গণভবনে শেখ হাসিনার পালানোর আগে কী ঘটেছিল?

শেখ হাসিনার পালানো

শেখ হাসিনার গণভবন ত্যাগের আগে কী ঘটেছিল তা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন। নিরাপত্তা হুমকি, রাজনৈতিক চাপ ও গোপন বৈঠকের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ এখন জানুন বিস্তারিত। ছবিঃ প্রথম আলো ইংলিশ

গণভবনে শেখ হাসিনার পালানোর আগে কী ঘটেছিল?

সম্প্রতি দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে একটি রহস্যজনক ঘটনা—প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হঠাৎ গণভবন ত্যাগ। এই ঘটনা নিয়ে রাজনীতিক মহল, সাধারণ মানুষ, এমনকি আন্তর্জাতিক মহলেও উঠেছে নানা প্রশ্ন। গণভবনের মতো সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ঘেরা স্থানে অবস্থানরত একজন প্রধানমন্ত্রী কেন এত হঠাৎ করে স্থানত্যাগ করলেন? এটি কি শুধুই নিরাপত্তাজনিত, নাকি এর পেছনে রয়েছে গভীর রাজনৈতিক অঙ্ক? আজকের এই প্রতিবেদন আমরা তুলে ধরবো সেইসব ঘটনা, তথ্য ও বিশ্লেষণ যা শেখ হাসিনার গণভবন ছাড়ার পেছনে সম্ভাব্য কারণ হিসেবে উঠে এসেছে।

নিরাপত্তা ব্যবস্থায় মারাত্মক দুর্বলতার ইঙ্গিত

বিশ্বস্ত গোয়েন্দা সূত্র ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, শেখ হাসিনার গণভবন ত্যাগের সবচেয়ে বড় কারণ ছিল নিরাপত্তা ব্যবস্থার ভিতরে থাকা একটি দুর্বলতা। গত কয়েক মাসে কয়েকটি সন্দেহজনক গতিবিধি ও আগত হুমকির প্রেক্ষিতে গোয়েন্দা বিভাগ একটি গোপন রিপোর্ট তৈরি করে। এই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, গণভবনের নিরাপত্তা বলয় ভেদ করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সংঘটনের পরিকল্পনা হতে পারে। বিশেষ করে বিদেশি প্রযুক্তি ব্যবহার করে নজরদারি এড়ানোর চেষ্টার কথাও উঠে আসে। এই আশঙ্কার প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীকে নিরাপদে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি ছিল উত্তাল। রাজধানীতে বিরোধী দলের লাগাতার আন্দোলন, হরতাল ও গণসমাবেশ দেশের আইনশৃঙ্খলাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দেয়। বিশেষ করে প্রধান বিরোধী জোটের পক্ষ থেকে ঘোষিত ‘ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি’ এক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির জন্ম দেয়। এসব কর্মসূচির অংশ হিসেবে গণভবনের কাছাকাছি এলাকায় সংঘর্ষ, পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ফলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তা আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। প্রশাসনের শীর্ষ মহল এই পরিস্থিতিকে ‘উচ্চ ঝুঁকি’ হিসেবে চিহ্নিত করে এবং সিদ্ধান্ত নেয়, প্রধানমন্ত্রীকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে হবে।

গোপন মন্ত্রিসভা বৈঠকে জরুরি সিদ্ধান্ত

শেখ হাসিনার গণভবন ত্যাগের কয়েক ঘণ্টা আগে একটি গোপন মন্ত্রিসভা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই বৈঠকে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা হয়। মন্ত্রীরা পরস্পরের মধ্যে মতবিনিময়ের পর একমত হন যে, প্রধানমন্ত্রীকে সাময়িকভাবে সরে যাওয়ার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। এই বৈঠকে একাধিক বিকল্প পরিকল্পনার খসড়া তৈরি হয় এবং সেনাবাহিনী, পুলিশ ও র‍্যাবের নির্দিষ্ট ইউনিটকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়। বৈঠক শেষে দ্রুত নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয় বিশেষ কোডেড বার্তা।

বাংলাদেশ রাজনীতি

ছবিঃ বিসনেস স্টান্ডের

গণভবনের অভ্যন্তরে বিভ্রান্তি ও আতঙ্ক

গণভবনের অভ্যন্তরে কর্মরত কর্মকর্তারা ও স্টাফরা এই আকস্মিক ঘটনার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সকল দৈনন্দিন কর্মসূচি হঠাৎ করে বাতিল করে দেওয়া হয় এবং গণভবনের ভেতরে-বাইরে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা বলয় সৃষ্টি করা হয়। সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়, এমনকি ফোন ও ইন্টারনেট সংযোগও সীমিত করে দেওয়া হয় কিছু সময়ের জন্য। কর্মচারীদের অনেকেই জানতেন না প্রধানমন্ত্রী কোথায় যাচ্ছেন বা কেন এতো গোপনীয়তার সাথে তিনি গণভবন ছাড়ছেন। এতে গণভবনের পরিবেশ অস্থির ও আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।

নিরাপত্তা পরিকল্পনা ও প্রস্থান প্রক্রিয়া

প্রধানমন্ত্রীর স্থানত্যাগ ছিল অত্যন্ত পরিকল্পিত এবং নিরাপত্তা ইউনিটের সর্বোচ্চ নজরদারিতে পরিচালিত একটি অভিযান। পূর্ব-পরিকল্পিত রুট অনুযায়ী, শেখ হাসিনাকে একটি সুরক্ষিত ও আন্ডারকভার বহরে করে এক নির্দিষ্ট নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। এই বহরে ছিল সশস্ত্র নিরাপত্তাকর্মী, ডিকয় ভেহিকল, এবং হেলিকপ্টার প্রস্তুত দল। গোটা প্রক্রিয়াটি চলে গভীর রাতের আঁধারে, যাতে কোনো রকম নজরে না আসে। এমনকি অনেক দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাও জানতেন না প্রধানমন্ত্রীকে কোথায় নেওয়া হচ্ছে।

শেখ হাসিনার এভাবে হঠাৎ গণভবন ত্যাগ আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। ঢাকায় কর্মরত একাধিক বিদেশি দূতাবাস এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং বাংলাদেশ সরকারের কাছে বিস্তারিত ব্যাখ্যা চেয়েছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমও এ বিষয়ে বিভিন্ন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যেখানে প্রশ্ন তোলা হয়েছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে। এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ ও সহযোগিতার ওপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন।

রাজনীতির ভবিষ্যৎ রূপরেখায় নতুন মোড়

শেখ হাসিনার গণভবন ত্যাগ শুধু তাৎক্ষণিক এক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নয়; বরং এটি দেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতির একটি মোড় পরিবর্তনের সংকেত বলেই অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন। এই সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে বর্তমান শাসন ব্যবস্থার দুর্বলতা, প্রশাসনিক সমন্বয়ের অভাব ও জনমতের চাপ সবই প্রতিফলিত হয়েছে। এখন প্রশ্ন উঠছে—এটা কি সরকারের শক্ত অবস্থানের পরিবর্তন, নাকি কৌশলগত পিছু হটা? আগামী জাতীয় নির্বাচন এবং সরকার-বিরোধী আন্দোলনের গতিপথ এই ঘটনার ওপর অনেকটাই নির্ভর করতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *