শিক্ষা উপদেষ্টাকে শীর্ষ পদে নিয়োগে ১ কোটি টাকার ঘুষ প্রস্তাব

বাংলাদেশ শিক্ষা ব্যবস্থা

বাংলাদেশে একজন প্রভাবশালী শিক্ষা উপদেষ্টাকে শীর্ষ প্রশাসনিক পদে নিয়োগের বিনিময়ে ১ কোটি টাকার ঘুষ প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। ছবিঃ মুস্তাক আহমেদ

প্রশাসনিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া

বাংলাদেশের শিক্ষা প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ে সম্প্রতি এক অভূতপূর্ব ঘটনা সামনে এসেছে, যা গোটা জাতিকে হতবাক করেছে। একজন প্রভাবশালী শিক্ষা উপদেষ্টাকে ১ কোটি টাকার ঘুষ প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে শীর্ষ প্রশাসনিক পদে একজন ব্যক্তিকে বসানোর বিনিময়ে। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরপরই প্রশাসনিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে এবং সর্বত্র নিন্দার ঝড় উঠেছে। দেশের শিক্ষা খাতে এমন দুর্নীতিপরায়ণ প্রক্রিয়া দীর্ঘদিন ধরেই সমালোচিত হলেও, এ ধরনের নগদ অর্থ প্রস্তাব সরাসরি উপদেষ্টার কাছে পৌঁছে দেওয়া নজিরবিহীন।

কারা জড়িত থাকতে পারে, উঠছে প্রশ্ন

ঘটনার পেছনে থাকা চক্রটি এখনও অফিসিয়ালি চিহ্নিত না হলেও প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, এটি একটি প্রভাবশালী লবিং গ্রুপ, যারা দীর্ঘদিন ধরে সরকারি চাকরির বিভিন্ন স্তরে নিজেদের লোক বসানোর চেষ্টা করছে। ঘুষের অর্থ সরবরাহ এবং কৌশল নির্ধারণে একাধিক ব্যক্তি যুক্ত ছিল বলে মনে করা হচ্ছে। তারা শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে ঘুষ প্রস্তাব দেন এবং শীর্ষ পদে একজন নির্দিষ্ট প্রার্থীর নামও সুপারিশ করেন। বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণের দাবি জানাচ্ছে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিশিষ্টজনেরা।

শিক্ষা উপদেষ্টার প্রতিবাদী ভূমিকা প্রশংসিত

যেখানে দুর্নীতির প্রস্তাবে অনেকেই চুপ থেকে সুবিধা নিয়ে থাকেন, সেখানে শিক্ষা উপদেষ্টার প্রতিবাদী ও স্বচ্ছ অবস্থান নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তিনি ঘুষের প্রস্তাব না শুধু প্রত্যাখ্যান করেছেন, বরং সাথে সাথেই বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনিক দপ্তরকে অবহিত করেছেন। উপদেষ্টা বলেন, “আমি আমার বিবেক ও দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে কোনো অবৈধ সুবিধা গ্রহণ করতে পারি না। শিক্ষা খাতের পবিত্রতা রক্ষা করাই আমার অঙ্গীকার।” তার এই অবস্থান জাতিকে আশা ও আস্থার বার্তা দিয়েছে।

তদন্তের আওতায় আসছে পুরো ঘটনা

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এই ঘটনাটিকে অগ্রাধিকারভিত্তিতে আমলে নিয়েছে এবং প্রাথমিক অনুসন্ধান ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, “এটা কেবল একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং একটি সুপরিকল্পিত দুর্নীতির চক্রের অংশ হতে পারে।” শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকেও বলা হয়েছে, অভিযুক্তদের শনাক্ত করতে কোনো প্রকার আপস করা হবে না এবং দোষী সাব্যস্ত হলে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। প্রশাসনের কঠোর এই অবস্থান শিক্ষা ব্যবস্থার ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 শীর্ষ পদে নিয়োগ

ছবিঃ প্রথম আলো

শিক্ষা খাতের উপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব

এই ধরনের ঘুষ কেলেঙ্কারির প্রভাব শুধু একক কোনো নিয়োগ প্রক্রিয়াতেই সীমাবদ্ধ নয় বরং পুরো শিক্ষা খাতের স্বচ্ছতা ও মান নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। যদি শীর্ষ পদে এমন দুর্নীতিপূর্ণ পন্থায় নিয়োগ হয়, তাহলে সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সুশাসন কীভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে? শিক্ষক নিয়োগ, পাঠ্যক্রম পরিকল্পনা এবং শিক্ষা নীতির মতো গুরুতর বিষয়ে পক্ষপাতিত্ব ও ঘুষের প্রভাব পড়তে পারে। তাই এখনই এই ধরনের দুর্নীতির শিকড় উপড়ে ফেলা প্রয়োজন।

নীতিনির্ধারক ও প্রশাসনের দায়িত্ব

দুর্নীতির এই ঘটনায় একদিকে যেমন শিক্ষাক্ষেত্রের অসৎ প্রক্রিয়ার চিত্র সামনে এসেছে, তেমনি অন্যদিকে নীতিনির্ধারকদের দায়িত্ব ও জবাবদিহিতার বিষয়টিও কেন্দ্রে এসেছে। শিক্ষা ব্যবস্থায় নিয়োগ, পদোন্নতি এবং নীতি নির্ধারণে যারা জড়িত, তাদের প্রতি সবার নজর এখন তীক্ষ্ণ। এখনই যদি কার্যকর প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার না করা হয়, তাহলে এমন ঘটনা ভবিষ্যতে আরও বড় আকারে ফিরে আসতে পারে এবং শিক্ষার মানে ব্যাপক অবনতি ঘটতে পারে।

এই ঘটনার খবর প্রকাশ্যে আসার পরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনার ঝড় উঠে। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক — সকলেই এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান। অনেকে মন্তব্য করেন, “যেখানে দেশের ভবিষ্যৎ গড়ার কথা, সেইখানে যদি ঘুষ চলে, তাহলে আমরা কোথায় যাব?” অনেকেই শিক্ষা উপদেষ্টার অবস্থানকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, “তার মতো মানুষই যদি আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় থাকেন, তবে পরিবর্তন সম্ভব।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *