সরকার ও সামরিক বাহিনীর মধ্যে কোন দ্বন্দ্ব নেই: ঐক্যবদ্ধভাবে রাষ্ট্র পরিচালনার বার্তা

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী

সরকার ও সামরিক বাহিনীর মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে চলা গুঞ্জনের পর স্পষ্ট ঘোষণা এসেছে—কোনো দ্বন্দ্ব নেই, বরং দেশের উন্নয়ন ও নিরাপত্তায় সম্মিলিতভাবে কাজ করছে দুই পক্ষ। পড়ুন বিস্তারিত বিশ্লেষণ। ছবিঃ মাহমুদুল হাসান

সরকারের সঙ্গে সামরিক বাহিনীর দৃঢ় সম্পর্কের ঘোষণা

বাংলাদেশে রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি ঘিরে সম্প্রতি কিছু বিভ্রান্তিকর গুজব ছড়িয়ে পড়ে—যেখানে বলা হয় যে সরকার ও সামরিক বাহিনীর মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়েছে। এসব বিভ্রান্তির প্রেক্ষিতে সরকার ও সামরিক বাহিনী উভয় পক্ষ থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছে যে, উভয়ের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব নেই। বরং, দেশের স্বার্থে পারস্পরিক আস্থা ও শ্রদ্ধার ভিত্তিতে তাঁরা একযোগে কাজ করে চলেছে। জাতীয় স্বার্থে এই ঐক্যই হলো বাংলাদেশের অগ্রগতির অন্যতম চালিকাশক্তি, যা রাজনীতি ও নিরাপত্তা উভয় অঙ্গনেই গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলছে।

রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তায় সেনাবাহিনীর অগ্রণী ভূমিকার প্রশংসা

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দীর্ঘদিন ধরেই জাতীয় নিরাপত্তার স্তম্ভ হিসেবে কাজ করে আসছে। চরম দুর্যোগ, সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান কিংবা আন্তর্জাতিক মিশনে অংশগ্রহণ—সব ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর অবদান দেশের জনগণের কাছে প্রমাণিত। বর্তমান সরকার তাদের কার্যক্রমে সেনাবাহিনীর দক্ষতা ও আনুগত্যকে বিশেষভাবে মূল্যায়ন করে। সাম্প্রতিক সময়েও দেখা গেছে, বিভিন্ন জাতীয় সংকটে সেনাবাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে কাজ করেছে, যার প্রতিটি ধাপ সরকারের নির্দেশনার আলোকে পরিচালিত হয়েছে। এই ধারাবাহিকতায় সরকারের সঙ্গে সেনাবাহিনীর কার্যকর সমন্বয়ই দেশকে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আরও শক্তিশালী করেছে।

প্রশাসনিক ও উন্নয়নমূলক কাজে পারস্পরিক সহযোগিতা

সরকার ও সামরিক বাহিনীর পারস্পরিক সহযোগিতা শুধু নিরাপত্তার ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং প্রশাসনিক এবং উন্নয়নমূলক কার্যক্রমেও এটি সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বড় বড় অবকাঠামো প্রকল্প, যেমন—পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, হাসপাতাল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণে সেনাবাহিনীর সক্রিয় ভূমিকা ছিল। এসব কাজ সরকারের পরিকল্পনার আলোকে সেনাবাহিনীর সুসংগঠিত কার্যক্রমের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়েছে। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সেনা কর্মকর্তাদের সমন্বয়, পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে দক্ষতা আজ দেশজুড়ে প্রশংসিত। এই সহযোগিতা আরও সুদৃঢ় হলে উন্নয়ন হবে আরও দ্রুত এবং কার্যকর।

গুজব ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় প্রতিক্রিয়া

সম্প্রতি কিছু সামাজিক মাধ্যম ভিত্তিক গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে সরকার ও সামরিক বাহিনীর মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে। এসব গুজবকে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষের মনে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। তবে সরকার ও সামরিক বাহিনী উভয় পক্ষই আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি পরিষ্কার করেছে—এ ধরনের তথ্য সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং দেশবিরোধী অপপ্রচারের অংশ। সরকার স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে, জাতীয় স্বার্থে সেনাবাহিনীর সঙ্গে তাদের সম্পর্ক দৃঢ় এবং দীর্ঘস্থায়ী। পাশাপাশি গুজব ছড়ানো চক্রের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে। এটি একটি বার্তা—যে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নিয়ে কোনো আপস করা হবে না।

রাষ্ট্র পরিচালনা

ছবিঃ বিসনেস স্টান্ডের

আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ঐক্যের ইতিবাচক প্রভাব

সরকার ও সামরিক বাহিনীর একসঙ্গে কাজ করার ফলেই বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে একটি স্থিতিশীল ও দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের ভূমিকা, বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে নিরাপত্তা আলোচনা, এবং কূটনৈতিক পরিসরে সামরিক কর্মকর্তাদের উপস্থিতি এই ঐক্যের প্রতিফলন। বিশ্ব নেতারা যখন বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার প্রশংসা করেন, তখন এর পেছনে সরকারের কৌশলগত দিকনির্দেশনা এবং সেনাবাহিনীর বাস্তবায়নের দক্ষতা স্পষ্টভাবে উঠে আসে। এটি শুধু দেশের ভাবমূর্তি উন্নত করে না, বরং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্যও একটি আস্থার বার্তা বহন করে।

বিশ্লেষকদের মতে, স্থিতিশীল সম্পর্কের গুরুত্ব অপরিসীম

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও নিরাপত্তা বিশারদদের মতে, সরকার ও সামরিক বাহিনীর মধ্যে যেকোনো সম্পর্ক যদি স্বচ্ছ, সংবিধানসম্মত ও আস্থানির্ভর হয়, তবে তা রাষ্ট্র পরিচালনায় সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে। তারা মনে করেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে যেভাবে সরকার ও সামরিক বাহিনী একসঙ্গে কাজ করছে, তা উন্নয়ন ও নিরাপত্তার জন্য এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। এমন একটি ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক দেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে আরও সংহত করে, যেখানে প্রতিটি সংস্থা তাদের নির্ধারিত ভূমিকা পালন করেও পারস্পরিক সমর্থনের মাধ্যমে এগিয়ে যেতে পারে।

ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত যৌথভাবে

আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশের জন্য নানা রকম চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে—যেমন সাইবার নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন, চরমপন্থা, এবং আঞ্চলিক ভূ-রাজনৈতিক চাপ। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকারের নীতি নির্ধারণ এবং সামরিক বাহিনীর কৌশলগত বাস্তবায়নের সমন্বয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে সরকার যে পরিকল্পনাগুলো নিচ্ছে—তাতে সেনাবাহিনীকে কৌশলগতভাবে অন্তর্ভুক্ত করে দেশকে আধুনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার দিকে এগিয়ে নিচ্ছে। এটি প্রমাণ করে যে, সরকার ও সামরিক বাহিনী শুধু বর্তমান নয়, ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা ও উন্নয়ন কাঠামো তৈরির লক্ষ্যেও একযোগে কাজ করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *