শাম্মোর বিচারের দাবিতে শাহবাগ মোড় অবরোধ ছাত্রদলের

শাহবাগ অবরোধ

ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা শাম্মোর উপর হামলার প্রতিবাদে শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। তারা দ্রুত বিচার ও দোষীদের শাস্তির দাবি জানান। আন্দোলন দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে। ছবিঃ টিবিএস

হামলার শিকার ছাত্রনেতা শাম্মো, ফুঁসে উঠলো ছাত্রদল

সম্প্রতি রাজধানীতে এক মর্মান্তিক ঘটনায় ছাত্রদলের একজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মী শাম্মো অজ্ঞাতপরিচয় একদল দুর্বৃত্তের হামলার শিকার হন। ঘটনাটি সংঘটিত হয় তার বাসার কাছে, যখন তিনি রাত্রিকালীন একটি সাংগঠনিক বৈঠক শেষে ফিরছিলেন। গুরুতর আহত শাম্মো বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। ছাত্রদলের দাবি, এই হামলা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় বরং এটি একটি পরিকল্পিত রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। সংগঠনের নেতারা বলছেন, শাম্মো দীর্ঘদিন ধরে সরকারের বিভিন্ন নীতির সমালোচনা করে আসছিলেন এবং এ কারণেই তাকে নিশানা করা হয়েছে।

শাহবাগ মোড়ে ছাত্রদলের আকস্মিক অবরোধ কর্মসূচি

শাম্মোর উপর হামলার প্রতিবাদে ছাত্রদলের আহ্বানে সোমবার দুপুরে ঢাকা শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মোড় শাহবাগে আকস্মিক অবরোধ শুরু হয়। নেতাকর্মীরা মুখে কালো কাপড় বেঁধে, হাতে প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার নিয়ে সেখানে উপস্থিত হন। মুহূর্তেই যান চলাচল স্থবির হয়ে পড়ে। “শাম্মোর বিচার চাই”, “গণতন্ত্রের হত্যাকারীদের প্রতিরোধ করো”—এমন সব স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। বিক্ষোভকারীদের উপস্থিতি এবং শক্ত অবস্থানে স্পষ্ট হয় যে, তারা কোনোমতেই এই ইস্যুতে নত হতে রাজি নন।

শান্তিপূর্ণ হলেও দৃঢ় বার্তা নিয়ে এসেছে ছাত্রদলের আন্দোলন

ছাত্রদলের এই আন্দোলন শান্তিপূর্ণ হলেও এতে ছিল দৃঢ় বার্তা। তারা বারবার স্পষ্ট করেছেন যে, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, “আমরা সংঘর্ষ চাই না, কিন্তু বিচার না পেলে রাস্তাই হবে আমাদের প্রতিবাদের প্রধান মঞ্চ।” আন্দোলনকারীদের শান্তিপূর্ণ আচরণ এবং সুসংগঠিত অবস্থানে সচেতন মহলে প্রশংসা যেমন হয়েছে, তেমনি প্রশাসনেরও নজর কেড়েছে। তারা রাস্তায় অবস্থান ধর্মঘট পালন করে দাবি তুলে ধরেছেন দেশের প্রতিটি তরুণের সামনে।

ঘটনার গুরুত্ব অনুধাবন করে পুলিশের একাধিক দল শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেয়। তারা প্রথমে আন্দোলনকারীদের সরে যাওয়ার অনুরোধ করলেও ছাত্রদলের নেতারা জানিয়ে দেন, দাবি পূরণ না হলে সরে যাওয়া সম্ভব নয়। পরিস্থিতি যেন নিয়ন্ত্রণের বাইরে না যায়, সেজন্য পুলিশ বেশ সতর্ক অবস্থানে থাকে এবং জলকামানসহ বিশেষ বাহিনীকে প্রস্তুত রাখা হয়। তবে এখনও পর্যন্ত কোনো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি, যা আন্দোলনের পরিপক্কতা ও প্রশাসনের দায়িত্বশীলতার ইঙ্গিত দেয়।

রাজধানীবাসীর দুর্ভোগ ও জনমত

অবরোধের ফলে শাহবাগ ও তার আশেপাশের এলাকায় চরম যানজট সৃষ্টি হয়। আজিমপুর, নিউ মার্কেট, বাংলামোটর, ফার্মগেট—এসব এলাকায় কর্মজীবী মানুষ, ছাত্রছাত্রী ও রোগীবাহী যানবাহনের চলাচলে বিপর্যয় দেখা দেয়। তবে অনেক পথচারী এই অবরোধের কারণ জানার পর আন্দোলনের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেন। একজন পথচারী বলেন, “যদি ন্যায়বিচার আদায়ের জন্য রাস্তায় নামতে হয়, তাহলে সেটা গণতন্ত্রের অঙ্গ।” সাধারণ মানুষের এমন প্রতিক্রিয়া আন্দোলনকারীদের উৎসাহ যোগাচ্ছে।

রাজনৈতিক মহলে প্রতিক্রিয়া ও সমালোচনার ঝড়

ছাত্রদলের এই আন্দোলনে রাজনৈতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিএনপি এই প্রতিবাদকে “বিচারহীনতার বিরুদ্ধে সাহসী প্রতিবাদ” হিসেবে উল্লেখ করেছে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “ছাত্রদল রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে জনগণের ভোগান্তিকে হাতিয়ার করছে।” রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ছাত্র রাজনীতিতে দীর্ঘদিন পর এমন সুসংগঠিত ও দাবি ভিত্তিক আন্দোলন দেখা গেলো, যা ছাত্র রাজনীতির গুণগত পরিবর্তনের ইঙ্গিত বহন করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *