আফতাবনগর সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ৫ জন পুড়ে নিহত: আতঙ্ক ও শোকের ছায়া

ঢাকার আফতাবনগরে এক পরিবারের পাঁচ সদস্য সিলিন্ডার বিস্ফোরণে গুরুতর দগ্ধ হয়ে মৃত্যু বরণ করেছেন। কী কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটল? বিস্তারিত খবর ও প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা জানতে পড়ুন। ছবিঃ পিক্সাবায়
ভয়াবহ সিলিন্ডার বিস্ফোরণ, পরিবারে মৃত্যু ও হতাহতের ঘটনা
ঢাকার আফতাবনগর এলাকায় গতকাল সন্ধ্যায় একটি গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে এক পরিবারের পাঁচ জন সদস্য দগ্ধ হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। বিস্ফোরণের সময় পরিবারের সদস্যরা বাড়ির ভিতরে ছিলেন এবং আকস্মিক এই দুর্ঘটনা পুরো এলাকা কেঁপে উঠেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বিস্ফোরণের শব্দ এতটাই ভয়ংকর ছিল যে আশেপাশের ঘর-বাড়ির জানালা কাঁপতে শুরু করে। মৃতদের মধ্যে দুই শিশু ও তিন প্রাপ্তবয়স্ক রয়েছে।স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের আগ মুহূর্তে ঘরের ভিতরে গ্যাস সিলিন্ডার থেকে আসছিল গ্যাসের গন্ধ, তবে পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি গুরুত্ব দেননি। কিছুক্ষণ পরই ঘটে ভয়াবহ বিস্ফোরণ। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, বিস্ফোরণের তীব্রতা এতই ছিল যে আগুন দ্রুত বাড়ির ভিতর ছড়িয়ে পড়ে। আশপাশের মানুষ দ্রুত ফায়ার সার্ভিসে খবর দিলে তাৎক্ষণিক উদ্ধার কাজ শুরু হয়। তবে তৎক্ষণাৎই পাঁচজনের মৃত্যু হয় বলে জানানো হয়েছে।
নিরাপত্তা বিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ
প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, গ্যাস সিলিন্ডারটি সঠিক নিয়মে স্থাপন করা হয়নি। তদুপরি, গ্যাস লিকেজ শনাক্ত করার মতো কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। কিছু প্রতিবেশী জানিয়েছেন, এলাকায় সিলিন্ডার ব্যবহারে অবহেলা ও নিরাপত্তা নির্দেশিকা অমান্য করার ঘটনা বেশ বেশিই ঘটে থাকে। এ ধরনের অবহেলা এই ধরনের ভয়াবহ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী বলে তারা মনে করছেন।বিস্ফোরণে গুরুতর দগ্ধ হয়ে আরও তিনজনকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের অবস্থা এখনও আশঙ্কাজনক এবং চিকিৎসকরা বারবার আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের প্রধান জানান, দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসায় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় বার্ন ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে পরিবারের অন্যান্য সদস্য এবং পাশের বাড়ির একাধিক ব্যক্তি রয়েছেন।
ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া
ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, তারা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে এবং মৃতদের পরিবারকে সহযোগিতা প্রদান করছে। স্থানীয় পুলিশও ঘটনাস্থল ঘিরে রেখেছে এবং বিস্তারিত তদন্ত শুরু করেছে। প্রশাসন জানিয়েছে, দুর্ঘটনার কারণ স্পষ্ট হলে দায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি, তারা আশ্বাস দিয়েছেন যাতে ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা এড়ানো যায়।এই দুর্ঘটনা নতুন করে গ্যাস নিরাপত্তার প্রশ্ন তোলে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারে সঠিক নিয়ম মানা এবং নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ছাড়া ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব নয়। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে গ্যাস সিলিন্ডারের নিরাপত্তা বিষয়ক সচেতনতা বাড়াতে হবে এবং কঠোরভাবে নিয়ম-কানুন বাস্তবায়ন করতে হবে।
পরিবার ও আশপাশের এলাকায় শোকের ছায়া
এই দুর্ঘটনার ফলে ওই পরিবারের সকল সদস্য ও আশপাশের এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। প্রতিবেশীরা জানাচ্ছেন, এই পরিবারটি শান্তিপূর্ণ ও পরিশ্রমী ছিল। হঠাৎ এই দুর্ঘটনায় তাদের হারিয়ে যাওয়ায় পুরো এলাকায় দুঃখ ও সহমর্মিতা দেখা গেছে। স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন গ্যাস ব্যবহারে আরও সতর্কতা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে।
আফতাবনগর সিলিন্ডার বিস্ফোরণের মতো দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে গ্যাস নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা অত্যন্ত জরুরি। গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রেতা ও ব্যবহারকারীদের নিয়মিত সচেতনতা বৃদ্ধি, নিরাপত্তা আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং জরুরি সেবা দ্রুত পৌঁছানোর মতো পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। তবেই আমরা এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে পারব।