যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থীদের ভিসা ইন্টারভিউ বন্ধ: উচ্চশিক্ষার স্বপ্নে নতুন বাধা

উচ্চশিক্ষা আমেরিকা

যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে শিক্ষার্থীদের জন্য ভিসা ইন্টারভিউ স্থগিত করেছে, যা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাকে চরম অনিশ্চয়তায় ফেলেছে। বিস্তারিত পড়ুন এই প্রতিবেদন থেকে। ছবিঃ ডেইলি ষ্টার

আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য দুঃসংবাদ

যুক্তরাষ্ট্র সরকার সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছে যে তারা নতুন করে আর কোনো শিক্ষার্থী ভিসার (F-1 এবং M-1) ইন্টারভিউ গ্রহণ করবে না, অন্তত পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত। এই সিদ্ধান্ত বিশ্বজুড়ে উচ্চশিক্ষা প্রত্যাশী শিক্ষার্থীদের মাঝে একপ্রকার ভীতির সঞ্চার করেছে। যারা বছরের পর বছর ধরে প্রস্তুতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির স্বপ্ন দেখেছিল, তারা হঠাৎ করে এক অজানা অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হয়েছেন। এই ভিসা বন্ধের ফলে শুধু শিক্ষার্থীরা নয়, তাদের পরিবার, সহপাঠী ও ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার পরিকল্পনাও হুমকির মুখে পড়েছে।

হঠাৎ করে নেওয়া এই সিদ্ধান্তের পেছনের কারণ

সরকারিভাবে ভিসা ইন্টারভিউ স্থগিতের নির্দিষ্ট ব্যাখ্যা না দিলেও, অভ্যন্তরীণ সূত্র এবং বিশেষজ্ঞদের মতে এই সিদ্ধান্তের পেছনে রয়েছে একাধিক সম্ভাব্য কারণ। নিরাপত্তা ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ, ভিসা জালিয়াতি প্রতিরোধ এবং প্রশাসনিক কারিগরি উন্নয়ন প্রক্রিয়াই এই পদক্ষেপের অন্যতম কারণ হতে পারে। এছাড়া ভিসা অফিসগুলোতে কর্মীসংকট, সফটওয়্যার আপডেট এবং অতিরিক্ত আবেদনপত্র জমা পড়ার চাপ থেকেও এই সিদ্ধান্ত এসেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবুও, এত বড় পদক্ষেপ নেওয়ার আগে পূর্বপ্রস্তুতি বা পূর্বঘোষণা না থাকায় সমালোচনার মুখে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট।

সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কোন শিক্ষার্থীরা

বিশ্বের যেসব দেশ থেকে প্রতিবছর অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রে যান, তাদের মধ্যে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নাইজেরিয়া, চীন ও ইরান অন্যতম। এইসব দেশের বহু শিক্ষার্থী ইতোমধ্যেই ভর্তির চূড়ান্ত চিঠি পেয়ে গিয়েছিলেন, কেউ কেউ আবার হোস্টেল বুকিং ও ফ্লাইটের প্রস্তুতিও সম্পন্ন করেছিলেন। ভিসা ইন্টারভিউ বন্ধ হওয়ার কারণে তাদের এই যাবতীয় পরিকল্পনা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। অনেক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য ব্যাঙ্ক ঋণ নিয়ে রেখেছেন বা পারিবারিক সঞ্চয় ব্যবহার করেছেন, যা এখন অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখে পড়েছে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্বেগ ও আশঙ্কা

যুক্তরাষ্ট্রের বহু বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি, গবেষণা অনুদান এবং বৈচিত্র্য বৃদ্ধির জন্য নির্ভর করে থাকে। ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টরা শুধু অর্থনৈতিক অবদানই রাখেন না, তারা বিভিন্ন বিষয়ে একাডেমিক র‍্যাংকিং উন্নয়নে এবং ক্যাম্পাসে বহুজাতিক পরিবেশ তৈরিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এখন ভিসা ইন্টারভিউ স্থগিতের ফলে এই শিক্ষার্থীদের প্রবেশাধিকার সীমিত হলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি বৈশ্বিক র‌্যাংকিংয়েও পিছিয়ে পড়তে পারে।

 ভিসা আপডেট ২০২৫

ছবিঃ রুয়েটর্স

বিকল্প পথ ও প্রাথমিক উদ্যোগ

ইতোমধ্যেই অনেক বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইন ক্লাস, ভার্চুয়াল ওরিয়েন্টেশন এবং হাইব্রিড মডেল চালু করেছে যাতে শিক্ষার্থীরা কমপক্ষে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেন। তবে এই ব্যবস্থায় সরাসরি গবেষণা, ল্যাব এক্সপেরিমেন্ট এবং অন-ক্যাম্পাস কাজের সুযোগ সীমিত হওয়ায় অধিকাংশ শিক্ষার্থীর জন্য এটি বাস্তবসম্মত নয়। তদুপরি, অনেক ছাত্রছাত্রী এমন পেশাগত কোর্সে ভর্তি হয়েছেন, যা অনলাইন ক্লাসে সম্ভব নয়। তাই বিকল্প পথ থাকা সত্ত্বেও বাস্তবিকভাবে সমস্যার পূর্ণ সমাধান এখনও হয়নি।

বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর প্রায় ৮,০০০-১০,০০০ শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি জমায়। বিশেষ করে, যারা সদ্য গ্র্যাজুয়েট হয়েছেন বা মাস্টার্সের জন্য ভর্তির অফার পেয়েছেন, তাদের জন্য এখন এই পরিস্থিতি চরম হতাশাজনক। অনেক শিক্ষার্থী IELTS/TOEFL পরীক্ষার খরচ, এজেন্সি ফি, আবেদন ফি ইত্যাদিতে লক্ষাধিক টাকা ব্যয় করেছেন, যার কোনটাই এখন কাজে আসছে না। কিছু শিক্ষার্থী ফাইনাল সেমিস্টার শেষ করে ছুটিতে দেশে ফিরে এসেছিলেন, তারা এখন আবার ক্যাম্পাসে ফিরতে না পারায় সমস্যায় পড়েছেন।

ভবিষ্যতের প্রেক্ষাপট ও সম্ভাব্য সমাধান

বিশ্লেষকদের মতে, এই সিদ্ধান্ত দীর্ঘমেয়াদে স্থায়ী হবে না। যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের গুরুত্ব অনুধাবন করে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের চাপে হয়তো আগামী কিছু সপ্তাহ বা মাসের মধ্যেই আবার ভিসা ইন্টারভিউ চালু করতে বাধ্য হবে। তবে এর জন্য প্রশাসনিক সমস্যা সমাধান, কর্মী নিয়োগ এবং সফটওয়্যার আপডেটের কাজ সম্পন্ন করতে কিছু সময় লাগতে পারে। শিক্ষার্থীদের meanwhile পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং দূতাবাস ও স্টেট ডিপার্টমেন্টের অফিসিয়াল সাইট নিয়মিত চেক করা উচিত।

শিক্ষার্থীদের জন্য পরামর্শ ও করণীয়

বর্তমান পরিস্থিতিতে হতাশ না হয়ে শিক্ষার্থীদের উচিত বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নেওয়া। প্রথমত, বিকল্প বিশ্ববিদ্যালয় বা দেশ চিন্তা করা যেতে পারে, বিশেষ করে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া বা ইউরোপের কিছু দেশ যারা দ্রুত ভিসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। দ্বিতীয়ত, অনলাইন কোর্স বা ক্রেডিট ট্রান্সফার অপশন খতিয়ে দেখা দরকার যাতে পড়াশোনায় বিরতি না পড়ে। তৃতীয়ত, কেউ যদি ইতোমধ্যে আবেদন করে থাকেন, তবে নতুন করে আবেদন না করে কেবল ইমেইল বা হেল্পলাইনের মাধ্যমে বর্তমান আবেদনের স্ট্যাটাস জানার চেষ্টা করা উচিত। এবং অবশ্যই মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় নিজেকে ব্যস্ত ও ইতিবাচক রাখা জরুরি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *