হার্ভার্ড ট্রাম্পের বিদেশি শিক্ষার্থী নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে মামলা করেছে

হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি ট্রাম্প প্রশাসনের বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। বিষয়টি শিক্ষাক্ষেত্রে বৈশ্বিক সংহতির জন্য বড় ধাক্কা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ছবিঃ প্রথম আলো
হার্ভার্ডের যুক্তি এবং প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার প্রেক্ষাপট
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি সম্প্রতি একটি আইনি পদক্ষেপ নিয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যাপক গুরুত্ব অর্জন করেছে। ট্রাম্প প্রশাসন কোভিড-১৯ মহামারী চলাকালীন সময়ে একটি নতুন নীতি প্রণয়ন করে, যার ফলে বিদেশি শিক্ষার্থীরা ভার্চুয়াল ক্লাসে অংশগ্রহণ করলে তাদের ভিসা বাতিল হতে পারে। এই নিষেধাজ্ঞা শিক্ষার মৌলিক অধিকারকে হুমকির মুখে ফেলে দেয় বলে হার্ভার্ড দাবি করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়টি বলেছে, এমন নীতি গ্রহণ করলে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষার গুণগত মানও নেতিবাচক প্রভাবিত হবে। এই পরিস্থিতিতে হার্ভার্ড প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তকে অবৈধ ও অযৌক্তিক হিসেবে চিহ্নিত করে এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রভাব
ট্রাম্প প্রশাসনের এই নতুন বিধিমালা বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য এক বিরাট সঙ্কট সৃষ্টি করেছে। অধিকাংশ বিদেশি শিক্ষার্থী যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা ও উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য আসেন, তারা এই নিষেধাজ্ঞার কারণে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। ভার্চুয়াল ক্লাসে অংশ নেওয়া সত্ত্বেও তাদের ভিসা বাতিল হয়ে যেতে পারে — এমন আশঙ্কা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। এর ফলে অনেকে তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা আবার পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য হচ্ছেন, আবার কেউ কেউ বাধ্য হয়ে দেশে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। এই বাধার ফলে শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ বৃদ্ধি পায় এবং শিক্ষার প্রতি আগ্রহেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এছাড়া, এই ধরনের বাধা আন্তর্জাতিক শিক্ষাবিদদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আস্থা কমিয়ে দিচ্ছে এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে বৈশ্বিক সহযোগিতার সম্ভাবনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
হার্ভার্ডের আইনি পদক্ষেপ ও মামলার বিবরণ
এই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কোর্টে মামলা দায়ের করেছে। মামলার মধ্যে হার্ভার্ড দাবি করেছে, এই নীতিমালা শিক্ষার্থীদের শিক্ষার অধিকারকে সরাসরি হুমকির মুখে ফেলেছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতার ক্ষেত্রেও বাধা সৃষ্টি করেছে। তারা বলেছে, “আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের শিক্ষার সুযোগ রক্ষা করতে এবং শিক্ষাক্ষেত্রে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে এই আইনি লড়াই করছি।” মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে, এমন নীতি গ্রহণ করলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাব্যবস্থা দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং দেশটির বৈশ্বিক শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মর্যাদা কমে যাবে। হার্ভার্ডের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, এই নিষেধাজ্ঞাটি অবিলম্বে বাতিল করা উচিত যাতে বিদেশি শিক্ষার্থীরা নির্বিঘ্নে শিক্ষা চালিয়ে যেতে পারে।

ছবিঃ রোলিং স্টোন
মার্কিন শিক্ষাব্যবস্থায় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের গুরুত্ব
যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চশিক্ষা খাতে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের অবদান অসীম। শুধু অর্থনৈতিক দিক দিয়ে নয়, বৈজ্ঞানিক গবেষণা, প্রযুক্তি উন্নয়ন এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়ের ক্ষেত্রেও তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছেন। প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ বিদেশি শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং দেশের শিক্ষাক্ষেত্রকে বৈশ্বিক মানের শীর্ষে রাখার ক্ষেত্রে অবদান রাখেন। এই শিক্ষার্থীরা গবেষণা প্রকল্প, উদ্ভাবনী কাজ এবং শিক্ষামূলক পরিবেশকে সমৃদ্ধ করে। ট্রাম্প প্রশাসনের এই নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশের শিক্ষাক্ষেত্রের এই বৈচিত্র্যময়তা ও গুণগত মান হুমকির মুখে পড়েছে। এর ফলে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের আগমন কমে যেতে পারে, যা ভবিষ্যতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা ও শিক্ষাক্ষেত্রকে অগ্রগতিতে বাধা দেবে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন।
রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট
ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্তকে শুধু একটি নীতি পরিবর্তন হিসেবে দেখার চেয়ে অনেক বেশি রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব রয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবিলায় স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার নামে অনেক নীতি গ্রহণ করা হলেও, এই নিষেধাজ্ঞা সমালোচকদের কাছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে বিবেচিত হচ্ছে। অনেকেই মনে করেন, এটি বিদেশি শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে বিশেষ কিছু রাজনৈতিক মানসিকতার প্রকাশ। এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও শিক্ষার সার্বজনীন মূল্যবোধের বিরুদ্ধে একটি বড় ধাক্কা। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় এ ব্যাপারে সোচ্চার হয়ে শিক্ষা ও মানবাধিকার রক্ষায় লড়াই করছে, যা সমাজের জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।