানান সিপিবি সভাপতি। পাশাপাশি তিনি বলেন, “শুধু বেতন বাড়ালেই হবে না, শ্রমিকদের মানসিক ও সামাজিক নিরাপত্তাও নিশ্চিত করতে হবে।”
অন্যান্য নেতাদের বক্তব্য
এই সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন সিপিবির সহকারী সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ, ট্রেড ইউনিয়ন সেন্টারের সহ-সভাপতি মাহবুব আলম এবং শ্রমিক নেতা মন্টু ঘোষ। বক্তারা সবাই শ্রমিক আন্দোলন জোরদার করার আহ্বান জানান এবং শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ থাকার গুরুত্ব তুলে ধরেন।
সমাবেশ শেষে বর্ণাঢ্য মিছিল
সমাবেশ শেষে একটি রঙিন ও সংগঠিত মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলটি পল্টন থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় মুক্তি ভবনে এসে শেষ হয়। মিছিলে ছিল ব্যানার, পোস্টার ও শ্রমিকদের প্রতিবাদী স্লোগান—যা পুরো এলাকায় একটি প্রাণবন্ত আবহ তৈরি করে।
ভবিষ্যৎ কর্মসূচির ইঙ্গিত
সমাবেশ থেকে ভবিষ্যতের জন্য আরও কঠোর আন্দোলনের পরিকল্পনার ইঙ্গিত দেন নেতারা। তাঁরা বলেন, “যদি সরকার শ্রমিকদের ন্যায্য দাবিগুলো উপেক্ষা করে, তবে আমরা রাজপথে আরও বড় পরিসরে আন্দোলনে যাবো। এই লড়াই এখন জীবন-জীবিকার প্রশ্ন।”