অপ্রদর্শিত অর্থ কি আবার রিয়েল এস্টেট খাতে প্রবেশ করবে? বিশ্লেষণ ও বাস্তবতা

২০২৫-২৬ বাজেটে অপ্রদর্শিত অর্থের ব্যবহারের সুযোগ সীমিত হলেও রিয়েল এস্টেট খাতে কালো টাকা ঢোকার আশঙ্কা রয়েছে। বিশ্লেষণে জানুন এর প্রভাব, কারণ ও সম্ভাব্য প্রতিকার। ছবিঃ ডেইলি ষ্টার
রিয়েল এস্টেট খাত এবং কালো টাকার পুরনো সম্পর্ক
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কাঠামোতে রিয়েল এস্টেট খাত বরাবরই অপ্রদর্শিত অর্থের একটি বড় গন্তব্য হিসেবে চিহ্নিত। অতীতে বেশ কয়েকবার বাজেট ঘোষণায় কালো টাকা বৈধ করার সুযোগ দেওয়া হলে এই খাতেই সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ হয়েছে। কারণ জমি, ফ্ল্যাট ও বাণিজ্যিক স্থাপনায় বিনিয়োগের মাধ্যমে সহজেই অর্থ লুকানো যায় এবং সম্পদের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। ফলে অপ্রদর্শিত অর্থ ও রিয়েল এস্টেট খাত পরস্পরের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত একটি বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাজেট ২০২৫-২৬: কালো টাকার বৈধতার সুযোগ থাকছে কি?
২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে এখন পর্যন্ত সরাসরি কালো টাকা সাদা করার সুযোগের ঘোষণা না থাকলেও, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনো না কোনো পরোক্ষ ব্যবস্থায় এটি আবারও রিয়েল এস্টেট খাতে ঢোকার পথ পাবে। অতীতে নির্দিষ্ট হারে কর দিয়ে কেউ চাইলে অপ্রদর্শিত অর্থ রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগ করতে পারতেন, যা থেকে সরকারও কিছুটা রাজস্ব আদায় করত। এবার সেই সুযোগ আনুষ্ঠানিকভাবে না এলেও, সুনির্দিষ্ট নজরদারি না থাকলে বাজারে কালো টাকা ফের সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে।
বাংলাদেশে এখনো সম্পদের প্রকৃত উৎস যাচাইয়ের কোনো শক্তিশালী ও বাধ্যতামূলক পদ্ধতি নেই। টিন নম্বর থাকা, রিটার্ন জমা দেওয়া অথবা ব্যাংক লেনদেন থাকলেও অনেক ক্ষেত্রেই তা অপ্রদর্শিত অর্থ আড়াল করতে ব্যর্থ। রিয়েল এস্টেট কেনাবেচায় বড় অঙ্কের নগদ লেনদেন হয় এবং নথিভুক্তির সময় প্রকৃত মূল্যের চেয়ে কম দেখানোর প্রবণতা দেখা যায়। এর ফলে, অপ্রদর্শিত অর্থ ও রিয়েল এস্টেট খাতের এই অস্বচ্ছ সম্পর্ক টিকে থাকে এবং সহজেই কালো টাকার বিনিয়োগ সম্ভব হয়।
রিয়েল এস্টেট খাতে অপ্রদর্শিত অর্থের প্রভাব
এই খাতে কালো টাকা প্রবেশের ফলে বাজারে কৃত্রিম মুল্যবৃদ্ধি ঘটে, যার প্রভাব সরাসরি সাধারণ জনগণের ওপর পড়ে। মধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্য আবাসন ক্রয় ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠছে, কারণ প্রকৃত চাহিদার চেয়ে বেশি দামে সম্পদ বিক্রি হচ্ছে। অপরদিকে, নির্মাণ খাতে এমন অর্থ প্রবেশের ফলে অপ্রতিস্পর্ধামূলক বিনিয়োগ বাড়ে এবং বৈধ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। এটি একদিকে অর্থনৈতিক বৈষম্য বাড়ায়, অন্যদিকে দেশের করজালেও বিঘ্ন ঘটায়।অপ্রদর্শিত অর্থের অবাধ প্রবেশ অর্থনীতির স্বচ্ছতা ও সুশাসনের বড় প্রতিবন্ধকতা। বাংলাদেশ সরকার কর সংস্কার, ডিজিটাল রিটার্ন এবং এনআইডি সংযুক্ত কর আদায় ব্যবস্থার কথা বললেও, রিয়েল এস্টেট খাতে কার্যকর তদারকি না থাকলে এইসব উদ্যোগ ভেস্তে যেতে পারে। কালো টাকার প্রতি সহনশীলতা স্বচ্ছ অর্থনীতির পথে বড় বাধা এবং দীর্ঘমেয়াদে তা ব্যাংকিং খাতসহ অন্যান্য খাতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
কর সংস্কার ও সম্পদ যাচাই ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা
সরকার যদি সত্যিই কালো টাকা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে চায়, তাহলে রিয়েল এস্টেট কেনাবেচায় সম্পদের উৎস যাচাই বাধ্যতামূলক করতে হবে। বিক্রয় ও রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনতে হবে এবং ন্যূনতম মূল্যের নিচে দলিল রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ বন্ধ করতে হবে। এনবিআরের সঙ্গে রেজিস্ট্রি অফিসের ডেটা শেয়ারিং সিস্টেম চালু করলে প্রকৃত মূল্য যাচাই সহজ হবে এবং কালো টাকার প্রবেশ ঠেকানো যাবে।