FY26 বাজেটে সাবসিডি ব্যয় থাকবে স্থিতিশীল:

FY26 বাজেট

২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে সাবসিডি ব্যয় আগের মতোই থাকবে। জ্বালানি, কৃষি ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে স্থিতিশীল বরাদ্দ বজায় রেখে সরকার অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষায় উদ্যোগ নিচ্ছে। ছবিঃ ডেলিস্টের

বাজেট কাঠামোতে স্থিতিশীলতা রক্ষার ইঙ্গিত

২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটের প্রাথমিক খসড়ায় দেখা যাচ্ছে, সরকার এবার সাবসিডি ব্যয় পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় বাড়াচ্ছে না, বরং একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে তা স্থিতিশীল রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত কয়েক বছরে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি ও সরবরাহ সংকটের প্রেক্ষাপটে উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনীতি এক ধরনের চাপে পড়ে। বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়েছে, বিশেষ করে জ্বালানি ও খাদ্যপণ্যের খাতে। এমন পরিস্থিতিতে সাবসিডি ব্যয় অপরিবর্তিত রেখে সরকার একদিকে বাজেট ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইছে, অন্যদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামে স্থিতিশীলতা ধরে রাখারও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এটি এক ধরনের ভারসাম্য রক্ষার উদ্যোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

জ্বালানি খাতে গুরুত্ব অপরিবর্তিত

জ্বালানি খাত বরাবরই বাজেটে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভর্তুকি-নির্ভর ক্ষেত্র। FY26 বাজেটেও এই খাতে বরাদ্দ অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্তে বোঝা যাচ্ছে, সরকার এই খাতে সাধারণ জনগণের উপর কোনো অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে চাচ্ছে না। বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণ খরচ বেড়ে যাওয়ার পরও সরকার চায় না যেন গ্রাহকদের বিল বেড়ে যায়। তেল, গ্যাস, ও বিদ্যুৎ খাতে মূল্য সহনীয় রাখতে গিয়ে সরকার বিশাল অঙ্কের ভর্তুকি দিয়ে থাকে, যা একদিকে অর্থনীতিকে চাঙা রাখে, অন্যদিকে উৎপাদন খাতে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। তেল আমদানি নির্ভরতা এবং রূপান্তর খাতে ব্যয় বাড়ার ফলে এই খাতের ভর্তুকি না বাড়িয়ে দক্ষ ব্যবস্থাপনার উপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

কৃষি খাতে উৎপাদন ধরে রাখার প্রয়াস

বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনও কৃষিনির্ভর, এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কৃষকদের জন্য ভর্তুকি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। FY26 বাজেটেও কৃষি খাতে সার, বীজ, কীটনাশক ও সেচ খাতে ভর্তুকি অব্যাহত রাখা হবে। কৃষকদের উৎপাদন খরচ কমিয়ে তাদের আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে সরকারের এ সিদ্ধান্ত প্রশংসাযোগ্য। বিশেষ করে, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে কৃষকদের উৎপাদন হুমকির মুখে পড়ছে, এমন পরিস্থিতিতে আর্থিক সহায়তা চালু রাখা একটি প্রয়োজনীয় উদ্যোগ। কৃষিপণ্যের ন্যায্য দাম নিশ্চিত, উৎপাদন প্রবাহ ঠিক রাখা এবং খাদ্য আমদানির ওপর নির্ভরতা কমাতে এ ভর্তুকি খাত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

সামাজিক নিরাপত্তা খাতেও অব্যাহত সহায়তা

FY26 বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ভর্তুকি ব্যয় অপরিবর্তিত রাখা হচ্ছে। বাংলাদেশে নিম্নআয়ের বিশাল জনগোষ্ঠী রয়েছে, যারা সরকার প্রদত্ত ভাতা ও সহায়তার উপর নির্ভরশীল। বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী ও মাতৃত্বকালীন ভাতা ছাড়াও উপবৃত্তি ও খাদ্য সহায়তা কর্মসূচিগুলোর জন্য নির্ধারিত ভর্তুকি FY26 বাজেটেও বজায় থাকছে। অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাস, সামাজিক অন্তর্ভুক্তি এবং দুর্যোগকালীন সময়ে আর্থিক সহায়তা প্রদানে এই খাতের গুরুত্ব অপরিসীম। সরকার চায়, এই ভর্তুকির কার্যকারিতা যেন সর্বোচ্চ হয় এবং প্রকৃত উপকারভোগীরা যেন তা পায়।

সাবসিডি ব্যয়

ছবিঃ ডেইলি ষ্টার

ব্যয়ের ভারসাম্য রক্ষায় সতর্কতা

যদিও সাবসিডি ব্যয় স্থিতিশীল রাখা হয়েছে, তবুও অর্থনৈতিক বাস্তবতায় এ খাত নিয়ে সরকারের রয়েছে বাড়তি সতর্কতা। বাজেট ঘাটতি, বৈদেশিক ঋণের চাপ এবং রাজস্ব আদায়ের সীমাবদ্ধতার কারণে সরকার অপ্রয়োজনীয় ভর্তুকি কমিয়ে ব্যয়ের ভারসাম্য রক্ষা করতে চাইছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে খরচের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার আওতায় আনা হচ্ছে। এর ফলে যেসব খাতে ভর্তুকি কার্যকর নয় বা অপচয়ের শঙ্কা রয়েছে, সেখানে বাজেট কমিয়ে সেসব অর্থ উৎপাদনশীল খাতে স্থানান্তর করা হবে। এক ধরনের অডিট-ভিত্তিক ব্যয় ব্যবস্থাপনা চালু করার চিন্তাও রয়েছে।

আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়

বাংলাদেশের বাজেট নীতিতে আন্তর্জাতিক সংস্থা যেমন আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের সুপারিশও বড় ভূমিকা রাখে। FY26 বাজেটে সাবসিডি ব্যয় স্থিতিশীল রাখার এই সিদ্ধান্তের পেছনে আংশিকভাবে এসব সংস্থার সুপারিশ রয়েছে। তারা বলছে, ভর্তুকি যেন লক্ষ্যভিত্তিক হয় এবং শুধুমাত্র প্রকৃত উপকারভোগীদের জন্যই বরাদ্দ হয়। বাজেটের স্বচ্ছতা, প্রতিবেদন প্রকাশ, এবং ফলাফলভিত্তিক ব্যয়ের নির্দেশিকা অনুযায়ী সরকার এবারের বাজেটে কিছু কাঠামোগত সংস্কার যুক্ত করেছে। এই প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক ঋণ ও সহায়তা গ্রহণের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সহায়ক হবে।

স্বনির্ভরতার পথে অগ্রগতি

দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশ অর্থনীতিকে স্বনির্ভর করে তুলতে চাইছে। এই লক্ষ্যে সাবসিডির উপর নির্ভরতা কমিয়ে দক্ষতা ও উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানোর দিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। FY26 বাজেটে বিদ্যুৎ, কৃষি ও শিল্পখাতে প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিকায়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এর ফলে উৎপাদন ব্যয় কমবে এবং দীর্ঘমেয়াদে ভর্তুকি কমিয়ে আনাও সম্ভব হবে। বিদেশি প্রযুক্তি ও বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করে এবং অভ্যন্তরীণ নীতিমালাকে বিনিয়োগবান্ধব করে এই ট্রানজিশন সহজতর করতে চায় সরকার। এতে করে সাবসিডি ব্যয়ের চাপ কমে যাবে এবং রাজস্ব ব্যবহারের দক্ষতা বাড়বে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *