পরিত্যক্ত পণ্যের নিলাম ত্বরান্বিত করতে এনবিআর-এর উদ্যোগ

পরিত্যক্ত পণ্য

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) পরিত্যক্ত ও আটকে থাকা পণ্যের দ্রুত নিলাম নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। শুল্ক আদায় বাড়াতে ও বন্দরের জট কমাতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ছবিঃ ডেইলি ষ্টার

এনবিআর-এর নতুন পরিকল্পনা: পরিত্যক্ত পণ্যের দ্রুত নিলাম

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) দেশের বিভিন্ন বন্দরে জমে থাকা পরিত্যক্ত ও অনিষ্পন্ন পণ্যসমূহ দ্রুত নিলামের মাধ্যমে নিষ্পত্তির লক্ষ্যে সক্রিয় হয়েছে। এসব পণ্য দীর্ঘদিন ধরে বন্দরে অবস্থান করায় বন্দরের কার্যক্রমে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে এবং রাষ্ট্র রাজস্ব হারাচ্ছে। এনবিআর মনে করছে, সময়মত এসব পণ্যের নিলাম না হলে তা কেবল জায়গা দখলই করে না, বরং অর্থনৈতিক প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে। ফলে, এখন থেকে নিয়মিতভাবে নিলাম কার্যক্রম চালানোর পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।

বন্দর অব্যবস্থাপনার মূল কারণ: অনিষ্পন্ন পণ্যের স্তুপ

চট্টগ্রাম, মোংলা ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বন্দরে হাজার হাজার কন্টেইনার ও বস্তাবন্দি পণ্য বছরের পর বছর ধরে পড়ে থাকে যেগুলোর মালিকানার দাবি কেউ করে না বা ছাড়পত্রের প্রক্রিয়া অসম্পূর্ণ থাকে। এতে বন্দর গুদামভাড়া, স্থানাভাব ও পরিচালনা ব্যয়ে জটিলতা দেখা দেয়। এনবিআর-এর মতে, এসব পণ্য সময়মত নিলাম বা রপ্তানি পুনঃব্যবহারের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান সম্ভব। বন্দর ব্যবস্থাপনা আরও কার্যকর করতে এসব পদক্ষেপ এখন সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পরিত্যক্ত পণ্যের নিলাম শুধু জায়গা খালি করতেই নয়, বরং সরকারের রাজস্ব আয়ের একটি উল্লেখযোগ্য উৎস হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে। এনবিআর-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের শেষার্ধে কাস্টমস হাউসগুলোতে ৫,০০০ কোটির টাকার বেশি পরিত্যক্ত পণ্য ছিল যেগুলো যথাসময়ে নিলামে তোলা হলে সরকারের রাজস্ব ভান্ডার অনেকটাই সমৃদ্ধ হতে পারত। নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, ৩০ দিনের বেশি সময় ধরে গুদামে পড়ে থাকা পণ্য দ্রুত যাচাই করে নিলামের উপযোগী করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

প্রযুক্তির ব্যবহার ও প্রক্রিয়া ত্বরান্বিতকরণ

নিলাম কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও গতি আনতে এনবিআর আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে চাচ্ছে। অনলাইন ভিত্তিক নিলাম পদ্ধতি চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যাতে অংশগ্রহণকারীরা সহজেই পণ্য সম্পর্কে তথ্য পেয়ে বিড করতে পারেন। এতে সময় ও খরচ দুই-ই কমবে, পাশাপাশি দুর্নীতির সুযোগও হ্রাস পাবে। এ ছাড়া কাস্টমস কর্মকর্তাদের দ্রুত রিপোর্ট ও অনুমোদনের মাধ্যমে প্রক্রিয়াগুলো আরও সংক্ষিপ্ত ও কার্যকর করার নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।

ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

এনবিআর আশা করছে, ব্যবসায়ী মহল ও আমদানিকারকেরা এই প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা পাবে এবং এতে তাদের ভোগান্তিও কমবে। অনেক সময় আমদানিকারকরা কিছু পণ্য গ্রহণ করতে অনাগ্রহী হন অথবা জটিলতা থাকায় পণ্য পড়ে থাকে। সেক্ষেত্রে, একটি নির্দিষ্ট সময় পর রাষ্ট্রের তরফ থেকে তা নিলামে দেওয়ার বিধান কার্যকর হলে বন্দর কার্যক্রমে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। ভবিষ্যতে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে নিষ্পত্তি না হওয়া পণ্যগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিলামের আওতায় আনতে একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম তৈরি করার পরিকল্পনাও রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *