সাতকানিয়ায় উন্নয়ন প্রকল্পে ৩৫৪টি গাছ কাটার সিদ্ধান্ত:

চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলায় খাল পুনঃখনন ও সড়ক সম্প্রসারণ প্রকল্পের জন্য ৩৫৪টি গাছ কাটার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরিবেশবিদরা এ সিদ্ধান্তে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ছবি: ডেইলি ষ্টার
উন্নয়ন প্রকল্পে গাছ কাটা: সাতকানিয়ায় ৩৫৪টি গাছের ভাগ্য অনিশ্চিত
চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলায় একটি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৩৫৪টি গাছ কাটার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের পেছনে রয়েছে ইওচিয়াছড়া খাল পুনঃখনন এবং সংলগ্ন সড়ক সম্প্রসারণের পরিকল্পনা। স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য গাছ কাটার অনুমতি চেয়েছে এবং বন বিভাগ থেকে অনুমোদনও পেয়েছে।
প্রকল্পের উদ্দেশ্য ও বাস্তবায়নকারী সংস্থা
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (BADC) প্রায় ৩৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ইওচিয়াছড়া খাল পুনঃখনন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, যার মূল লক্ষ্য এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসন। একইসাথে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (LGED) সংলগ্ন সড়ক সম্প্রসারণের কাজ করছে, যাতে করে স্থানীয় যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হয়। এই দুই প্রকল্পের জন্য গাছগুলো বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে, ফলে কর্তৃপক্ষ গাছ কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বন বিভাগের চট্টগ্রাম দক্ষিণ অঞ্চলের মূল্যায়ন অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির আওতায় রোপণ করা এই গাছগুলো থেকে প্রায় ৯৫০ ঘনফুট কাঠ পাওয়া যাবে, যার বাজারমূল্য আনুমানিক ১,৪২,৪৫৭ টাকা। বন বিভাগ ইতোমধ্যে কাঠ বিক্রির জন্য দরপত্র আহ্বান করেছে এবং প্রধান বন সংরক্ষকের কাছ থেকে চূড়ান্ত অনুমোদনও পেয়েছে।
পরিবেশবিদদের উদ্বেগ ও সুপারিশ
পরিবেশবিদরা এই সিদ্ধান্তে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, গাছ কাটা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে, বিশেষ করে যখন জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ দূষণ নিয়ে বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ রয়েছে। তারা বিকল্প পদ্ধতি অনুসরণ করে প্রকল্প বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে পরিবেশের ক্ষতি কম হয়।
বন বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই গাছগুলো খাস জমিতে রোপণ করা হয়েছে এবং জাতীয় অবকাঠামো উন্নয়নের প্রয়োজনে জমি হস্তান্তর করতে হচ্ছে। তারা আরও বলেন, বন বিভাগ নীতিমালার আওতায় জাতীয় স্বার্থে জমি হস্তান্তর করতে বাধ্য। তবে, পরিবেশ সংরক্ষণের দিকটি বিবেচনায় নিয়ে ভবিষ্যতে আরও সতর্কতা অবলম্বনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
উন্নয়ন ও পরিবেশের মধ্যে সুষম সমাধান প্রয়োজন
সাতকানিয়ার এই ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় পরিবেশের দিকটি উপেক্ষা করা উচিত নয়। উন্নয়ন ও পরিবেশের মধ্যে সুষম সমাধান খুঁজে বের করা জরুরি, যাতে করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য পরিবেশ নিশ্চিত করা যায়।