CA-এর সংস্কার উদ্যোগে জাপানের পূর্ণ সমর্থন পুনর্ব্যক্ত

জাপানের সহায়তা

বাংলাদেশের হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের অফিসকে আধুনিক ও কার্যকর করে গড়ে তুলতে জাপান তার পূর্ণ সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে। প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার এই উদ্যোগে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ছবিঃ ফেইসবুক/ ডেইলি ষ্টার

জাপান-বাংলাদেশ সম্পর্কের দৃঢ় ভিত্তি ও সম্প্রসারণ

বাংলাদেশের প্রশাসনিক কাঠামোর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের (CA) অফিসকে আধুনিক ও দক্ষ করে গড়ে তুলতে জাপান আবারও তাদের পূর্ণ সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় জাপানি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশের অর্থ মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে CA-এর সংস্কার প্রকল্পে অংশগ্রহণের অঙ্গীকার প্রকাশ করে। জাপান শুরু থেকেই বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে, বিশেষ করে অবকাঠামো ও প্রযুক্তি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। এই বার্তা তাদের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে নতুন মাত্রায় নিয়ে যাচ্ছে, যেখানে প্রশাসনিক স্বচ্ছতা এবং সুশাসনের ভিত্তি আরও শক্তিশালী হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

দেশের জবাবদিহিতার কাঠামো পুনর্গঠন

বাংলাদেশের সরকারি ব্যয়ের নিরীক্ষা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে CA-এর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে না চলার কারণে এই অফিসটি বিভিন্ন প্রযুক্তিগত ও কাঠামোগত দুর্বলতায় ভুগছিল। এসব সমস্যা দূর করতে সরকার CA অফিসকে আধুনিকায়নের জন্য একাধিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, যার মধ্যে আছে ডিজিটাল নিরীক্ষা পদ্ধতি চালু করা, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী কাজের মানদণ্ড নির্ধারণ। এই সংস্কার কার্যক্রম শুধুমাত্র একটি নিরীক্ষা সংস্থার উন্নয়ন নয়, বরং এটি বাংলাদেশের সমগ্র প্রশাসনিক জবাবদিহিতার কাঠামোকে পুনর্গঠনের একটি প্রক্রিয়া।

প্রযুক্তি নির্ভর নিরীক্ষা ব্যবস্থায় জাপানের অবদান

প্রযুক্তির যুগে নিরীক্ষা প্রক্রিয়া আগের মত কাগজনির্ভর রাখলে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা অসম্ভব। তাই ডিজিটাল নিরীক্ষা ব্যবস্থাকে সামনে রেখেই CA-এর আধুনিকায়ন চলছে। জাপান সরকার, বিশেষত JICA, বাংলাদেশের এই প্রয়াসে সরাসরি সহায়তা প্রদান করছে। তারা নিরীক্ষা সফটওয়্যার, তথ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং ডেটা বিশ্লেষণ পদ্ধতি সরবরাহ করছে যা CA অফিসের কার্যকারিতা বহুগুণে বাড়িয়ে তুলবে। এছাড়া জাপানে বিশেষ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিরীক্ষকগণ আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন দক্ষতা অর্জন করছেন, যা ভবিষ্যতে দেশের অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা বজায় রাখতে সহায়ক হবে।

জবাবদিহিতার মানোন্নয়নে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ

CA-এর সংস্কার উদ্যোগ কেবল নিরীক্ষা প্রক্রিয়ায় উন্নয়ন নয়, বরং এটি প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার এক বিস্তৃত কাঠামো গঠনের দিকে নির্দেশ করছে। সরকারি অর্থ কিভাবে খরচ হচ্ছে, তা নিরীক্ষার মাধ্যমে স্পষ্ট হলে দুর্নীতি কমে আসবে এবং সেবা জনগণের কাছে আরও কার্যকরভাবে পৌঁছাবে। জাপানের এই সহযোগিতা শুধু একটি কারিগরি সহায়তা নয়, এটি বাংলাদেশের নীতি-পরিকল্পনায় দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলবে। এই পরিবর্তনের মাধ্যমে দেশের নাগরিকরাও রাষ্ট্রের প্রতি আস্থাশীল হবে, যা একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মৌলিক ভিত্তি।

হিসাব মহানিয়ন্ত্রক

ছবিঃ ঢাকা ট্রিবিউন

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও আস্থার প্রতীক

জাপানের এই পদক্ষেপ বাংলাদেশের প্রতি আন্তর্জাতিক আস্থার বহিঃপ্রকাশ। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগীরাও এখন বাংলাদেশের প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও উন্নয়নের প্রচেষ্টাকে গুরুত্ব দিচ্ছে। পূর্বেও জাপান আমাদের বিদ্যুৎ, যোগাযোগ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে সহায়তা করেছে। কিন্তু এখন যখন তারা প্রশাসনিক দক্ষতা ও জবাবদিহিতার খাতেও সহায়তা করছে, তখন এটি আরও গভীর সম্পর্কের সূচনা। এই সহায়তা কেবল আর্থিক নয়; এটি কৌশলগত, সাংগঠনিক ও দৃষ্টিভঙ্গিগত এক পরিবর্তনের ইঙ্গিত বহন করে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার পথে শক্ত ভিত্তি

CA-এর সংস্কার প্রকল্পের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা অত্যন্ত সুসংগঠিত। জাপানের সহায়তায় আগামীতে একটি পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল নিরীক্ষা প্ল্যাটফর্ম চালু করা হবে, যেখানে সরকারি খাতের সব ব্যয়ের হিসাব স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপডেট হবে। এতে করে দুর্নীতির আশঙ্কা কমে আসবে এবং জনসাধারণ, গণমাধ্যম ও অন্যান্য সংস্থাগুলোর কাছে নির্ভরযোগ্য তথ্য সহজলভ্য হবে। সেইসঙ্গে, এই পরিবর্তনের মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও প্রযুক্তিনির্ভর প্রশাসনিক ব্যবস্থা তৈরি হবে যা ২০৩০ সালের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করবে।

জনগণের অংশগ্রহণ এবং গণসচেতনতা

সুশাসন কেবল সরকারের একক প্রচেষ্টায় সম্ভব নয়; এর জন্য দরকার জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ। CA-এর কার্যক্রম জনগণের কাছে যত বেশি উন্মুক্ত হবে, তত বেশি সচেতনতা তৈরি হবে এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে। এজন্য CA অফিসে জনগণের তথ্য জানার অধিকার, অনলাইন অ্যাক্সেস এবং সাধারণ ভাষায় রিপোর্ট প্রকাশ করার ব্যবস্থা উন্নয়নের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। জাপানের সহায়তায় এই উদ্যোগগুলো আরও শক্তিশালী ও ব্যবহারবান্ধব হবে। এতে জনগণ বুঝবে তাদের করের টাকা কোথায় ব্যয় হচ্ছে এবং কীভাবে তা তদারকি করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *