আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করাই জরুরি: ভারতের মন্তব্যে বাংলাদেশের কড়া জবাব

অভ্যন্তরীণ রাজনীতি

ভারতের উদ্বেগের জবাবে বাংলাদেশ জানায়, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করাই দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় জরুরি। নির্বাচন অভ্যন্তরীণ বিষয়, বিদেশি হস্তক্ষেপ অনভিপ্রেত। ছবিঃ উএনবি

ভারতের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের কড়া প্রতিক্রিয়া

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যখন বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের ওপর সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পক্ষে মত দেয়, তখন বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে একটি দৃঢ় ও সুস্পষ্ট প্রতিক্রিয়া উঠে আসে। ঢাকার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশের রাজনীতি ও নির্বাচন সম্পূর্ণ অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং এতে কোনো বিদেশি দেশের হস্তক্ষেপ কাম্য নয়। এক বিবৃতিতে সরকারের উচ্চপর্যায়ের এক মুখপাত্র জানান, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে প্রয়োজন হলে যে কোনো রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতে পারে, এমনকি নিষিদ্ধও করা হতে পারে। এই মন্তব্য মূলত ভারতের সাম্প্রতিক মন্তব্যের প্রেক্ষিতে একটি শক্ত বার্তা হিসেবেই দেখা হচ্ছে।

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের যৌক্তিকতা তুলে ধরছে ঢাকা

সরকারি সূত্রে আরও বলা হয়েছে, দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপ ঠেকাতে আওয়ামী লীগের মতো দল যদি অব্যাহতভাবে সহিংসতা বা রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়ায়, তবে তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা বা নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত সরকারের অধিকার ও দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। উল্লেখযোগ্য যে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে গণতন্ত্র হরণ, বিরোধী দল দমন, এবং বাকস্বাধীনতা দমনের অভিযোগ উঠে এসেছে। এসব বিষয়কে সামনে রেখে বাংলাদেশ সরকার সম্ভবত এমন সিদ্ধান্তের কথা বিবেচনা করছে। ফলে নিষেধাজ্ঞার প্রসঙ্গ কোনো বাইরের চাপের ভিত্তিতে নয়, বরং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বাস্তবতা ও জাতীয় স্বার্থের নিরিখেই বিচার করা হবে।

নির্বাচন একটি সম্পূর্ণ অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে জানায় ঢাকা

বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে যে, জাতীয় নির্বাচন একটি সার্বভৌম দেশের নিজস্ব সাংবিধানিক প্রক্রিয়া এবং এতে বাইরের দেশগুলোর মন্তব্য, সুপারিশ বা চাপ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বিদেশি রাষ্ট্রগুলোকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ না করার আহ্বান জানানো হয়েছে। ঢাকার ভাষায়, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে পরিচালিত নির্বাচন পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা একান্তই দেশের নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার এবং সংবিধান অনুযায়ী সেটি পরিচালিত হবে। ফলে ভারতের মতো প্রভাবশালী প্রতিবেশী দেশ যদি নির্বাচন নিয়ে কোনো অবস্থান নেয়, তবে সেটি কূটনৈতিক প্রোটোকলের বাইরে চলে যেতে পারে এবং দুই দেশের সম্পর্কে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।

আওয়ামী লীগ নিষেধাজ্ঞা

ছবিঃ ডেইলি ষ্টার

ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে বর্তমান উত্তেজনা

দুই দেশের মধ্যে ঐতিহাসিক সম্পর্ক থাকলেও সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং আন্তর্জাতিক চাপে ভারতের অবস্থান বদলানোয় বাংলাদেশের সরকার কিছুটা অস্বস্তিতে পড়েছে। ভারত সাধারণত বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে প্রকাশ্যে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকে, কিন্তু এবার তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, যা ঢাকা ভালোভাবে নেয়নি। বরং বাংলাদেশ সরকারের মনে হয়েছে, ভারতের মন্তব্য একটি রাজনৈতিক বার্তা বহন করে যা আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক অবস্থানকে সমর্থন করে। এতে করে সরকারের কৌশলগত অবস্থান প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে বলে মনে করছেন নীতিনির্ধারকরা। ফলে সরকার দ্রুত ও কড়া ভাষায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে যাতে বাইরের দেশগুলোর এমন মন্তব্যের পুনরাবৃত্তি না ঘটে।

আন্তর্জাতিক মহলে বার্তা দেওয়ার কৌশল হিসেবে বিবৃতি

ঢাকার এই বিবৃতি শুধু ভারতের প্রতিক্রিয়ার জবাব নয়, বরং আন্তর্জাতিক মহলেও একটি বার্তা দেওয়ার কৌশল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সরকার দেখাতে চায় যে, তারা বিদেশি চাপের মুখে নত হবে না এবং দেশের স্বার্থে প্রয়োজনীয় কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পিছপা হবে না। বিশেষ করে যখন দেশটি সামনে জাতীয় নির্বাচন ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের সময় অতিক্রম করছে, তখন সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোনো ধরনের আপোস না করার মনোভাব স্পষ্ট করে তুলছে সরকার। এতে করে সরকারপক্ষ নিজেরা রাজনৈতিকভাবে দৃঢ় ও আত্মবিশ্বাসী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে চায় এবং বিরোধী দলের প্রতিও কড়া বার্তা দিতে চায় যে, সংবিধান ও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে অবস্থান কঠোরই থাকবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *