সিলেটে ভয়াবহ ভূমিধসে一家র চারজনের মর্মান্তিক মৃত্যু

সিলেটের কানাইঘাট উপজেলায় টানা বর্ষণের ফলে সৃষ্ট ভূমিধসে一家র চারজনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে মৃতদেহ উদ্ধার করে। ছবিঃ সংগ্রহ
সিলেটের কানাইঘাটে ভয়াবহ ভূমিধস,一家র চারজনের করুন পরিণতি
সিলেট জেলার কানাইঘাট উপজেলায় টানা ভারি বৃষ্টির কারণে পাহাড় ধসে一家র চারজন প্রাণ হারিয়েছেন। ভোর রাতে ঘটে যাওয়া এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় পুরো এলাকা শোকস্তব্ধ হয়ে পড়েছে। পাহাড়ি এলাকায় ঘরবাড়ি তৈরি করে বসবাস করছিলেন এই পরিবারটি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে গভীর রাতে পাহাড় ধসে পড়ে তাদের ঘরের উপর, এবং চারজনই ঘুমন্ত অবস্থায় ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। এই হৃদয়বিদারক ঘটনা সিলেটবাসীর মনে তীব্র শোকের ছায়া ফেলেছে।
নিহতদের পরিচয় ও স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া
নিহতরা হলেন আব্দুল করিম (৪৫), তার স্ত্রী রাহিমা বেগম (৩৮), পুত্র হাসিব (১২) ও কন্যা সানজিদা (৮)। স্থানীয়রা জানান, রাত প্রায় তিনটার দিকে আকস্মিক বিকট শব্দে জেগে উঠে দেখেন পাহাড় ধসে একটি বাড়ি চাপা পড়েছে। প্রতিবেশীরা দ্রুত ছুটে গিয়ে মাটি সরিয়ে উদ্ধারের চেষ্টা করেন। তবে ততক্ষণে প্রাণ হারিয়ে ফেলেছেন পরিবারের সবাই। চারটি নিথর দেহ একে একে যখন ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করা হয়, তখন উপস্থিত প্রত্যেকের চোখে পানি চলে আসে। কান্নায় ভেঙে পড়েন প্রতিবেশীরা এবং অনেকেই সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা খুঁজে পাননি।
গত কয়েকদিন ধরে সিলেট অঞ্চলে লাগাতার ভারী বর্ষণ হচ্ছে, যার ফলে পাহাড়ি মাটি সিক্ত হয়ে গেছে এবং স্থিতিশীলতা হারিয়ে ফেলেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত ভূমির স্বাভাবিক বন্ধন দুর্বল করে দেয়, যা ভূমিধসের ঝুঁকি কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়। কানাইঘাটের যেসব এলাকায় মানুষ পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করছেন, তাদের জীবনের ঝুঁকি বহু আগে থেকেই ছিল। তবে বাসস্থানের সংকট এবং সচেতনতার অভাবে অনেকে বাধ্য হয়েই এই বিপজ্জনক জায়গায় বসবাস করছেন।
উদ্ধার অভিযান ও প্রশাসনের তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ এবং স্থানীয় প্রশাসন ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। রাতেই শুরু হয় উদ্ধার অভিযান। ধ্বংসস্তূপ থেকে মৃতদেহগুলো উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। কানাইঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে। একই সঙ্গে ওই এলাকায় আরও যেসব ঘরবাড়ি ঝুঁকিতে রয়েছে, সেগুলো সরিয়ে নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পাহাড়ি এলাকায় বসবাসকারী অন্যান্য পরিবারও ঝুঁকিতে
এই দুর্ঘটনা পাহাড়ি এলাকায় বসবাসকারীদের মাঝে ভয়াবহ আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই রাতের আঁধারে নিজেরা এলাকা ছেড়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। স্থানীয়দের দাবি, বছরের পর বছর ধরে তারা এই ঝুঁকির কথা বলে আসছেন, কিন্তু প্রশাসন থেকে কোনো স্থায়ী সমাধান দেওয়া হয়নি। এমনকি বর্ষা মৌসুমে কোনো সতর্কতা বা সর্তকবার্তাও নিয়মিত দেওয়া হয় না, ফলে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থাকলেও মানুষ যথাসময়ে সতর্ক হতে পারেন না। এটি প্রশাসনের ব্যর্থতা হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে।
পরিবেশবিদরা জানিয়েছেন, পাহাড় কেটে বসতি নির্মাণ, বৃক্ষনিধন এবং অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে এই ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় বাড়ছে। মাটি ধরে রাখার স্বাভাবিক কাঠামো ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় ভূমিধসের মতো ঘটনা বারবার ঘটছে। তারা সরকারকে আহ্বান জানিয়েছেন, অবিলম্বে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাস বন্ধ করে, সেসব পরিবারের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে ভবিষ্যতে আরও বড় দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে যা প্রাণহানির পাশাপাশি পরিবেশেও বিপর্যয় ডেকে আনবে।