জাতিসংঘের সুপারিশ অনুযায়ী র্যাব পুনর্গঠন করবে সরকার:

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী র্যাব পুনর্গঠন করা হবে। এটি মানবাধিকার রক্ষা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতের লক্ষ্যে নেওয়া সিদ্ধান্ত। ছবিঃ ডেইলি অবসাবের
জাতিসংঘের সুপারিশ অনুযায়ী র্যাব পুনর্গঠন করবে সরকার: উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর
বাংলাদেশ সরকার র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) পুনর্গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম এই ঘোষণা দিয়ে জানান, র্যাবের কাঠামোগত সংস্কার, দায়বদ্ধতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করাই এ পদক্ষেপের মূল লক্ষ্য। আন্তর্জাতিক চাপ এবং অভ্যন্তরীণভাবে মানবাধিকার রক্ষার দাবি ক্রমবর্ধমান হওয়ায় সরকার এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ ও র্যাব
গত এক দশকে র্যাবের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম এবং নির্যাতনের মতো গুরুতর অভিযোগ। এসব অভিযোগ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর নজরে আসে এবং জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি চাপ বাড়ে। বিশেষ করে, যুক্তরাষ্ট্র র্যাবের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করে। এর ফলে র্যাবের গ্রহণযোগ্যতা ও কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন উঠে।
সরকারের পুনর্গঠনের পদক্ষেপ ও দৃষ্টিভঙ্গি
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার মতে, সরকার এখন র্যাবের গঠনপ্রণালী, নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং দায়বদ্ধতা প্রশ্নে গভীর পুনর্মূল্যায়ন করছে। তিনি বলেন, “সরকার চায় একটি পেশাদার, মানবিক ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে কার্যকর বাহিনী গড়ে তুলতে। র্যাব থাকবে, তবে সেটি থাকবে নতুন কাঠামো ও নীতিমালায়।” পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে বাহিনীর সদস্যদের মানবাধিকার বিষয়ে প্রশিক্ষণ, কার্যপ্রক্রিয়ায় প্রযুক্তির ব্যবহার এবং মনিটরিং ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করা হবে।

ছবিঃ ঢাকা ট্রিবিউন
জাতিসংঘের সুপারিশসমূহ কী ছিল?
জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর ক্ষেত্রে বেশ কিছু সুপারিশ করেছিল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল—
- আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অপব্যবহার রোধে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা
- মানবাধিকার প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা
- অভিযোগ তদন্তে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ কমিশন গঠন
- বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া
সরকার জানিয়েছে, এসব সুপারিশ বাস্তবায়নে একটি ধাপে ধাপে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে এবং র্যাব পুনর্গঠন হচ্ছে সেই পরিকল্পনার অংশ।
আন্তর্জাতিক মহলের প্রতিক্রিয়া
এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা। তারা বলছে, র্যাব পুনর্গঠন শুধুমাত্র বাহিনীর সুনাম পুনঃপ্রতিষ্ঠাই নয়, বরং বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বেশ কিছু রাষ্ট্র ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সরকারের এই পদক্ষেপের প্রশংসা করেছে।
ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা ও চ্যালেঞ্জ
যদিও র্যাব পুনর্গঠনের উদ্যোগ ইতিবাচক, তবে এটি বাস্তবায়নে অনেক চ্যালেঞ্জ থাকবে। বাহিনীর অভ্যন্তরীণ সংস্কৃতি পরিবর্তন, পুরনো অভ্যাস ভাঙা, নতুন প্রশিক্ষণ বাস্তবায়ন এবং কার্যকর মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করা সহজ হবে না। সরকার জানিয়েছে, এই সংস্কার ধাপে ধাপে বাস্তবায়িত হবে এবং এজন্য একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে, যা পুরো প্রক্রিয়াটি তদারকি করবে।
দেশের জনগণ এই ঘোষণাকে স্বস্তির খবর হিসেবে দেখছেন। দীর্ঘদিন ধরে অনেক নাগরিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে আতঙ্কে ছিলেন। নতুন কাঠামো ও নিয়মতান্ত্রিকতায় র্যাবের কার্যক্রমে যদি স্বচ্ছতা ও মানবতা নিশ্চিত করা যায়, তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে এই বাহিনী নতুন আস্থার প্রতীক হয়ে উঠতে পারে।