যুদ্ধবিরতির শর্তে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনায় প্রস্তুত ইউক্রেন

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা কেবলমাত্র যুদ্ধবিরতির শর্তে সম্ভব। পড়ুন বিস্তারিত ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে। ছবিঃ বিবিসি
ইউক্রেনের অবস্থান: শান্তির জন্য যুদ্ধবিরতির দাবি
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সম্প্রতি এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, তার দেশ রাশিয়ার সঙ্গে শান্তিপূর্ণ আলোচনায় বসতে ইচ্ছুক। তবে এর একমাত্র শর্ত হলো—রাশিয়াকে অবশ্যই যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে হবে। তিনি বলেন, “আমরা আলোচনায় প্রস্তুত, কিন্তু কেবল তখনই যদি যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়িত হয় এবং রাশিয়া তাদের আগ্রাসন বন্ধ করে।” এই বক্তব্য শুধু কূটনৈতিক বার্তাই নয়, বরং যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। ইউক্রেন সরকারের মতে, তারা আলোচনার মাধ্যমে সংকটের সমাধান চায়, কিন্তু কোনো শর্তহীন আলোচনায় তারা যাবে না, যা দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে।
আন্তর্জাতিক চাপে আলোচনার দরজা খুলছে?
বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলো এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে পড়ে ইউক্রেন ও রাশিয়া উভয় দেশই কিছুটা নমনীয় মনোভাব দেখাতে শুরু করেছে। বিশেষ করে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ন্যাটো তাদের পক্ষ থেকে অব্যাহতভাবে যুদ্ধ বন্ধে কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। জেলেনস্কির এই বক্তব্য একটি ইঙ্গিত হতে পারে যে, ইউক্রেন এখন যুদ্ধ নয়, বরং শান্তিপূর্ণ সমাধানে আগ্রহী। তবে তিনি বারবার উল্লেখ করেছেন, “আলোচনার জন্য রাশিয়াকে যুদ্ধবিরতিতে যেতে হবে এবং ইউক্রেনের ভূখণ্ডে আক্রমণ বন্ধ করতে হবে।” এটি একটি কৌশলগত অবস্থান, যা ইউক্রেনের জনগণের চাওয়ার সাথেও সামঞ্জস্যপূর্ণ।
রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া: এখনও অনড় অবস্থান
রাশিয়ার পক্ষ থেকে এখনো ইউক্রেনের এই নতুন প্রস্তাবের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে অতীত অভিজ্ঞতা থেকে বোঝা যায়, রাশিয়া সাধারণত তৎক্ষণাৎ কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়া জানায় না, বরং সময় নিয়ে তাদের অবস্থান পরিস্কার করে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন হয়তো এই প্রস্তাবকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করবেন, তবে যুদ্ধবিরতির জন্য তাদের নিজস্ব শর্তও জুড়ে দিতে পারেন। রাশিয়ার কৌশলগত অবস্থান হলো—তারা ইউক্রেনকে সামরিক ও রাজনৈতিকভাবে চাপে রাখতে চায়, যাতে আলোচনায় বসার আগেই কিছু সুবিধা আদায় করা যায়। ফলে ইউক্রেনের এই শান্তির আহ্বান রাশিয়ার দৃষ্টিতে কতটা গ্রহণযোগ্য হবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

ছবিঃ ফ্রান্সে ২ ৪
যুদ্ধের প্রেক্ষাপট: মানবিক বিপর্যয়ের চিত্র
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ইতিমধ্যেই বিশাল মানবিক সংকট তৈরি করেছে। হাজার হাজার নিরীহ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, লক্ষ লক্ষ মানুষ শরণার্থী হয়ে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন। শহর, গ্রাম, হাসপাতাল, স্কুল ধ্বংস হয়ে গেছে। বিশ্ব খাদ্যসংকট, জ্বালানির দাম বৃদ্ধি ও বৈশ্বিক অর্থনীতিতেও এর প্রভাব পড়েছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য একটি যুদ্ধবিরতি অত্যন্ত জরুরি। মানবাধিকার সংস্থা ও এনজিও গুলো জোর দিয়ে বলছে, যুদ্ধ বন্ধ না হলে এই মানবিক বিপর্যয় আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। জেলেনস্কির যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব তাই কেবল রাজনৈতিক নয়, এটি একটি মানবিক আবেদন হিসেবেও দেখা হচ্ছে।
ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা: আলোচনার সম্ভাবনা কতটা?
ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে অনেক বিশ্লেষক বলছেন, এই বিবৃতি একটি সম্ভাব্য শান্তি চুক্তির পথে প্রথম ধাপ হতে পারে। যদিও যুদ্ধবিরতির আগে কোনো আলোচনা নয়—এই অবস্থানে ইউক্রেন অনড়, তবে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রাশিয়া যদি নমনীয় হয়, তাহলে দুই দেশের মধ্যে একটি অন্তর্বর্তী চুক্তি হতে পারে। ইউক্রেন চাইছে তাদের ভূখণ্ডের অখণ্ডতা বজায় রেখে আলোচনায় অংশ নিতে, যা কোনোভাবেই আপোষযোগ্য নয়। ফলে আলোচনার পথ কাঁটাময় হলেও, এটি সম্পূর্ণ বন্ধ নয়। এখন বিশ্ব অপেক্ষায়—রাশিয়ার পক্ষ থেকে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া আসে এবং যুদ্ধ কি আদৌ থামবে, নাকি সংঘর্ষ চলতেই থাকবে।