সাবেক দুদক চেয়ারম্যানসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার অভিযোগে মামলা

খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়ার অভিযোগে সাবেক দুদক চেয়ারম্যানসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের। ঘটনাটি প্রশাসনিক অপব্যবহার ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ইঙ্গিত দিচ্ছে। ছবিঃ ডেইলি ষ্টার
সাবেক দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে নতুন বিতর্ক
সাবেক দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চেয়ারম্যানসহ আরও তিনজনের বিরুদ্ধে সম্প্রতি একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলাটিতে অভিযোগ করা হয়েছে যে, তারা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা দায়ের করেছিলেন। এই অভিযোগ নতুন করে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে এবং এই ধরনের পদক্ষেপের পেছনে রাজনৈতিক প্রভাব ও প্রভাবশালী মহলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
মামলার পেছনের প্রেক্ষাপট ও অভিযোগের ধরন
দায়ের করা মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে যে, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের লক্ষ্যে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন ও সাজানো অভিযোগ তৈরি করে মামলা করেন। এ ধরনের মামলার ফলে তাঁদের রাজনৈতিক ইমেজ ক্ষুণ্ন হয়েছে এবং দীর্ঘদিন ধরে আইনি হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। মামলাটি একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে উল্লেখ করে দাবি করা হয়েছে যে, ক্ষমতাসীনদের সুবিধা নিশ্চিত করতে এসব মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছিল।
এই মামলার মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে চলমান একটি বিতর্ক নতুন করে সামনে এসেছে—তা হলো প্রশাসনিক সংস্থাগুলোর রাজনৈতিক অপব্যবহার। বিশেষ করে দুদকের মতো স্বশাসিত প্রতিষ্ঠান যাদের নিরপেক্ষতা থাকার কথা, তাদের ওপর রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোর অভিযোগ অনেক পুরনো। খালেদা-তারেকের বিরুদ্ধে মামলার মাধ্যমে যদি সত্যিই মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগ আনা হয়ে থাকে, তাহলে তা দেশের আইনের শাসন ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের জন্য এক বড় হুমকি।
মামলার প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির অবস্থান
বিএনপি এই মামলা দায়েরকে ইতিবাচকভাবে দেখছে এবং এটিকে একটি ‘ন্যায়বিচারের সূচনা’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। দলটি দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছিল যে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান রাজনৈতিকভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। বিএনপি নেতারা বলছেন, যারা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিরোধীদলের নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেছে, তাদের বিচারের আওতায় আনা উচিত। তারা এ ঘটনাকে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরে বিচারব্যবস্থার নিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠার দাবি তুলেছেন।
অভিযুক্তদের অবস্থান ও প্রতিক্রিয়া
অন্যদিকে, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা এই মামলাকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসা হিসেবে অভিহিত করেছেন। তারা দাবি করেছেন, যে মামলাগুলো তারা করেছিলেন সেগুলোর যথেষ্ট প্রমাণ ছিল এবং আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। সাবেক দুদক চেয়ারম্যান তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, তিনি সম্পূর্ণ আইনের আওতায় থেকে কাজ করেছেন এবং তার সিদ্ধান্তে কোনো রাজনৈতিক প্রভাব ছিল না।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের মামলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি নজির স্থাপন করতে পারে। যদি প্রমাণিত হয় যে ক্ষমতার অপব্যবহার করে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে, তাহলে তা শুধু অভিযুক্ত ব্যক্তিদের জন্যই নয়, ভবিষ্যতে যেকোনো ধরনের রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র প্রতিরোধের ক্ষেত্রেও একটি মাইলফলক হতে পারে। একই সঙ্গে এটি প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার দিকেও একটি বড় ধাপ হতে পারে।
সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া ও গণতান্ত্রিক আশা
এমন ঘটনায় সাধারণ মানুষ দ্বিধান্বিত প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। কেউ কেউ মনে করছেন যে বিচার ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনতে এমন মামলা হওয়া জরুরি, অন্যদিকে অনেকে আশঙ্কা করছেন এটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার আরেকটি কৌশল হতে পারে। তবে একটি শক্তিশালী ও নিরপেক্ষ বিচারব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হলে প্রশাসনিক ক্ষমতার অপব্যবহার ঠেকাতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। জনগণ চায় প্রকৃত সত্য উদঘাটিত হোক এবং দোষীদের বিচারের মুখোমুখি করা হোক—সেটা তারা যেই হোক না কেন।