সাত কলেজে প্রশাসক নিয়োগে গতি, প্রধান দপ্তর ঢাকা কলেজে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত সরকারি কলেজে প্রশাসক নিয়োগের সিদ্ধান্ত দ্রুত বাস্তবায়িত হচ্ছে। কেন্দ্রীয় অফিস থাকবে ঢাকা কলেজে। পড়ুন বিস্তারিত। ছবিঃ প্রথম আলো
প্রশাসনিক কাঠামোতে নতুন যুগের সূচনা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাতটি সরকারি কলেজের প্রশাসনিক দুর্বলতা এবং দীর্ঘদিনের সমন্বয়হীনতা নিয়ে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক মহলে একাধিকবার অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে রুটিনে অনিয়ম, ফলাফল প্রকাশে বিলম্ব এবং ভর্তি কার্যক্রমে জটিলতা এই কলেজগুলোতে প্রায় নিয়মিত চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এই বাস্তবতায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যৌথভাবে প্রশাসক নিয়োগের মাধ্যমে কাঠামোগত পরিবর্তনের উদ্যোগ নেয়, যার মাধ্যমে এই সাতটি কলেজে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত দ্রুত বাস্তবায়ন এবং শিক্ষা কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রধান দপ্তর ঢাকা কলেজে স্থাপনের সিদ্ধান্ত
ঢাকার অন্যতম প্রাচীন ও সম্মানজনক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঢাকা কলেজকে বেছে নেওয়া হয়েছে এই প্রশাসনিক কার্যক্রমের কেন্দ্রীয় দপ্তর হিসেবে। কারণ ঢাকা কলেজ শুধু ইতিহাস ও ঐতিহ্যের দিক থেকে নয়, অবকাঠামোগত ও প্রশাসনিক দক্ষতার বিবেচনায়ও এগিয়ে রয়েছে। প্রশাসক পদে যারা নিয়োগ পাবেন, তারা এখান থেকেই সমন্বয় করবেন অন্যান্য কলেজের কার্যক্রম, নির্দেশনা পাঠাবেন এবং সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। এই কেন্দ্রীয়ীকরণ কার্যকরী সমন্বয় নিশ্চিত করবে এবং কলেজগুলোর মধ্যে সমতা বজায় রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এই উদ্যোগের আওতায় যে সাতটি সরকারি কলেজ রয়েছে, সেগুলো হলো—ঢাকা কলেজ, তিতুমীর কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ এবং সরকারি বাঙলা কলেজ। এসব কলেজে সম্মিলিতভাবে পাঁচ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে, ফলে এই উদ্যোগ শুধু প্রশাসনিক নয়, বরং লাখো শিক্ষার্থীর ভবিষ্যতের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর অনেকেই শিক্ষা কার্যক্রমে নানা বাধার সম্মুখীন হচ্ছে যা সময়মতো পরীক্ষা, ফলাফল ও শিক্ষাগত অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করে।
প্রশাসকের দায়িত্ব ও কার্যপরিধি
প্রশাসক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্তরা প্রতিটি কলেজে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবেন। তাদের মূল দায়িত্বের মধ্যে থাকবে—একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের মধ্যে সমন্বয় সাধন, পরীক্ষার সময়সূচি ও ফলাফল প্রকাশে শৃঙ্খলা আনা এবং শিক্ষার্থীদের অভিযোগের দ্রুত সমাধান। প্রশাসকরা কলেজ কর্তৃপক্ষ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যস্থতা করেও কাজ করবেন যাতে কোনো তথ্য বিভ্রান্তি বা সিদ্ধান্তহীনতা না থাকে। বিশেষ করে অনলাইন কার্যক্রম ও ডিজিটালাইজেশনের প্রক্রিয়াকেও গতি দিতে তারা কাজ করবেন।

ছবিঃ নিউ এইজ
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের প্রতিক্রিয়া
এই সিদ্ধান্তকে অনেকেই যুগোপযোগী ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। শিক্ষার্থীরা মনে করেন, একটি নির্দিষ্ট প্রশাসনিক কাঠামো থাকলে তাদের পড়াশোনার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা কমবে এবং উচ্চশিক্ষা ও চাকরির প্রস্তুতি আরও সুশৃঙ্খলভাবে নিতে পারবে। অভিভাবকরা মনে করছেন, তাদের সন্তানরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে যে সমস্যা সম্মুখীন হচ্ছেন, সেগুলোর সমাধানে একজন দায়িত্বশীল প্রশাসক থাকলে অভিভাবকদের পক্ষ থেকেও সহযোগিতা করা সহজ হবে। ফলে শিক্ষার মান ও পরিবেশ উভয়ই উন্নত হবে।
যদিও এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়, তবে এটি বাস্তবায়নে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। যেমন, নতুন প্রশাসনিক কাঠামো গঠনের ফলে পুরনো প্রথা ও ব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্য আনা কঠিন হতে পারে। এ ছাড়া, প্রশাসকদের কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হলে প্রয়োজন পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ, নিরবচ্ছিন্ন তথ্যপ্রবাহ এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা ইতিমধ্যে এ বিষয়ে একটি রূপরেখা তৈরি করেছে এবং পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ, জনবল নিয়োগ এবং লজিস্টিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও সহযোগিতা করবে বলেও জানানো হয়েছে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য
এই পদক্ষেপের সফল বাস্তবায়ন হলে ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে এই ধরনের প্রশাসনিক মডেল বাস্তবায়ন করা হতে পারে। কলেজগুলোর নিজস্ব ওয়েবসাইট ও অনলাইন সিস্টেমকে আরও কার্যকর করে তুলতে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। অনলাইন অ্যাটেনডেন্স, ক্লাস রুটিন, ফলাফল প্রকাশ, এমনকি শিক্ষার্থী ফিডব্যাক সিস্টেম চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ভবিষ্যতে এসব কলেজে আধুনিক ব্যবস্থাপনা, প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা এবং আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা পরিবেশ গড়ে তোলার দিকেই অগ্রসর হওয়া হবে। এটি দেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার রূপান্তরের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।