NBR কর্মীদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার: রাজস্ব বিভাগে ফিরে এলো স্বাভাবিকতা

রাজস্ব বোর্ড

দীর্ঘ দিনের দাবি আদায়ে কর্মবিরতির পথে হাঁটেন এনবিআর কর্মীরা। সরকারের আশ্বাসে তারা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করলে রাজস্ব অফিসে ফেরে স্বাভাবিকতা। ছবিঃ প্রথমআলো ইংলিশ

আন্দোলনের সূচনা ও পটভূমি

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (NBR) অধীনস্থ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের একটি বড় অংশ সম্প্রতি একযোগে কর্মবিরতির ঘোষণা দেন। দীর্ঘদিন ধরে পদোন্নতি, বেতন বৈষম্য, কর্মপরিবেশ এবং দাপ্তরিক মর্যাদার অভাব নিয়ে তারা ক্ষুব্ধ ছিলেন। বিভিন্ন দফায় চিঠিপত্র ও দাবিনামা উপস্থাপন করেও যখন কাঙ্ক্ষিত সাড়া মেলেনি, তখন তারা এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের পথে হাঁটেন। সরকারের রাজস্ব আহরণে নিয়োজিত এই কর্মীদের কর্মবিরতি হঠাৎ করে সারাদেশজুড়ে আয়কর, ভ্যাট এবং কাস্টমস অফিসে অচলাবস্থার সৃষ্টি করে। করদাতারা যেমন দুর্ভোগে পড়েন, তেমনি রাজস্ব আদায়েও দেখা দেয় বড় ধরনের স্থবিরতা।

যৌক্তিক দাবি নিয়ে কর্মবিরতির ডাক

এনবিআর কর্মীদের দাবি ছিল খুবই স্পষ্ট ও যৌক্তিক—একটি সময়োপযোগী বেতন কাঠামো, দ্রুত পদোন্নতির সুযোগ, স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনা এবং দাপ্তরিক মর্যাদার স্বীকৃতি। ২০১৫ সালের পরিপত্র অনুসারে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কিছু প্রাপ্য সুবিধা এখনো বাস্তবায়িত হয়নি বলে তাঁদের অভিযোগ। এক্ষেত্রে তাঁরা উল্লেখ করেন যে, একাধিক প্রশাসনিক স্তরে বারবার আবেদন জানানো হলেও বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। ফলে বাধ্য হয়ে তাঁরা কর্মবিরতির মত কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হন। এই কর্মবিরতি একদিকে যেমন সরকারকে চাপের মুখে ফেলে, অন্যদিকে সাধারণ জনগণের প্রতিদিনের করসেবা বন্ধ হয়ে যায়।

সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত হস্তক্ষেপ

এনবিআর কর্মীদের এই কর্মবিরতি সাধারণ মানুষের মাঝে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। রাজস্ব আদায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় দ্রুত সাড়া দেয় সরকার। অর্থ মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং এনবিআর-এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা একাধিকবার আলোচনায় বসেন। আলোচনায় তারা আন্দোলনকারী কর্মীদের দাবিগুলোর সার্বিক মূল্যায়ন করেন এবং নীতিগতভাবে বেশ কিছু দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাস দেন। পাশাপাশি কর্মীদের উদ্দেশ্যে বার্তা দেওয়া হয় যে, চলমান পরিস্থিতি রাজস্ব খাতকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে এবং তা দ্রুত সমাধান প্রয়োজন।

কর্মবিরতি প্রত্যাহারের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা

আলোচনার প্রেক্ষিতে এনবিআরের আন্দোলনরত কর্মচারীরা সরকারের প্রতিশ্রুতি ও সদিচ্ছা বিবেচনা করে তাঁদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেন। এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এনবিআর কর্মী সমিতি জানায়, তাঁরা সরকারের আশ্বাসে আস্থা রেখে স্বাভাবিক কর্মস্থলে ফিরে যাবেন। এতে করে কয়েকদিন ধরে স্থবির থাকা রাজস্ব অফিসগুলো আবার কর্মচাঞ্চল্যে ভরে ওঠে। করদাতারাও স্বস্তি ফিরে পান এবং নানা প্রকার আর্থিক লেনদেন ও ফাইল প্রক্রিয়াকরণ ফের শুরু হয়। এর ফলে জাতীয় রাজস্ব আহরণে স্বাভাবিক গতি ফিরে আসে।

NBR

ছবিঃ ডেইলি সুন্

কর অফিসগুলোতে ফিরেছে স্বাভাবিকতা

কর্মবিরতি প্রত্যাহারের পর থেকেই সারাদেশের কর অফিসগুলোতে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে আসে। আয়কর, ভ্যাট এবং কাস্টমস বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাঁদের পূর্বের দায়িত্বে ফিরে গিয়ে জরুরি ফাইল এবং কর সংক্রান্ত কার্যক্রম দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করতে থাকেন। দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় থাকা অনেক করদাতা তাদের কাজের নিষ্পত্তি পেতে শুরু করেন। বিশেষ করে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও আমদানি-রপ্তানিকারকরা এতে বেশ উপকৃত হয়েছেন, কারণ কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স ও রেভিনিউ প্রসেসিং আবার চালু হয়েছে।

এনবিআর কর্মকর্তাদের প্রতিক্রিয়া ও দৃষ্টিভঙ্গি

আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাঁরা কোনো অরাজনৈতিক ও বিভেদমূলক উদ্দেশ্যে নয় বরং নিজেদের ন্যায্য অধিকার আদায়ে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মবিরতির পথে হেঁটেছিলেন। তাঁরা বলেন, সরকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হলে ভবিষ্যতে আর এমন অবস্থার সৃষ্টি হবে না। পাশাপাশি তাঁরা প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান যাতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবি ও সমস্যা নিয়ে আগেভাগে আলোচনা করে সমাধান করা যায়। এর মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সেবা বাধাহীনভাবে অব্যাহত রাখা সম্ভব।

করদাতাদের ক্ষোভ ও আশাবাদ

কর্মবিরতির ফলে করদাতারা যেমন সময়সীমা মিস করেছেন, তেমনি অনেকে আর্থিক ক্ষতির মুখেও পড়েছেন। তবে আন্দোলন প্রত্যাহার ও অফিস খুলে দেওয়ায় তাঁরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন। অনেকে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, ভবিষ্যতে যাতে কোনো কারণে এই ধরনের সেবা বন্ধ না হয় সে ব্যাপারে সরকার ও প্রশাসন সচেতন থাকবে। বড় করদাতারা জানান, কর ব্যবস্থাপনায় ডিজিটাল ও নিরবচ্ছিন্ন সেবা প্রদান নিশ্চিত করা হলে এমন পরিস্থিতি আর দেখা দেবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *