সংঘর্ষে আহত সিলেট যুবলীগ নেতা ঢাকায় মারা গেলেন

সিলেটের যুবলীগ নেতা বিএনপির সঙ্গে সংঘর্ষে গুরুতর আহত হয়ে ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন। রাজনৈতিক সহিংসতার এই ঘটনা স্থানীয় অঙ্গনে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। ছবিঃ নিউ এইজ
সংঘর্ষের পটভূমি
সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় যুবলীগ এবং বিএনপির মধ্যে সাম্প্রতিক এক সংঘর্ষের ঘটনা রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। সংঘর্ষটি শুরু হয়েছিল একটি রাজনৈতিক মিছিলকে কেন্দ্র করে, যেখানে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছে যায়। এতে যুবলীগের একাধিক কর্মী আহত হন, যাদের মধ্যে গুরুতর আহত হন স্থানীয় যুবলীগ নেতা রুবেল আহমদ।
ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত থাকলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বেশ সময় লাগে। সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণ, লাঠিচার্জ ও ইটপাটকেল ছোড়ার মতো নাশকতামূলক কার্যকলাপ সংঘটিত হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
আহত অবস্থায় ঢাকায় স্থানান্তর
সংঘর্ষের পরপরই গুরুতর আহত রুবেল আহমদকে প্রথমে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকদের পরামর্শে দ্রুত তাকে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
তাকে আইসিইউতে রেখে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছিল, কিন্তু টানা কয়েকদিন চিকিৎসার পর সোমবার ভোরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এই মৃত্যুর খবরে সিলেটসহ পুরো যুবলীগ অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে।
রুবেল আহমদের মৃত্যুতে সিলেট যুবলীগ এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেছেন। তারা বলেন, “একজন রাজনৈতিক নেতাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এর বিচার চাই।”
অন্যদিকে বিএনপির নেতাকর্মীরা পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, সংঘর্ষের উস্কানি এসেছে যুবলীগের পক্ষ থেকেই। তারা দাবি করেন, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দেওয়ায় এই সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়।
প্রশাসনের অবস্থান ও তদন্ত
পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা এই সংঘর্ষের ঘটনায় একটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। ইতিমধ্যে ঘটনার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে এবং উভয় দলের কয়েকজন কর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের এক মুখপাত্র জানান, “আমরা নিরপেক্ষ তদন্ত চালাচ্ছি। দোষী যেই হোক, তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।” প্রশাসন থেকে আরও বলা হয়েছে, সংঘর্ষে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
রাজনৈতিক উত্তেজনার আশঙ্কা
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে সিলেট অঞ্চলে রাজনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে যুবলীগের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ মিছিল ও মানববন্ধনের ডাক দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে বিএনপিও নিজেদের কর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, রাজনৈতিক সহিংসতার এমন ঘটনা দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশের জন্য হুমকি স্বরূপ এবং অবিলম্বে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ ও সহনশীলতার পরিবেশ তৈরি করা প্রয়োজন।
নিহত রুবেল আহমদের পরিবার এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন। তার বাবা বলেন, “আমার ছেলেকে নির্মমভাবে মারা হয়েছে। আমি প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করছি, দয়া করে এই হত্যার বিচার নিশ্চিত করুন।”
স্থানীয় সাধারণ মানুষ এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনও শোক প্রকাশ করেছে এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছে।