NCP-এর নিন্দা: অ্যান্টি-ফ্যাসিস্ট বিক্ষোভে বিভেদমূলক স্লোগানে প্রতিবাদ

বিভেদমূলক স্লোগান

নবীন সমাজ পার্টি (NCP) সম্প্রতি একটি অ্যান্টি-ফ্যাসিস্ট বিক্ষোভে কিছু উস্কানিমূলক ও বিভেদ সৃষ্টিকারী স্লোগানের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। দলটি শান্তিপূর্ণ, ঐক্যবদ্ধ এবং নৈতিকতা-ভিত্তিক রাজনৈতিক আন্দোলনের পক্ষে জোর দিয়েছে। ছবিঃ ডেইলি অবসাবের

অ্যান্টি-ফ্যাসিস্ট আন্দোলনের প্রেক্ষাপট

সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ফ্যাসিবাদবিরোধী বিক্ষোভ জোরদার হচ্ছে। সরকারের কর্তৃত্ববাদী মনোভাব, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার হ্রাস, এবং জনগণের সাংবিধানিক অধিকারের উপর হস্তক্ষেপের প্রতিবাদে বহু সংগঠন, নাগরিক সমাজ ও রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনে শামিল হয়েছে। এই আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল—গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং রাষ্ট্রযন্ত্রের অপব্যবহারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো। তবে এইসব বিক্ষোভে কিছু অংশগ্রহণকারী, যারা নিজেদের পরিচয় অস্পষ্ট রেখে মিছিলের মধ্যে বিভাজনমূলক ও ঘৃণামূলক স্লোগান দেয়, তাদের আচরণ আন্দোলনের মৌলিক আদর্শকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

NCP-এর অবস্থান ও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া

নবীন সমাজ পার্টি (NCP), যারা দীর্ঘদিন ধরে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সক্রিয় এবং মানবাধিকার রক্ষার পক্ষে, একটি আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে এই ঘটনাকে তীব্রভাবে নিন্দা জানায়। দলটির মুখপাত্র বলেন, “আমরা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সকল প্রতিবাদকে স্বাগত জানাই। তবে আন্দোলন কখনোই ঘৃণা ছড়ানোর প্ল্যাটফর্ম হতে পারে না।” তিনি আরও বলেন, “অযাচিত ও উস্কানিমূলক স্লোগানগুলি আন্দোলনের প্রতি জনসমর্থনকে দুর্বল করে এবং আন্দোলনকে অন্য খাতে প্রবাহিত করে দেয়।” এ প্রসঙ্গে দলটি আন্দোলনকারীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির আহ্বান জানায় এবং সকল সংগঠনকে দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে অনুরোধ করে।

বিভেদমূলক বক্তব্যের ক্ষতিকর প্রভাব ও সামাজিক প্রতিফলন

স্লোগান শুধুই শব্দ নয়, এটি আন্দোলনের আত্মা বহন করে। একটি ভুল স্লোগান পুরো আন্দোলনের উদ্দেশ্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলতে পারে। যখন একটি বিক্ষোভের মধ্য থেকে ধর্ম, জাতি, বর্ণ বা ভাষাভিত্তিক ঘৃণাবাচক বার্তা ছড়ানো হয়, তখন তা শুধুমাত্র বিরোধীদের অস্ত্রই নয়, বরং সাধারণ মানুষকেও বিভ্রান্ত করে। এতে আন্দোলনের জনভিত্তি দুর্বল হয় এবং সরকার কিংবা বিরোধী পক্ষ সুযোগ নিতে পারে আন্দোলনের প্রকৃত বার্তা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য। এনসিপি এই বাস্তবতা বুঝে আন্দোলনে শালীনতা ও ঐক্যের পরিবেশ বজায় রাখার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে।

রাজনৈতিক ঐক্য গঠনে গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি

NCP মনে করে, বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় বিরোধীদলসমূহের মধ্যে আন্তঃদলীয় ঐক্য অত্যন্ত জরুরি। এককভাবে কোনো দলই গণতান্ত্রিক সংস্কারের বড় আন্দোলন পরিচালনা করতে পারবে না। অথচ বিভাজনমূলক স্লোগান ঐক্যকে বিনষ্ট করে। এই কারণে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের কর্মীদের রাজনৈতিক সচেতনতা ও সহনশীলতা শেখানোর দায়িত্ব নিতে হবে। পাশাপাশি রাজনৈতিক সংস্কৃতি তৈরি করতে হবে, যেখানে নীতিনৈতিকতা, পরস্পরের প্রতি সম্মান ও গঠনমূলক সমালোচনাকে প্রাধান্য দেওয়া হবে।

রাজনৈতিক ঐক্য

ছবিঃ অবসাবের বিডি

আন্দোলনের নৈতিকতা বজায় রাখা কেন গুরুত্বপূর্ণ

নবীন সমাজ পার্টি বলেছে, ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলন সফল করতে হলে শুধু প্রতিবাদ করলেই চলবে না, তার সঙ্গে যুক্ত থাকতে হবে উচ্চ নৈতিক আদর্শ এবং আত্মসংযম। একটি নৈতিক আন্দোলনই জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারে। বিভেদ সৃষ্টিকারী কথাবার্তা কিংবা আক্রমণাত্মক আচরণ আন্দোলনকে দুর্বল করে এবং নেতৃত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে। এজন্য এনসিপি চায় ভবিষ্যতের আন্দোলনগুলো যেন নেতৃত্বাধীন, সুশৃঙ্খল এবং একযোগে মানুষের স্বার্থ রক্ষায় নিবেদিত হয়।

গণতান্ত্রিক বিশ্বে বাংলাদেশের ভূমিকার প্রভাব

যদিও প্রতিবাদটি ভারতের প্রেক্ষাপটে হয়েছে, তবে এই ধরনের পরিস্থিতি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশগুলোর জন্যও বার্তা বহন করে। বাংলাদেশেও যখন বিরোধীদলীয় আন্দোলন হয়, তখন একইভাবে কিভাবে প্রতিবাদের ভাষা ও রূপ গ্রহণ করা উচিত, সেই শিক্ষাও এখানে প্রযোজ্য। একটি প্রতিবাদ যতই যৌক্তিক হোক না কেন, যদি তা ঘৃণা ও ভেদাভেদ ছড়ায়, তবে তার গ্রহণযোগ্যতা কমে যায় এবং তা আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও নেতিবাচক বার্তা দেয়।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও জনমতের প্রভাব

বিভাজনমূলক স্লোগান ছড়িয়ে পড়ার জন্য আজকাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক বড় ভূমিকা রাখে। এনসিপি মনে করে, সামাজিক মাধ্যমে ভুল তথ্য, বিভ্রান্তিকর ভিডিও বা কাটা-ছেঁড়া বক্তব্য ছড়িয়ে দিয়ে আন্দোলনের আসল চেহারা বিকৃত করা হয়। এজন্য দলটি আহ্বান জানায়—জনগণ যেন যাচাই না করে কোনো তথ্য শেয়ার না করে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও শান্তিপূর্ণ, যুক্তিনিষ্ঠ বক্তব্যকে উৎসাহ দেয়।

নবীন সমাজ পার্টির এই বিবৃতি আমাদের রাজনৈতিক পরিবেশে এক গুরুত্ববহ বার্তা পৌঁছে দেয়। আন্দোলন মানেই শোরগোল নয়, বরং এটি মানুষের অন্তরের চাওয়া-পাওয়া ও বেঁচে থাকার অধিকারের প্রতিচ্ছবি। সেই চাওয়াকে যথাযথভাবে প্রকাশ করতে হলে প্রয়োজন সংহতি, শালীনতা এবং নৈতিকতা। বিভেদ নয়, বরং ঐক্যই হোক আমাদের প্রতিবাদের ভাষা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *