যুক্তরাজ্য সরকারের নতুন অভিবাসন পরিকল্পনা: চাপের মুখে বড় ঘোষণা

অভিবাসন নিয়ে রাজনৈতিক চাপের মুখে যুক্তরাজ্য সরকার ঘোষণা করল নতুন ও কঠোর অভিবাসন পরিকল্পনা। বিস্তারিত জানুন এই প্রতিবেদন থেকে। ছবিঃ ডেইলি ষ্টার
রাজনৈতিক চাপ ও জনমতের প্রতিফলন
যুক্তরাজ্য সরকারের উপর অভিবাসন নীতির কারণে দীর্ঘদিন ধরেই রাজনৈতিক চাপ তৈরি হচ্ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বিরোধী দল ও জনগণের একাংশ অভিবাসন হ্রাসের দাবি জানিয়ে আসছিল। বিশেষ করে দেশটির স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং আবাসন সংকটের পেছনে অতিরিক্ত অভিবাসনকে দায়ী করা হচ্ছিল। এই প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী রিশি সুনাকের সরকার একটি বড় ধরনের অভিবাসন পরিকল্পনা উন্মোচন করেছে।
নতুন পরিকল্পনার মূল দিকগুলো
নতুন পরিকল্পনার আওতায় যুক্তরাজ্য সরকার অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে। প্রথমত, কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে আসা অভিবাসীদের ন্যূনতম বেতনসীমা বাড়ানো হয়েছে। দ্বিতীয়ত, ভিসা প্রদানের প্রক্রিয়ায় নতুন ফিল্টার যোগ করা হয়েছে যাতে শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় দক্ষতা সম্পন্ন কর্মীরা প্রবেশাধিকার পায়। তৃতীয়ত, পরিবার-ভিত্তিক অভিবাসনের ক্ষেত্রে আরও কঠিন নিয়ম চালু করা হয়েছে যাতে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করলেই পরিবার সদস্যদের যুক্তরাজ্যে আনা যায়।
জনমত ও বিরোধী দলের প্রতিক্রিয়া
সরকারের এই পরিকল্পনার প্রতি জনমতের প্রতিক্রিয়া মিশ্র। একদল নাগরিক একে ইতিবাচক পরিবর্তন হিসেবে দেখছেন কারণ এটি দেশীয় নাগরিকদের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে বলে তারা মনে করছেন। অপরদিকে, মানবাধিকার সংস্থা এবং কিছু বিরোধী রাজনৈতিক দল একে “অমানবিক” এবং “জাতিগত বৈষম্য সৃষ্টিকারী” হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। তাদের মতে, এই পদক্ষেপে বাস্তব জীবনের অনেক পরিবার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে পারে।
অর্থনীতির উপর সম্ভাব্য প্রভাব
নতুন অভিবাসন পরিকল্পনার ফলে যুক্তরাজ্যের শ্রমবাজারে প্রভাব পড়তে পারে বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন। অনেক ক্ষেত্রে অভিবাসী শ্রমিকরা কম বেতনে গুরুত্বপূর্ণ খাতে কাজ করতেন, যেমন—নার্সিং, নির্মাণ, ও কৃষি খাতে। নতুন সীমাবদ্ধতার ফলে এসব খাতে শ্রমিক সংকট দেখা দিতে পারে, যা দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। ফলে সরকারের জন্য এটি একটি ভারসাম্যপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে—একদিকে অভিবাসন সীমাবদ্ধ করা, অপরদিকে অর্থনৈতিক চাহিদা পূরণ রাখা।
আগামী দিনের পথচলা
যুক্তরাজ্য সরকারের এই নতুন অভিবাসন নীতির বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শিগগিরই শুরু হবে। এটি কতটা কার্যকর হবে তা সময়ই বলবে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার জনমতকে প্রভাবিত করতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অভিবাসন প্রশ্নে সরকারের এই অবস্থান ভবিষ্যতের রাজনীতিতে বড় ভূমিকা রাখতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।