জেসিডি আজকের জন্য শাহবাগ অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার করল

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আজকের জন্য শাহবাগ অবরোধ কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করেছে। রাজনৈতিক কৌশল ও পরবর্তী আন্দোলন পরিকল্পনা নিয়ে বিস্তারিত বিশ্লেষণ পড়ুন। ছবিঃ প্রথম আলো
রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে জেসিডির আজকের সিদ্ধান্ত
ঢাকার কেন্দ্রস্থল শাহবাগে আজকের জন্য নির্ধারিত অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল (জেসিডি)। দীর্ঘদিন ধরে সরকারবিরোধী ছাত্র রাজনীতির অন্যতম প্রধান শক্তি হিসেবে পরিচিত এই সংগঠনটি রাজধানীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিক্ষোভ দেখানোর পরিকল্পনা করেছিল। তবে আজ সকালে হঠাৎ করেই তারা এক বিবৃতিতে জানায়, আজকের জন্য কর্মসূচিটি স্থগিত রাখা হচ্ছে। রাজনৈতিক অঙ্গনে এই সিদ্ধান্ত নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে যখন সামগ্রিক রাজনীতি এক উত্তপ্ত পর্যায়ে রয়েছে, তখন এমন পিছু হটা কী ধরনের কৌশলের অংশ, তা নিয়ে বিশ্লেষকদের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক চলছে।
কৌশলগত অবস্থান পুনর্মূল্যায়নই কি কারণ?
জেসিডির নেতাকর্মীরা জানাচ্ছেন, তারা কোনো চাপের মুখে এই সিদ্ধান্ত নেননি, বরং কৌশলগতভাবেই কর্মসূচিটি স্থগিত করা হয়েছে। দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আন্দোলনের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেই কিছুদিনের জন্য অবস্থান পর্যবেক্ষণ করা হবে। সরকারের ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিক্রিয়া বুঝে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে তারা জানিয়েছেন। তাছাড়া, জনদুর্ভোগ হ্রাস এবং আন্দোলনের প্রতি সাধারণ মানুষের সহানুভূতি ধরে রাখাও এই সিদ্ধান্তের পেছনে বড় ভূমিকা পালন করেছে।
সম্প্রতি জেসিডির আন্দোলনের ধারাবাহিকতা
গত এক মাস ধরেই রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় জেসিডি ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করে আসছে। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার এবং শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে বাধা দেওয়া—এসব নিয়েই তাদের অভিযোগের কেন্দ্রে রয়েছে বর্তমান প্রশাসন। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এলাকায় একাধিকবার পুলিশি হস্তক্ষেপ এবং নেতাকর্মীদের উপর হামলার ঘটনায় ছাত্রদল ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় শাহবাগে আজকের অবরোধ কর্মসূচি ছিল এক বড় পদক্ষেপ, যা শেষ পর্যন্ত স্থগিত হলো।
অভিযোগের কেন্দ্রে প্রশাসন ও রাজনৈতিক বৈষম্য
জেসিডি দাবি করছে, সরকারের পক্ষ থেকে বিরোধী মত প্রকাশে বারবার বাধা দেওয়া হচ্ছে। সংগঠনটির নেতাদের অভিযোগ, যখনই তারা শান্তিপূর্ণ কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করে, তখনই প্রশাসন সেটি দমন করার চেষ্টা করে। পুলিশের লাঠিচার্জ, গ্রেপ্তার, মামলার ভয়—এসব তাদের প্রতিনিয়ত মোকাবেলা করতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে অবরোধ প্রত্যাহার করে তারা হয়তো আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে সহানুভূতির জায়গা তৈরি করতে চাইছে।

ছবিঃ ডেইলি ষ্টার
অবরোধ ঘিরে রাজধানীতে পুলিশের তৎপরতা
শাহবাগ এলাকাটি রাজধানীর একটি রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল এলাকা। এ কারণে জেসিডির অবরোধ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গতকাল রাত থেকেই অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। র্যাব, ডিবি এবং সাদা পোশাকে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা শাহবাগ, টিএসসি, নীলক্ষেত, বকশীবাজারসহ আশেপাশের এলাকায় টহল দিচ্ছিলেন। যদিও কর্মসূচি স্থগিত হওয়ার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে, তবুও পুরো শহরে এক ধরনের থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
ছাত্রদলের এই সিদ্ধান্ত স্বল্পমেয়াদী হলেও আন্দোলন থেকে তারা একদমই পিছিয়ে আসছে না। সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে আন্দোলনের পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। জনসম্পৃক্ততা বৃদ্ধি এবং ছাত্র সমাজের সমর্থন নিশ্চিত করেই তারা আবার রাজপথে ফিরবে। এমনকি তাদের মতে, এই সাময়িক বিরতি আন্দোলনের শক্তি আরও সুসংগঠিত করতেই নেওয়া হয়েছে, যা খুব শিগগিরই আবার দৃশ্যমান হবে।
শিক্ষাঙ্গনে আলোচনার ঝড়
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে জেসিডির এই সিদ্ধান্ত ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, এটি একটি প্রগতিশীল সিদ্ধান্ত যা রাজনীতিকে সুশৃঙ্খল ও গণমুখী করতে সহায়ক হবে। অন্যদিকে কেউ কেউ মনে করছেন, এটি একটি কৌশলগত দুর্বলতা, যা ছাত্র সংগঠনের গতিশীলতায় প্রভাব ফেলতে পারে। সামাজিক মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বিষয়টি নিয়ে নিজেদের মতামত প্রকাশ করছেন, যা দেখায় যে, বিষয়টি শুধু রাজনীতিকদের মধ্যে নয়, শিক্ষার্থীদের মধ্যেও আলোড়ন তুলেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের দৃষ্টিকোণ
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জেসিডির এই সিদ্ধান্তকে একপেশেভাবে ব্যাখ্যা করা ঠিক হবে না। এটি হতে পারে একটি কৌশলগত পিছু হটা, যার মাধ্যমে তারা আরও সুসংগঠিত হয়ে ফের জোরদারভাবে রাজপথে নামতে চায়। অন্যদিকে কেউ কেউ এটিকে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের ইঙ্গিত হিসেবেও দেখছেন। কারণ, প্রতিটি আন্দোলনের পেছনে একটি সুগভীর কৌশল থাকে, যা সাময়িক স্থগিত হলেও এর প্রভাব দীর্ঘমেয়াদে রাজনীতিতে পড়ে থাকে।