বাংলাদেশের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বৈপ্লবিক উদ্যোগ:

বাংলাদেশে পরিবেশবান্ধব বর্জ্য ব্যবস্থাপনার নতুন যুগের সূচনা করেছে কানাডার Organix Energy ও ILII। এই যৌথ উদ্যোগ নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন, কার্বন নিঃসরণ হ্রাস ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।ছবি:প্রথম আলো ইংলিশ
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যপূরণে আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব
বাংলাদেশের পরিবেশ-সংকট মোকাবিলায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে কানাডাভিত্তিক দুই প্রতিষ্ঠানের হাত ধরে। Organix Energy Inc. এবং ILII (International Landfill Infrastructure & Innovation) যৌথভাবে বাংলাদেশের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন প্রযুক্তি প্রয়োগে কাজ শুরু করেছে। তাদের লক্ষ্য শুধুমাত্র বর্জ্য পরিষ্কার নয়, বরং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, টেকসই নগর উন্নয়ন এবং জাতিসংঘ ঘোষিত SDGs (Sustainable Development Goals) বাস্তবায়ন। এই অংশীদারিত্ব একটি বড় সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনের সূচনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যেখানে প্রকৃতি ও প্রযুক্তির সমন্বয়ে গঠিত হবে একটি পরিচ্ছন্ন ভবিষ্যৎ।
তাইজুল-শিল্পে পরিণত হচ্ছে বর্জ্য: ILII প্রধানের আশাবাদী দৃষ্টি
ILII-এর প্রেসিডেন্ট ও সিইও ইকবাল ভূঁইয়া, যিনি কানাডায় দীর্ঘ ৩০ বছরের অভিজ্ঞ প্রকৌশলী এবং ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার অ্যাডজাঙ্ক্ট প্রফেসর, তিনি এই উদ্যোগকে শুধু একটি প্রকল্প নয়, বরং একটি সামাজিক বিপ্লব হিসেবে দেখছেন। তার ভাষায়, “বাংলাদেশকে আর পেছনে তাকানোর সুযোগ নেই। আমাদের এখন প্রয়োজন টেকসই পদ্ধতিতে পরিচালিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, যেখানে অব্যবস্থাপনার জায়গায় থাকবে পরিবেশবান্ধব সমাধান।” তার মতে, বাংলাদেশের প্রতিটি শহরের ডাম্পিং গ্রাউন্ডকে বিজ্ঞানের ভিত্তিতে আধুনিক ল্যান্ডফিলে রূপান্তর করা এখন সময়ের দাবি।

ছবি:প্রথম আলো ইংলিশ
বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ: Organix Energy-এর নবায়নযোগ্য সম্ভাবনা
Organix Energy Inc.-এর সিইও তাপস বিশ্বাস মনে করেন, বাংলাদেশের বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে শুধুই একটি পরিচ্ছন্নতা ইস্যু না ভেবে তা থেকে বিদ্যুৎ ও সার উৎপাদনের উৎস হিসেবে ভাবতে হবে। তার ভাষায়, “প্রতিদিন টন টন বর্জ্য জমা হচ্ছে, যার সঠিক ব্যবস্থাপনা করতে পারলে সেখান থেকে নবায়নযোগ্য প্রাকৃতিক গ্যাস ও সার তৈরি করা সম্ভব। এতে দেশের জ্বালানির ওপর চাপ কমবে এবং হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।” এ ধরনের প্রযুক্তি যেমন জ্বালানির ঘাটতি পূরণে সহায়ক, তেমনি পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায়ও কার্যকর।
অ্যানারোবিক ডাইজেশন: নিরাপদ ও কার্যকর প্রযুক্তির প্রয়োগ
অনেক সময় দেখা যায়, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার নামে ইনসিনারেশন (দাহ) বা পিরোলাইসিস প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে, যা পরিবেশে বিপজ্জনক রাসায়নিক গ্যাস ছড়ায়। Organix Energy-এর প্রস্তাবিত “অ্যানারোবিক ডাইজেশন” প্রযুক্তি একটি স্বল্প-দূষণ ও কম খরচে চালানো যায় এমন পদ্ধতি, যা জৈব বর্জ্যকে মিথেন গ্যাস ও জৈব সারে রূপান্তর করে। এই প্রযুক্তি শুধু ঢাকার মতো ঘনবসতিপূর্ণ শহরের জন্য নয়, বরং দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার জন্যও কার্যকর হতে পারে। এটি কার্যকর হলে কৃষিক্ষেত্রে সার ব্যবহার বাড়বে এবং রাসায়নিক সারের ওপর নির্ভরতা কমবে।

ছবি:ডেইলি ষ্টার
আমিনবাজার ল্যান্ডফিল: বাংলাদেশের গ্যাস সম্ভাবনার নতুন কেন্দ্র
সম্প্রতি আমিনবাজারে পরিচালিত একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা অনুযায়ী, এই ডাম্পিং এলাকাটি ভবিষ্যতে বিশাল পরিমাণ নবায়নযোগ্য প্রাকৃতিক গ্যাস (RNG) উৎপাদনের কেন্দ্র হতে পারে। ২০ বছরের ব্যবধানে সেখানে ১.৯ বিলিয়ন ঘনফুট RNG উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। এটি দিয়ে বছরে ১,৮০৭,২৭৫ MMBTU গ্যাস সরবরাহ সম্ভব, যা লক্ষাধিক যানবাহনের গ্যাস চাহিদা মেটাতে সক্ষম। একদিকে জ্বালানি আমদানির চাপ কমবে, অন্যদিকে পরিবেশে কার্বন নিঃসরণ হ্রাস পাবে — এ যেন দুই birds with one stone!
জাতীয় পর্যায়ে সচেতনতা ও অংশগ্রহণের আহ্বান
Organix Energy ও ILII বিশ্বাস করে, এই টেকসই অভিযানে কেবল সরকারি পর্যায়ে নয়, বরং বেসরকারি খাত, শিক্ষার্থী, গবেষক, পরিবেশবিদ, উদ্যোক্তা এবং সাধারণ জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ আবশ্যক। তারা সবাইকে আহ্বান জানিয়েছে, যেন এই পরিবেশ আন্দোলনের অংশ হয়ে বাংলাদেশকে পরিচ্ছন্ন ও সুস্থ জীবনের দিকে এগিয়ে নেওয়া যায়। তাদের মতে, এখনই সঠিক সময়—বিশ্ব পরিবর্তিত হচ্ছে, আমরা কেন পিছিয়ে থাকব?
Organix Energy Inc. বিশ্বাস করে যে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা একটি জাতীয় চ্যালেঞ্জ, যা সমাধানে সকলের অংশগ্রহণ প্রয়োজন। তারা শিক্ষার্থী, তরুণ পেশাজীবী, নীতিনির্ধারক, বিনিয়োগকারী ও সাধারণ নাগরিকদের একটি টেকসই ও কার্বন নিঃসরণমুক্ত বাংলাদেশ গঠনে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে।