স্টারলিংক জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি নয়:

ফয়েজ আহমদ তাইয়েব স্পষ্ট করে বলেছেন, স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট ব্যবস্থা দেশের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য কোনো হুমকি নয়। বরং এটি ডিজিটাল অগ্রগতির শক্তিশালী দিক। ছবিঃ ঢাকা ট্রিবিউন
স্টারলিংক নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি ও সরকারি প্রতিক্রিয়া
সম্প্রতি বিশ্বের অন্যতম আলোচিত প্রযুক্তি স্টারলিংক নিয়ে বাংলাদেশে জনমনে নানা প্রশ্ন ও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। স্টারলিংক হচ্ছে একধরনের স্যাটেলাইট-ভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা, যা উচ্চগতির ইন্টারনেট প্রদান করে এমন সব এলাকায় যেখানে সাধারণ ফাইবার অপটিক সুবিধা নেই। তবে এর মাধ্যমে তথ্য পাচার, নজরদারি বা জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে—এমন শঙ্কা অনেকের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এই প্রেক্ষাপটে, জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য এবং প্রযুক্তি বিশ্লেষক ফয়েজ আহমদ তাইয়েব তার বক্তব্যে নিশ্চিত করেন যে, স্টারলিংক জাতীয় নিরাপত্তার জন্য সরাসরি কোনো হুমকি নয়। বরং এটি বাংলাদেশের ডিজিটাল অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করতে পারে।
প্রযুক্তির অগ্রযাত্রায় স্টারলিংকের গুরুত্ব
বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট সেবার নতুন যুগের সূচনা করেছে স্টারলিংক, যা শত শত স্যাটেলাইটের মাধ্যমে গঠিত এক সুবিশাল নেটওয়ার্ক। ফয়েজ আহমদ তাইয়েব বলেন, এই প্রযুক্তির মাধ্যমে দূর্গম পাহাড়ি এলাকা, উপকূল অঞ্চল, এমনকি নৌবাহন বা উড়োজাহাজেও দ্রুতগতির ইন্টারনেট সরবরাহ করা সম্ভব। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে যেখানে এখনো বহু এলাকা নেটওয়ার্ক সুবিধা থেকে বঞ্চিত, সেখানে এই সেবা একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে পারে। এটি শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাতেও উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে বিভ্রান্তি দূর করতে সরকারের ভূমিকা
তাইয়েবের মতে, প্রযুক্তি সম্পর্কে অজ্ঞতা থেকে অনেকেই ধারণা করছেন যে স্টারলিংক রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ তথ্য চুরি করে বিদেশে পাচার করতে পারে। কিন্তু বাস্তবে এটি অত্যন্ত নিরাপদভাবে ডিজাইন করা হয়েছে এবং এর প্রতিটি ডেটা ট্রান্সমিশন এনক্রিপ্টেড থাকে। তিনি বলেন, যদি সরকার প্রয়োজনীয় নিয়ন্ত্রণমূলক নীতিমালা এবং লাইসেন্সিং সিস্টেম প্রণয়ন করে, তাহলে স্টারলিংকের মতো আন্তর্জাতিক সেবাগুলোকে দেশের আইন ও নিয়ন্ত্রণ কাঠামোর মধ্যে এনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব। সেইসঙ্গে, জনগণের ভুল ধারণা দূর করতেও সরকারের সক্রিয় ভূমিকা রাখা দরকার।
স্টারলিংকের বৈশ্বিক গ্রহণযোগ্যতা ও সুরক্ষা ব্যবস্থা
ফয়েজ আহমদ তাইয়েব তুলে ধরেন, স্টারলিংক ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, জাপানসহ বহু উন্নত দেশে স্বীকৃতি পেয়েছে এবং কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এসব দেশের তথ্য নিরাপত্তা মান অত্যন্ত উচ্চ এবং তবুও তারা স্টারলিংককে গ্রহণ করেছে, যা এর নিরাপত্তা এবং প্রযুক্তির ওপর আস্থারই প্রমাণ। তিনি ব্যাখ্যা করেন, স্টারলিংকের সিস্টেম ডিজাইন এমনভাবে গঠিত, যাতে ব্যবহারকারীর ডেটা সর্বোচ্চ নিরাপত্তায় রক্ষা করা যায় এবং সরকার চাইলে এটি নিরীক্ষারও সুযোগ রয়েছে। ফলে, এই প্রযুক্তিকে হুমকি না ভেবে একটি সুযোগ হিসেবেই বিবেচনা করা উচিত।

ছবিঃ বিএসএস
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত
তাইয়েব দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, বাংলাদেশ যদি স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে চায়, তাহলে স্টারলিংক প্রযুক্তিকে ব্যবহার করেই তা দ্রুত বাস্তবায়ন করা সম্ভব। দেশের প্রত্যন্ত গ্রামে স্কুল-কলেজে ইন্টারনেট চালু হলে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম বিস্তৃত হবে। একইভাবে টেলিমেডিসিন, কৃষি তথ্য প্রদান, দুর্যোগ পূর্বাভাস—সবই সহজলভ্য হবে। এসব খাতে স্টারলিংক কার্যকরভাবে ভূমিকা রাখলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও মানব উন্নয়ন সূচকেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে তিনি মত দেন।
আইন ও নীতিমালার আওতায় আনার আহ্বান
একটি আধুনিক ও নিরাপদ প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য নীতিমালার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে ফয়েজ আহমদ তাইয়েব বলেন, আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি সেবাগুলোর কার্যক্রম যেন অবাধ না হয়, সেজন্য সুনির্দিষ্ট লাইসেন্সিং প্রক্রিয়া চালু করতে হবে। তিনি সুপারিশ করেন, একটি স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক কাঠামোর মাধ্যমে স্টারলিংকের মতো প্রযুক্তিকে দেশে কার্যকরভাবে চালু করা গেলে জনগণ উপকৃত হবে এবং রাষ্ট্রীয় স্বার্থও সুরক্ষিত থাকবে। এতে করে বাংলাদেশ প্রযুক্তির দিক থেকে আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছাতে পারবে।
জনসচেতনতা ও তথ্য বিশ্লেষণে গুরুত্বারোপ
ফয়েজ আহমদ তাইয়েব বলেন, প্রযুক্তি সম্পর্কে ভুল তথ্যের কারণে অনেক সময় জনগণ বিভ্রান্ত হয় এবং প্রযুক্তি গ্রহণে অনীহা দেখা দেয়। এই সমস্যা সমাধানে মিডিয়া, সরকার ও প্রযুক্তিবিদদের সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, প্রযুক্তির সুফল গ্রহণের আগে তার কার্যকারিতা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং বাস্তবিক ঝুঁকি সম্পর্কে জনগণকে অবগত করা জরুরি। তবেই দেশের প্রযুক্তি খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা তৈরি হবে।