বিদেশি অপারেটরকে এনসিটি লিজ দেওয়ার বিরুদ্ধে শ্রমিক দলের আন্দোলন

চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটিকে বিদেশি অপারেটরের কাছে লিজ দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে শ্রমিক দল সপ্তাহব্যাপী প্রতিবাদ কর্মসূচি শুরু করেছে। আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিত, উদ্দেশ্য ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন। ছবিঃ ষ্টার
এনসিটিকে বিদেশি অপারেটরের হাতে তুলে দেওয়ার বিরুদ্ধে শ্রমিক দলের সপ্তাহব্যাপী প্রতিবাদ কর্মসূচি শুরু
চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) একটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছে লিজ দেওয়ার সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে ব্যাপক বিরোধিতা শুরু হয়েছে। এই প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ শ্রমিক দল সপ্তাহব্যাপী ব্যাপক আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। রোববার সকাল থেকে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় তারা বিক্ষোভ, মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ শুরু করে। সংগঠনের নেতৃবৃন্দ জানান, এই কর্মসূচির মাধ্যমে জনসচেতনতা বৃদ্ধি, সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি এবং এই প্রক্রিয়া বাতিলের দাবি জোরালো করাই তাদের মূল উদ্দেশ্য। তারা বলেন, এই সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র অর্থনৈতিক নয়, বরং এটি একটি সার্বভৌমত্বের বিষয়।
বিদেশি অপারেটরকে লিজের সিদ্ধান্তে অর্থনীতি ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, এনসিটিকে একটি বহুজাতিক কন্টেইনার অপারেটরের কাছে লিজ দেওয়ার চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। শ্রমিক দল ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠন এই সিদ্ধান্তকে দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থ ও সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করছে। তাদের মতে, দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, বিশেষ করে বন্দর, একটি জাতীয় সম্পদ। এই সম্পদ বিদেশি কোনো কোম্পানির হাতে তুলে দিলে তা দেশের নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান এবং অর্থনীতির উপর দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বিশেষ করে দেশীয় কোম্পানিগুলো যখন এই ধরনের কাজ সফলভাবে পরিচালনা করতে সক্ষম, তখন বিদেশিকে প্রাধান্য দেওয়া যুক্তিসংগত নয় বলেই তারা মনে করে।
সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচির বিভিন্ন ধাপ
শ্রমিক দলের ডাকা কর্মসূচি শুধুমাত্র বিক্ষোভের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। পুরো সপ্তাহজুড়ে তারা নানা রকম কর্মসূচি হাতে নিয়েছে যাতে সাধারণ মানুষ এই বিষয়ে অবগত হয় এবং সরকারের ভুল সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে মানববন্ধন, বন্দর এলাকায় বিক্ষোভ, রেলস্টেশন ও গার্মেন্টস জোনে লিফলেট বিতরণ এবং সামাজিক মাধ্যমে প্রচারণা। প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মাইকিং ও স্লোগান দেওয়া হচ্ছে। শ্রমিক নেতারা জানিয়েছেন, এই কর্মসূচি কেবল শুরু, ভবিষ্যতে এর মাত্রা আরও বাড়বে।
দেশীয় প্রতিষ্ঠান ও শ্রমিকদের অবমূল্যায়ন
শ্রমিক দল প্রশ্ন তুলেছে, যখন বাংলাদেশে দক্ষ প্রকৌশলী, প্রশিক্ষিত শ্রমিক এবং আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় দেশীয় প্রতিষ্ঠানসমূহ বন্দরের কার্যক্রম সফলভাবে পরিচালনা করতে পারছে, তখন কেন সরকার বিদেশিদের হাতে দায়িত্ব তুলে দিচ্ছে? এর মাধ্যমে দেশীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশ পাচ্ছে। এতে শুধুমাত্র দেশীয় কোম্পানির ক্ষতিই নয়, বরং হাজার হাজার শ্রমিকের চাকরি হারানোর শঙ্কা তৈরি হয়েছে। শ্রমিক সংগঠনগুলো বলছে, এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে বেকারত্ব আরও বাড়বে এবং দেশের সামগ্রিক শ্রমবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।