আগামী নির্বাচন ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে, একদিনও পিছিয়ে যাওয়া যাবে না

জাতীয় নির্বাচন ২০২৫

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রিজওয়ানা হক জানালেন আগামী জাতীয় নির্বাচন ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে এবং কোনোভাবেই তার সময়সীমা পিছিয়ে নেওয়া যাবে না। বিস্তারিত খবর এখানে। ছবিঃ পিএইডি

নির্বাচন সময়সীমা নিয়ে স্পষ্টতা দিলেন রিজওয়ানা হক

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রিজওয়ানা হক সম্প্রতি এক প্রেস কনফারেন্সে দেশের আগামী জাতীয় নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন অবশ্যই ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হবে এবং এই সময়সীমা থেকে একদিনও সরে আসা যাবেনা। এই স্পষ্ট নির্দেশনা দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা দূরীকরণ এবং একটি নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করার ব্যাপারে সরকারের প্রতিশ্রুতির পরিচায়ক। তিনি আরও উল্লেখ করেন, নির্বাচনের সময়সীমা নির্ধারণে সরকারের পক্ষ থেকে কোন আপস করা হবে না, কারণ এটি দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মৌলিক অধিকার রক্ষার জন্য অপরিহার্য। রিজওয়ানা হকের এই বক্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে এক ধরনের দৃঢ় সংকল্পের বহিঃপ্রকাশ এবং পাশাপাশি জনগণের মধ্যে একটি স্থিতিশীলতার বার্তা প্রদান করে।

সময়মতো নির্বাচন নিশ্চিত করতে প্রশাসনিক প্রস্তুতি ত্বরান্বিত

মন্ত্রী রিজওয়ানা হকের বক্তব্য অনুযায়ী, সরকারের সকল বিভাগ নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও স্বচ্ছভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ শুরু করেছে। নির্বাচন কমিশন এবং সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় সাধন করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হচ্ছে। পাশাপাশি ভোটার তালিকা হালনাগাদ, ভোট কেন্দ্রের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, এবং প্রচারাভিযানের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তৎপরতা অব্যাহত আছে। এই প্রক্রিয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিশেষ নজরদারি করছে যাতে নির্বাচনী এলাকায় কোন প্রকার সহিংসতা কিংবা বাধা-বিপত্তি না ঘটে। মন্ত্রী বলেন, “সরকারি এবং অ-সরকারি সব পর্যায়ে কাজ চলছে যাতে নির্বাচন পুরোপুরি অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হয়। এটা নিশ্চিত করার জন্য আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।” তার এই বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, সরকার ভোটারদের ভোটাধিকার রক্ষা এবং দেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে গতিশীল রাখার জন্য গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে।

রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান: শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখুন

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রিজওয়ানা হক নির্বাচনের সময়ে সকল রাজনৈতিক দল এবং অংশগ্রহণকারীদের প্রতি বিশেষ আহ্বান জানিয়েছেন যেন তারা শান্তিপূর্ণ ও গঠনমূলক পরিবেশ বজায় রাখেন। তিনি বলেন, “রাজনৈতিক মতবিরোধ থাকা স্বাভাবিক, কিন্তু তা যেন সহিংসতায় রূপান্তরিত না হয়।” তিনি জানান, ভোটপ্রক্রিয়ার মধ্যে গন্ডগোল, সংঘাত কিংবা অশান্তি দেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের জন্য ক্ষতিকর এবং সেক্ষেত্রে সবাইকে সমঝোতার মাধ্যমে পথ খুঁজে নিতে হবে। রিজওয়ানা আরও বলেন, ভোটাররা যেন নির্বিঘ্নে তাদের ভোট দিতে পারে, সেটি নিশ্চিত করা সকল রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব। তিনি রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি বলেন, “দেশের স্বার্থে সবাইকে সহিষ্ণুতা প্রদর্শন করতে হবে এবং একটি মসৃণ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।” এই আহ্বান দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও ভবিষ্যতের গণতান্ত্রিক বিকাশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

নির্বাচন আয়োজনের জন্য আইনি কাঠামো দৃঢ়

মন্ত্রী রিজওয়ানা হক বলেন, নির্বাচন নির্ধারণের বিষয়টি কেবল রাজনৈতিক ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে না, বরং এটি সংবিধান এবং নির্বাচনী আইনের কঠোর বিধান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। তিনি জানান, সরকার ও নির্বাচন কমিশনের মধ্যে নিয়মিত পরামর্শ ও আইনি পর্যালোচনা চালিয়ে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে জটিলতা ছাড়া সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এই আইনি কাঠামো নিশ্চিত করে যে নির্বাচনের সময়সীমা থেকে কোনওভাবেই সরে আসা যাবে না। রিজওয়ানা বলেন, “আমরা নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার কোনো কারণ স্বীকার করছি না এবং ভবিষ্যতেও এ বিষয়ে কোনো আপস হবে না।” এই মন্তব্য থেকে স্পষ্ট যে, বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন রক্ষায় সরকার গভীরভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

নির্বাচন সময়সীমা

ছবিঃ ডেইলি ষ্টার

জনগণের ভোটাধিকার সুরক্ষায় প্রতিশ্রুতি

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রিজওয়ানা হক ভোটারদের নিরাপত্তা ও তাদের মৌলিক ভোটাধিকার সুরক্ষায় সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, “ভোটাররা যেন ভয়মুক্ত পরিবেশে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন, সেটাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।” তিনি উল্লেখ করেন, নির্বাচনী কেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তার ব্যবস্থা জোরদার করা হবে এবং কোনও প্রকার অনিয়ম বা হুমকির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। ভোটারদের উৎসাহিত করার পাশাপাশি তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকার সকল পর্যায়ে প্রস্তুত রয়েছে। রিজওয়ানা বলেন, “যেকোনো ধরনের বাধা ও প্রভাবমুক্ত ভোট নিশ্চিত করাই আমাদের মূল লক্ষ্য।” এই অংশটি ভোটারদের প্রতি সরকারের দায়বদ্ধতার সুস্পষ্ট পরিচায়ক।

প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করে নির্বাচন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ করতে উদ্যোগ

মন্ত্রী রিজওয়ানা হক বলেন, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়ে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ, দ্রুত ও কার্যকর করার পরিকল্পনা চলছে। তিনি উল্লেখ করেন, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) বা অনলাইন ভোটিংয়ের বিষয়ে ভবিষ্যতে সম্ভাব্য প্রয়োগের জন্য গবেষণা ও আলোচনা চলছে। এসব প্রযুক্তি ভোটারদের স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু ভোটাধিকার নিশ্চিত করবে এবং ভোট গণনায় ভুল কমিয়ে আনবে। রিজওয়ানা বলেন, “প্রযুক্তির সাহায্যে ভোট প্রক্রিয়া যেন আরো বেশি বিশ্বাসযোগ্য হয়, সেটিই আমাদের চাওয়া।” তিনি আশা প্রকাশ করেন, এগুলো প্রয়োগ হলে নির্বাচন আরও টেকসই এবং আধুনিক হবে, যা বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *